রংপুর জেলা প্রতিনিধি :
রংপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশ উপলক্ষে নগরীজুড়ে সাজ সাজ রব পড়েছে। বুধবার (২ আগস্ট) সকাল থেকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দলের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো নগরী। রংপুরে জিলা স্কুল মাঠে মহাসমাবেশ বিকভলে হলেও, সকাল থেকেই আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত রংপুর জিলা স্কুলের আশপাশ।
বুধবার (২ আগস্ট) থেকেই সমাবেশস্থল ঐতিহাসিক রংপুর জিলা স্কুল মাঠের সামনে নেতাকর্মীরা সমবেত হচ্ছেন। অনেকেই রাতে এসেছেন। সমাবেশস্থলের আশপাশে তাদের থাকার ও খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকেই ফুটপাতে বসে রাত কাটিয়েছেন। সকালে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। সমাবেশের প্রবেশ গেটে ইতিমধ্যে গাইবান্ধা ও দিনাজপুরের কর্মী সমর্থকদের উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
জিলা স্কুল মাঠ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জনসভার মাঠে প্রবেশের জন্য তিনটি গেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গেটগুলোতে বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। একটি গেট দিয়ে লাল ও হলুদ সবুজ কার্ডধারী প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া মঞ্চের সাথেই অপর আরেকটি ভিআইপি গেট রয়েছে। সেখান দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কেন্দ্রীয় নেতা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা প্রবেশ করবেন।
দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর রংপুরের জনসভাকে কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। যারা মাঠে প্রবেশ করবেন, তাদের প্রত্যেককে পুলিশ তল্লাশি করবে। কড়া নজরদারিতে এসএসএফ। এছাড়া মঞ্চের পেছনে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া পুরো নগরীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসমাবেশকে ঘিরে এখন একাট্টা ও উজ্জীবিত রংপুর বিভাগ আওয়ামী লীগ। এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে তৃণমূল আরও শক্তিশালী হবে এবং সেই শক্তিশালী তৃণমূল দিয়ে বিরোধী জোটের মাঠের আন্দোলন মোকাবিলা ও রংপুর বিভাগকে আওয়ামী লীগের ঘাটিতে রূপান্তরের স্বপ্ন নেতাকর্মীদের।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রংপুর মহানগরী। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। বাস, মাইক্রোবাস, কার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ছাড়াও আটটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে মানুষ যাতায়াতের জন্য।
জিলা স্কুল মাঠে প্রবেশ করার আগে বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। এক এক করে সেই বেষ্টনী অতিক্রম করতে হচ্ছে। প্রত্যেকের শরীর তল্লাশি করে বেষ্টনী অতিক্রম করতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগছে বলে ঠাকুরগাঁও থেকে আওয়ামী লীগ নেতা মমদেল হােসেন জানান। এছাড়া বাঁশের বেষ্টনী পার হয়ে মাঠে প্রবেশ করার আগে আরও একবার তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে ম হাসমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা জানান।
স্থানীয় নেতারা জানান, রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আগমনে শহরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বুধবার দুপুর ১২টার আগেই জনসভাস্থলসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠবে। গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আসছেন জনসভায়।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আজকের জনসভার জন্য আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। মঙ্গলবার রাত থেকেই সভাস্থল খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে। পুরো বিভাগ থেকে প্রায় ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খ ম আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে কুড়িগ্রামের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে জনসভায় যোগ দিচ্ছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু চাইতে হয় না, তবুও কুড়িগ্রামবাসীর জন্য মেডিকেল কলেজ, কর্মসংস্থানের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ছোট ছোট শিল্প কলকারখানা করার দাবি রাখছি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিসি ক্রাইম) আবু মারুফ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জনসভার নিরাপত্তায় পোশাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি আর্মডসহ সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে। জনসভাস্থল ছাড়াও পথে পথে রুট ডিউটি, চেকপোস্ট, পুরো নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ ও মোড়ে মোড়ে আছে সদস্যরা। উঁচু ভবনের ছাদে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে প্রশিক্ষিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। সেই সাথে জনসভাস্থল, পুরো শহর এবং সার্কিট হাউস পুরোটাই আমরা সিসিটিভির কাভারেজে রয়েছে। সেই সাথে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ১ হাজারেরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যেগুলো ডিজিটালি মনিটরিং করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও থাকছে সার্বক্ষণিক। সবমিলিয়ে রংপুর নগরীর এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা।
রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত জনসভায় বিকেল ৩টার দিকে জিলা স্কুল মাঠের জনসভায় উপস্থিত হবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন।
এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ বক্তব্য রাখবেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পর তিনি আবার রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।