নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনও আপস নেই। কোনও শর্ত মেনে আমি কোথাও যাবো না’ বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের এক বার্তার কথা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের বাতিঘর। তিনি ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন, আপস করেননি। তারপর এখনও এই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন। আজকে তিনি মৃত্যুশয্যায় বলা যেতে পারে। তিনি লড়াই করছেন মৃত্যুর সঙ্গে, জীবনের লড়াই করছেন। সেখানেও তিনি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, গণতন্ত্রের প্রশ্নের কোনো আপস নেই। কোনো শর্তে মেনে নিয়ে আমি কোথাও যাবো না।
বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এক পেশাজীবী কনভেনশনে বিএনপি মহাসচিব এ বার্তা দেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ও গণতান্ত্রিক পেশাজীবী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এই পেশাজীবী কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মাদ আলীর। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী।
মির্জা ফখরুল বলেন, তৎকালীন বেআইনি সরকারের লোকেরা (১/১১) বলেছিল বিদেশে চলে যাও। তিনি বলেছেন, এই দেশ ছাড়া কোথাও আমার জায়গা নেই। তখন কিন্তু অন্যরা (শেখ হাসিনা) বিদেশে চলে গিয়েছিলেন, তাই না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সংবাদ সম্মেলনের দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, সেখানে তিনি (আইনমন্ত্রী) বলেছেন, আমি নাকি ভুল বলেছি, মিথ্যাচার করেছি। এখানে আইনজীবীরা আছেন, ৪০১ ধারায় পরিষ্কার করে বলা আছে, সরকার ক্ষমতা আছে শাস্তি মওকুফ করে দেওয়ার, মাফ করে দেওয়ার, সাময়িকভাবে স্থগিত করার, দণ্ড মাফ করে দিয়ে তাকে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার। অথচ বেমালুম বলে যাচ্ছে কোনো সুযোগ নাই, তাকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এ ধরনের কথাবার্তা বলার মানে হচ্ছে, আপনাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চান। সেজন্য আজকে এ ধরনের কথা বলছেন।
তলে তলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার। দিল্লি আছে, আমরাও আছি- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গতকালের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দিল্লি আছে, আমরাও আছি, আমরা আছি দিল্লিও আছে? কী বুঝাতে চাইছেন? দিল্লিকে আপনাদের জানিয়েছে যে এভাবে অপকর্ম করতে থাকো? দিল্লি কি বলে দিয়েছে দরকার নাই নির্বাচনের? দিল্লি কি বলে দিয়েছে জোর করেই নির্বাচন ঘোষণা করে দাও? তাহলে পরিষ্কার করে বলেন?
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এত বেশি পা চাটা হয়ে গেছে যে, তাদের সাধারণ সম্পাদক বলছেন ভয় নাই, ও রে ভয় নাই। তলে তলে আপস হয়ে গেছে। তাহলে স্বীকার করলেন এত দিনে আপস ছিল না। আসলে আপনাদের মতো এত বড় মিথ্যাবাদী পৃথিবীতে খুঁজে পাবেন না। এর আগে তাদের পররাষ্টমন্ত্রী বলেছিল, আলোচনা হয়েছে। আসলে কোনো আলোচনা হয়নি। বলেছে বৈঠক হয়েছে। আসলে কোনো বৈঠকও হয়নি। ছবি তোলার জন্য কত লবিং করেছে সেটা আমরা সবাই জানি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রং হেডেড পারসন (শেখ হাসিনা) অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। তাদের কোনো বৈধতা নেই। তাদের যেমন দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না, গণতান্ত্রিক বিশ্বের মানুষও বলে দিয়েছে তোমাদের আমরা আর বিশ্বাস করি না। যেসব দেশ সারাবিশ্বে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে দেখতে চায়, তারা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়নি, ২০১৮ সালেও কোনো নির্বাচন হয়নি। এবারও তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। তাদের অধীনের নির্বাচন কখনো বৈধতা দেওয়া হবে না।
লন্ডনে শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তার কথা এত কুরুচিপূর্ণ, যা নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তবে তিনি তার বক্তব্যে কয়েকটি সত্য কথা বলে দিয়েছেন। তা হলো- এদেশে যা কিছু ঘটে তা শেখ হাসিনার ইঙ্গিতে ঘটে। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার স্বীকারোক্তিতে তা প্রমাণিত হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রমাণ হয়েছে, এদেশে বিচার বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই হলো সিদ্ধান্ত। এখন শেখ হাসিনা নিজেকে নিজে সম্রাট ঘোষণা দিলে পারেন।
তিনি বলেন, বিএনপি দুই বছর ধরে রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। এবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেউ আঘাত করলে বিএনপি প্রত্যাঘাত করবে না এমনটা নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতের মতো সরকার আবারও একতরফা নির্বাচনের জন্য একটা বাগান সাজিয়েছে। কিন্তু এবার জনগণ ও বিশ্ব সম্প্রদায় এতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। জাতি আজ একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।
কনভেনশনে ২২টি পেশাজীবী সংগঠন যোগ দেয়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি প্রমুখ এতে বক্তৃতা করেন।