চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আবু সুফিয়ান (২২) নামের এক তরুণকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। এতে ওই তরুণের দুই হাত ও এক পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
গুরুতর অবস্থায় আবু সুফিয়ানকে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) শিবগঞ্জের উমরপুর ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত আবু সুফিয়ান একই উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে।
আহত সুফিয়ানের মায়ের অভিযোগ, এক স্বজন কিশোরীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদের জেরে সুফিয়ানকে মারধর ও কুপিয়ে জখম করেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের স্থানীয় কর্মীরা।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে সুফিয়ানের বাবা রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। পরে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আহত আবু সুফিয়ান বলেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে একটি ছেলে তাঁর কিশোরী স্বজনকে উত্ত্যক্ত করছেন। কিন্তু কোনো কথা না শুনে তাঁরা তাঁকে (সুফিয়ান) বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত–পা কেটে দেন।
আবু সুফিয়ানের মা সুফিয়া বলেন, তাঁদের এক কিশোরী স্বজনকে কয়েক দিন আগে এক যুবক অপহরণ করেন। এ ঘটনায় মামলা করলে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধারের পাশাপাশি যুবককেও গ্রেপ্তার করে। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে সেই যুবক আবার মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। এ জন্য গত বুধবার বিকেলে তাঁর ছেলে সুফিয়ান উমরপুর ঘাটে ডেকে স্বজন মেয়েটিকে বিরক্ত না করতে ওই যুবককে শাসাচ্ছিলেন। তখন স্থানীয় আবদুর রাজ্জাক, শাহ আলমসহ জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ওই যুবকের পক্ষ নিয়ে সুফিয়ানকে মারতে শুরু করেন। তাঁরা রাজ্জাকের দোকানের সামনে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে সুফিয়ানকে কুপিয়ে জখম করেন।
সুফিয়া বেগম বলেন, ‘হার ছেলে হাতজোড় করে বলেছে, হামি দোষী লয়। আমাকে মারবেন না। আগে প্রমাণ লেন হামি দোষী কি না। তবু ওরা হার ছেলের কথা শোনেনি। হার ছেলেকে কোপালছে।’
গ্রেপ্তার দুজন হলেন শাহ আলম (২২) ও তাঁর ভাই আবদুর রাজ্জাক (২৩)। তাদের বাড়ি শ্যামপুর খোচপাড়া গ্রামে। রাজ্জাক একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। উমরপুর ঘাটে তাঁর ওষুধের দোকান আছে। সেই দোকানের সামনেই ঘটনাটি ঘটে।
শাহ আলম ও আবদুর রাজ্জাক জামায়াতের কর্মী হলেও তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন শিবগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির সাদিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কে বা কারা রাতের আঁধারে এ ঘটনা ঘটিয়ে জামায়াতের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। নির্বাচনের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা ঘটানো হয়েছে। জামায়াতের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। এ সন্ত্রাসী ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার মানুষ গতকাল শুক্রবার মানববন্ধন করেছে।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘সুফিয়ানের দুই হাত ও এক পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে। আরও অস্ত্রোপচার লাগবে। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩৬ নম্বর বেডে। আজ শনিবার সকালে পাশের বেডের রোগীরা জানান, ওই দিন রাতেই তাঁরা ডাক্তারকে না বলেই ঢাকায় চলে গেছেন।’
এ বিষয়ে সুফিয়ানের মা সুফিয়া বেগমের ভাষ্য, বুধবার রাতে তাঁরা সুফিয়ানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে চিকিৎসকেরা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেন। এখানে তাদের কিছু করার নেই। ওই রাতেই তাঁরা ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। রক্তের জোগাড় ছিল না। সে জন্য অস্ত্রোপচার করতে পরের দিন বিকেল হয়ে গেছে।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, সুফিয়ানের বাবার মামলায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি 





















