নিজস্ব প্রতিবেদক :
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোষহীন প্রতীক এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) এক বিশেষ শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা লেখেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারাল। এই বরেণ্য নেত্রীর প্রয়াণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।
প্রফেসর ইউনূস তার বার্তায় উল্লেখ করেন, বেগম খালেদা জিয়া কেবল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেত্রী ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। তার দীর্ঘ সংগ্রাম এবং জাতির প্রতি অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বর্তমান সরকার চলতি মাসেই তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
প্রধান উপদেষ্টা তার শোকবার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন মাইলফলক তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার বলিষ্ঠ ও আপোষহীন নেতৃত্বের কারণেই জাতি বারবার স্বৈরশাসনের জাতাকল থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং গণতন্ত্রের পথে ফেরার প্রেরণা পেয়েছে।
প্রফেসর ইউনূস বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও জাতির কল্যাণে খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল সবসময় পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে। তার মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ, পরীক্ষিত এবং কালজয়ী রাজনীতিককে হারাল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শোকবার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্থান ও সামাজিক সংস্কারের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে, ১৯৮২ সালে স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে এসে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুঃশাসনের পতন ঘটাতে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
নারী শিক্ষার প্রসারে তার অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন যে, মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করা ছিল দেশের নারী শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এ ছাড়া ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতির একটি মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, যা দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।
রাজনৈতিক সাফল্যের এক অনন্য নজির হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া তার পুরো জীবনে কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে তিনি পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে এবং ২০০৮ সালে তিনটি আসন থেকে জয়লাভ করেছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন যে, বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে খালেদা জিয়া ছিলেন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক। তার আপোষহীন অবস্থানের কারণেই তিনি চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন এবং দীর্ঘ সময় কারাবাস করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা মরহুমার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং দেশবাসীকে শান্ত থেকে তার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক 



















