Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনায় নগর পরিবহন বন্ধে ভোগান্তিতে সাধারণ জনগণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দেশ স্বাধীনের পর ৬০টি বাস নিয়ে খুলনা শহরে ‘নগর পরিবহন’ চলাচল শুরু করে। এসব বাস চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ২০১৮ সালে নগর পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৯ সালে চারটি বাস চালু হয়ে করোনার আগে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের আগস্টে খুলনায় চালু হয় নগর পরিবহন। কিন্তু মাস দু-এক চলার পর ফের বন্ধ হয়ে যায় ‘মুড়ির টিন’ খ্যাত খুলনার ঐতিহ্যবাহী এই পরিবহনটি। ফলে তিন চাকার বাহনে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের সাধারণ জনগণ।

রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকা যানের কারণে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতেও। এসব সমস্যা নিরসনে নতুন উদ্যোগে যুগোপযোগী নগর পরিবহনের দাবি স্থানীয়দের।

বর্তমানে খুলনার রূপসা ঘাট থেকে ফুলতলা পর্যন্ত মাহেন্দ্রা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। অথচ নগর পরিবহনে এ ভাড়া ছিল ২৫-৩০ টাকা। আর শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক। এ ছাড়া ইজিবাইক, মাহেন্দ্রা ও সিএনজির অতিরিক্ত চাপে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের পাশাপাশি বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনাও ঘটছে।

নগরীর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার শেখ নামের এক ব্যক্তি বলেন, মাহেন্দ্রের ভাড়া লোকাল গাড়ির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এত ভাড়া সত্যিই কষ্টদায়ক। সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি, ছাত্রছাত্রী ও জনসাধারণের কথা চিন্তা করে খুলনাতে যেন অবিলম্বে গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়।

রূপসার এলাকার ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, খুলনায় পাবলিক বাস সার্ভিস না থাকাতে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ। খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়ি গেট, সোনাডাঙ্গা, মুজগুন্নি, গল্লামারি, নিরালাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খুলনা শহরে সামান্য বেতনে যারা চাকরি বা একেবারেই ক্ষুদ্র ব্যবসা বাণিজ্য করে তাদের বেতনের সিংহভাগই চলে যায় যাতায়াত খরচে। এ পাবলিক বাস সার্ভিস না থাকার কারণে খুলনা এখন অটোরিকশার মিছিলে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে খুলনা এখন তীব্র যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে।

ব্রজলাল কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুরাইয়া তাসনীম জানান, মাসে যে পরিমাণ টাকা ভাড়ায় ব্যয় হয়, তাতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই কষ্ট। গত বছর যখন নগর পরিবহন চালু হয়, বাসা থেকে কলেজ পর্যন্ত আসা-যাওয়ার ভাড়া লাগত ২০ টাকা। আর এখন ৫০ টাকায়ও হয় না। শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও ফের নগর পরিবহন চালুর দাবি তাদের।

তবে পুরাতন সেই বাসগুলো বদলে নতুন এবং আধুনিক পরিবহনের দাবি সব শিক্ষার্থীসহ শ্রেণিপেশার মানুষের।

এদিকে নগর পরিবহন চালু করতে সিটি করপোরেশনের সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মনে করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা শাখার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।

তবে করোনাকালীন সংকট এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিও নগর পরিবহন বন্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীন আহমেদ।

এ বিষয়ে খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবর রহমান বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক নগর পরিবহন চালুর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

খুলনায় নগর পরিবহন বন্ধে ভোগান্তিতে সাধারণ জনগণ

প্রকাশের সময় : ০৩:১৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দেশ স্বাধীনের পর ৬০টি বাস নিয়ে খুলনা শহরে ‘নগর পরিবহন’ চলাচল শুরু করে। এসব বাস চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ২০১৮ সালে নগর পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১৯ সালে চারটি বাস চালু হয়ে করোনার আগে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের আগস্টে খুলনায় চালু হয় নগর পরিবহন। কিন্তু মাস দু-এক চলার পর ফের বন্ধ হয়ে যায় ‘মুড়ির টিন’ খ্যাত খুলনার ঐতিহ্যবাহী এই পরিবহনটি। ফলে তিন চাকার বাহনে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের সাধারণ জনগণ।

রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকা যানের কারণে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতেও। এসব সমস্যা নিরসনে নতুন উদ্যোগে যুগোপযোগী নগর পরিবহনের দাবি স্থানীয়দের।

বর্তমানে খুলনার রূপসা ঘাট থেকে ফুলতলা পর্যন্ত মাহেন্দ্রা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। অথচ নগর পরিবহনে এ ভাড়া ছিল ২৫-৩০ টাকা। আর শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক। এ ছাড়া ইজিবাইক, মাহেন্দ্রা ও সিএনজির অতিরিক্ত চাপে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের পাশাপাশি বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনাও ঘটছে।

নগরীর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার শেখ নামের এক ব্যক্তি বলেন, মাহেন্দ্রের ভাড়া লোকাল গাড়ির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এত ভাড়া সত্যিই কষ্টদায়ক। সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি, ছাত্রছাত্রী ও জনসাধারণের কথা চিন্তা করে খুলনাতে যেন অবিলম্বে গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়।

রূপসার এলাকার ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, খুলনায় পাবলিক বাস সার্ভিস না থাকাতে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন এখন দুর্বিষহ। খালিশপুর, দৌলতপুর, ফুলবাড়ি গেট, সোনাডাঙ্গা, মুজগুন্নি, গল্লামারি, নিরালাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে খুলনা শহরে সামান্য বেতনে যারা চাকরি বা একেবারেই ক্ষুদ্র ব্যবসা বাণিজ্য করে তাদের বেতনের সিংহভাগই চলে যায় যাতায়াত খরচে। এ পাবলিক বাস সার্ভিস না থাকার কারণে খুলনা এখন অটোরিকশার মিছিলে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে খুলনা এখন তীব্র যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে।

ব্রজলাল কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুরাইয়া তাসনীম জানান, মাসে যে পরিমাণ টাকা ভাড়ায় ব্যয় হয়, তাতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই কষ্ট। গত বছর যখন নগর পরিবহন চালু হয়, বাসা থেকে কলেজ পর্যন্ত আসা-যাওয়ার ভাড়া লাগত ২০ টাকা। আর এখন ৫০ টাকায়ও হয় না। শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও ফের নগর পরিবহন চালুর দাবি তাদের।

তবে পুরাতন সেই বাসগুলো বদলে নতুন এবং আধুনিক পরিবহনের দাবি সব শিক্ষার্থীসহ শ্রেণিপেশার মানুষের।

এদিকে নগর পরিবহন চালু করতে সিটি করপোরেশনের সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মনে করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা শাখার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।

তবে করোনাকালীন সংকট এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিও নগর পরিবহন বন্ধের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীন আহমেদ।

এ বিষয়ে খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবর রহমান বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক নগর পরিবহন চালুর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সেই চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।