খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি :
শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাসে খাগড়াছড়িতে চলমান অবরোধ ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে জুম্ম ছাত্র-জনতার মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুর্গাপূজার প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং প্রশাসনের তরফে আট দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচি ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক স্কুলপড়ুয়া জুম্ম কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করি। এরই মধ্যে সোমবার খাগড়াছড়ির ডিসির উদ্যোগে ডাকা আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভায় আমাদের ছয়জনের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিনিধি দল প্রশাসনের কাছে ৮ দফা দাবি পেশ করে, যা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রশাসন জানিয়েছে, অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে।
জুম্ম ছাত্র-জনতা বলেছে, “গুইমারায় সংঘটিত ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও আমরা অবহিত হয়েছি।”
জুম্ম ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ির ডিসি এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, এসপি আরেফিন জুয়েল, গুইমারার ইউএনও আইরিন আক্তার ও গুইমারা থানার ওসি মো. এনামুল হক চৌধুরী।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনের আশ্বাস ও উদ্যোগের প্রতি আস্থা রেখে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে আমরা ঘোষণা করছি যে, ৫ অক্টোবর অথবা পরবর্তী কোনো ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করা হল।
জেলাজুড়ে সড়ক অবরোধ মঙ্গলবারও (৩০ সেপ্টেম্বর) অব্যাহত ছিল। জেলার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ শিথিল করা হলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়নি। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও অল্পসংখ্যক অটোরিকশা-ইজিবাইক চলাচল করেছে। প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারাও বহাল রয়েছে জেলার সদর ও গুইমারা উপজেলায়।
দুপুরে জেলার গুইমারায় সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন এবং অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক।
পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতা এ অবরোধের ডাক দেয়। অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে গত রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র পরিণত হয় খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ সময় গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। তারা তিনজনই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর। সেনাবাহিনীর মেজরসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। সড়কে মানুষের হাঁটাচলাও তেমন ছিল না। একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে দেখলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শহরে কিছু সংখ্যক টমটম চলাচল করে।
অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত শনিবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুর করা হয়। এরপর সদর উপজেলা, পৌরসভা এলাকা এবং গুইমারা উপজেলায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
২৩ সেপ্টেম্বর জেলা সদরের সিঙ্গিনালায় রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় ক্ষেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।