নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। আর ছাত্রলীগকে খাতা-কলম হাতে দিয়ে তিনি পড়াশোনা করতে বলেছেন। কেননা, লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ না হলে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না।
শুক্রবার(১ সেপ্টেম্বর) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের স্মরণে ‘স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ’এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাঙালি। আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নামেন। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল মুক্তিকামি মানুষের মুক্তির জন্য।
সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এমনকি পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগই প্রথম প্রতিবাদ করে। এ ছাড়া ২০০৭ সালে ইমারজেন্সির সময় ছাত্রলীগই প্রথম প্রতিবাদ করেছে। সেই এক-এগারোর সময়েও ছাত্রলীগ কোনো আপস করেনি তারণ্যের শক্তিতে দেশ এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে যে ছাত্রসংগঠন তৈরি তাদের মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেও হত্যা করা হয়। যিনি সব সময় আমার বাবার পাশে ছিলেন। পাশে থেকে আমার বাবাকে সব সময় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। পঁচাত্তরের পর আমি যখন দেশে ফিরি তখন কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি কাউকে ভয় পাইনি, বাবার স্বপ্ন পূরণ করবই।
অশিক্ষিত, মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে সে দেশের কোনো অগ্রযাত্রা হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা যদি ৭৫ সালের কথা চিন্তা করি, তাহলে দেখব জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। তারা যে জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে, বিজয়ী সেই জাতির বিজয়ের ইতিহাস মুছে ফেলেছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিটি অর্জনের সঙ্গে ছাত্রলীগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে গর্বে আমার বুক ভরে যায়। যদি তারা আদর্শ নিয়ে চলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি শহীদের খাতায় চোখ বোলাই তাহলে দেখব ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিটি অর্জন আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস- এই কথা বলে গিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। আমরা যে বিদেশে ছিলাম দেশে আসতে পারিনি, তখন আমাদের ফিরে আসার দাবিটা প্রথমে ছাত্রলীগ করে। এভাবে বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়ার জন্য উর্দু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। প্রথমে আঘাত আসলো আমাদের ভাষার ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এটার প্রতিবাদ করেন।
তিনি আরো বলেন, এদেশে ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। যে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এদেশের লাখ মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে, সেই স্লোগান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ রেডিওর নামসহ বিভিন্ন নাম পরিবর্তন করে যাদেরকে আমরা পরাজিত করেছি সেই পরাজিত শক্তি পদাঙ্ক অনুসরণ করবার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল খুনি মোশতাক-জিয়া।
জিয়াউর রহমান আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করার জন্যই ক্ষমতায় এসেছিলেন বলেও এসময় মন্তব্য করেন সরকার প্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে সবাই নিজেদের স্বজন হারানোসহ যেকোনো অন্যায়ের বিচার চায়। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবাধিকারের কথা বলে। আমার প্রশ্ন, সেই ১৫ই আগস্ট যখন মা-বাবা ভাইসহ সব হারালাম আমাদের তো বিচার চাওয়ারও অধিকার ছিল না। আমরা তো বিচার চাইতেও পারিনি। ১৯৮১ সালে আওয়ামীলীগ যখন আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে আমি ফিরে এসেছিলাম অনেক বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে, এক রকম জোর করে ফিরে এসেছিলাম।
তিনি বলেন, আমি জানি যে, তখন ওই খুনিদেরকে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করে ক্ষমতায় বসিয়েছিল জিয়া। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল, অনেকের কারাগারে ছিল, তাদেরকে মুক্ত করে তখন ক্ষমতায় বসানো হয়।
এমনকি ছাত্রলীগের কর্মীকে যে আসামি হত্যা করেছিল, তাকেও মুক্ত করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসায় বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। অশিক্ষিত ও মূর্খদের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশের কোনো অগ্রগতি হয় না। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত উন্নয়ন করেছিলাম। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
বিএনপির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশের উন্নতি চোখে দেখে না, যাদের চোখ অন্ধ তাদের জন্য আন্তর্জাতিকমানের আই ইন্সটিটিউট করে দিয়েছি। সেখানে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে চোখ দেখালে ভালো। হাওয়া ভবন খুলে হাওয়া খেতে পারছে না বলে বিএনপির এত দুঃখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কোনো দিন এদেশের কল্যাণ চায় না। যাদের জন্ম ডিকটেটরের মাধ্যমে, মার্শাল ল জারির মাধ্যমে তারা নাকি গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। অশিক্ষিত ও মূর্খদের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশের কোনো অগ্রগতি হয় না। ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি বন্দি জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত উন্নয়ন করেছিলাম। কিন্তু খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, পদ্মাসেতু করতে আমাদের দুর্নীতির বদনাম শুনতে হয়েছিল একটি ব্যাংকের এমডির জন্য। একটি বড় দেশ সেই এমডিকে পুনরায় এমডি বানানোর জন্য চাপ দিয়েছিল। আমরা পদ্মাসেতু করে দেখিয়েছি বাংলাদেশের মানুষ পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ভাইবোনদের আমার শুভেচ্ছা জানাই। তারপর হাসতে হাসতে বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার নাতিপুতি। কারণ আমি তো নানি-দানি হয়ে গেছি।
ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসি এর আগে ছাত্রলীগ আমাদের দেশে ফেরার দাবি তুলেছিল। তখন ওবায়দুল কাদের সভাপতি ছিল। ২০০৭ সালে আমার বিরুদ্ধে যখন মিথ্যা মামলা হয়েছিল, সে সময় ছাত্রলীগ আন্দোলন করেছে ও মাঠে নেমেছে। আমি মনে করি, ছাত্রলীগ তারুণ্যের শক্তি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমিও কিন্তু ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলাম। আমার কেবিনেটের অনেকে ছাত্রলীগ করে আসা। ১/১১ এর সময় ছাত্রলীগ কোনো আপস করেনি। সেজন্য ছাত্রলীগকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার সময় ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসার জন্য ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া বন্যা বা দুর্যোগেও ছাত্রলীগ গিয়েছে, মানুষের কল্যাণ করেছে। করোনার সময় ছাত্রলীগ ধান কেটেছে। আমি বলেছি, তোমাদের ধান কাটতে হবে। সে সময় তারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
ধনসম্পদ টাকা পয়সা কাজে লাগে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমিও চাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। উপযুক্ত নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে উঠবে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতারা অংশ নেন।