নিজস্ব প্রতিবেদক :
খাদ্যবাহিত রোগে প্রতিবছর বিশ্বে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির মতে, মারা যাওয়া এসব শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নিচে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এক গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম।
প্রবন্ধে বলা হয়, খাদ্য বিভিন্নভাবে দূষিত হয়। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস (ছত্রাক), কেমিক্যাল (রাসায়নিক পদার্থ), বিষাক্ত উপাদান। এ ছাড়া, শারীরিকভাবে প্রস্তুত করার সময়ও খাবার দূষিত হতে পারে। খাদ্য বিষাক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ ফরমালিন, ইউরিয়া ও ক্যালসিয়াম কারবাইড ব্যবহার।
প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২০ সালে বাংলাদেশে কেবল ডায়রিয়ায় ৩৫ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছিল এবং ২০২২ সালে কলেরায় মারা গিয়েছিল ১ হাজার ৪০০ মানুষ।
উপস্থাপনায় খাবার সংরক্ষণের বিষয়ে খালেদা ইসলাম বলেন, খাবার সংরক্ষণে আলাদা আলাদা তাক ব্যবহার করতে হবে। সঠিক উপায়ে রান্না করতে হবে। সঠিক তাপমাত্রা সংরক্ষণ এবং নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা- এ তিনটি জিনিসকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। এগুলো একে অপরের পরিপূরক। আর সুস্থ থাকতে হলে নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। কেননা বর্তমানে বিশ্বে ৭০০ বিলিয়ন লোকের খাদ্য কত নিরাপদ আজ সেই প্রশ্নটি জেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে দিনে ৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে নানা কারণে আমাদের খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ইকোনাইটের সংক্রমণে সবজি পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে, এসব বিদেশে রপ্তানি করতে সমস্যায় পড়তে হয়। আজকের সেমিনার থেকে আলোচনার মাধ্যমে একটি দিকনির্দেশনা বেরিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করছি।’
স্বাগত বক্তব্যে বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, ‘আজ আমাদের তিনটি কাজ একসঙ্গে হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে- একনেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হতে পারে। তা ছাড়া খুলনায় ল্যাব স্থাপনে গণপূর্ত থেকে জমি বরাদ্দের কাজ হবে। আর জাতীয় সেমিনার।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দেশে দৈনিক ৮০ জন ও বছরে ৩০ হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর অন্যতম কারণ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করা। আমরা শিশুদের নিরাপদ খাদ্যে উদ্বুদ্ধ করতে লুডু খেলা ঘর তৈরি করেছি। যাতে তাদের মধ্যে খাদ্য নিরাপদতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ে।’
ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ‘ব্যাকটেরিয়া, কেমিক্যাল, কাঁচের টুকরা ইত্যাদির কারণে খাদ্য অনিরাপদ হয়। তা ছাড়া পানিবাহিত ভাইরাস, বিষাক্ত পদার্থের কারণেও অনিরাপদ হয়৷ এ খাদ্যের কারণে ১০ জনের একজন অসুস্থ হয়। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে বিশ্বে পাঁচ বছরের নিচে ৪ লাখ ২০ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে বছরে ৩৫ হাজার মানুষ অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মারা যায়।’
২০২১ সালের বাংলাদেশ খাদ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের খাবারে অনেক ভেজাল রয়েছে। ঘির মধ্যে ৬৬ দশমিক ৬৭, গুড়ে ৪৩দশমিক ৭৫, মধুতে ৩৩ দশমিক ৩৩, মিষ্টিতে ২৮দশমিক ৫৭, হলুদে ২৭দশমিক ৯৩, ডাল/ছোলায় ৫, চালে ৮দশমিক ৩৩, মরিচে ১৪দশমিক ৬৩, গুঁড়া দুধে ১৬দশমিক ৬৭ এবং লবণে ১৭দশমিক ৩৩ শতাংশ ভেজাল রয়েছে।’
খাদ্য নিরাপদ রাখার উপায় সম্পর্কে ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ‘খাদ্য নিরাপদ রাখতে হলে খাবার পরিষ্কার রাখতে হবে, রান্না ও কাঁচাখাবার একসঙ্গে রাখা যাবে না, রান্না করতে হবে ঢেকে, খাবার সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে হবে এবং রান্নায় নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।’
বাজার থেকে কী ধরনের খাবার কিনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফল, শাক-সবজি কেনার সময় রঙ ঠিক আছে কি না তা দেখতে হবে। মৌসুমি ফল, শাক-সবজি কিনতে হবে। পঁচা বা গন্ধযুক্ত খাবার কেনা যাবে না। হাত দিয়ে দেখতে হবে। তেলের ক্ষেত্রে চর্বির পরিমাণ কতটা সেটা দেখতে হবে।’
বিএফএসএর চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জাকারিয়ার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম। সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম।