নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা কোন ভোগের বস্তু নয়, বরং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটা সুযোগ। সবার সহযোগিতা নিয়ে দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে চাই।
রোববার (২১ জানুয়ারি) সকালে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) ঐতিহ্যবাহী এ মেলার উদ্বোধনে তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এজন্য কৃতজ্ঞ যে, টানা চারবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। ক্ষমতা আমার কাছে কোনো ভোগের সুযোগ নয়। আমার কাছে এটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের একটি সুযোগ, মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ, মানুষকে সেবা দেওয়ার সুযোগ।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু পণ্য রফতানি হয়। তবে একটা দুই টা পণ্য থাকলে হবে না। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে রফতানি পণ্য বহুমুখী করতে হবে। বর্তমানে যে সকল পণ্যকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরকে। একইভাবে বাকি পণ্য গুলোকেও সুবিধা দেওয়া হবে যাতে দেশে রফতানিমুখী পণ্য বাড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে পাটের উৎপাদন রয়েছে, পাটজাত পণ্য পরিবেশ বান্ধব। পাটজাত পণ্যের রফতানি বাড়াতে হবে। পাটের বহুমুখী ব্যবহারে গবেষণা অব্যাহত আছে। পাট ও চামড়া সংমিশ্রণ প্রোডাক্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এটি আমাদের দেশের কৃষি। আমি মনে করি কৃষি পণ্যের সুযোগ দেওয়া দরকার, আমরা সব দিক দিয়ে এগিয়ে, বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্প, ওষুধ শিল্প সহ সব গুলোতে আমরা খুব অগ্রগামী। তবে আমাদের সকল পণ্যের রফতানি চাহিদা বাড়াতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দিন দিন দেশের মানুষ উন্নত হচ্ছে, জীবন মান উন্নত হচ্ছে। এখন দেশের তৈরি পণ্য সব স্থানে পাওয়া যাচ্ছে, টিভি ফ্রিজ গ্রামের বাজারেও মিলছে। ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনেও দেশ বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের যদি প্রসার না ঘটে, কোনো দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট একোয়া আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশের জনগণকে কেউ চ্যালেঞ্জ দিয়ে দাবায়ে রাখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পণ্যের চাহিদা ও বণ্টন সঠিকভাবে যেন হয়, সেজন্য একটি নীতিমালায় সাক্ষর করেছি। রফতানির পরিধি বাড়াতে ইতোমধ্যেই দেশ বিদেশের বিনিয়োগ কারী ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি আলোচনা হচ্ছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগ কারীদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমরা যারা রফতানি করছি তাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অনুরোধ জানায়। রফতানির পর আমাদের যা মুনাফা বা আয় আসার কথা তা আমরা সঠিকভাবে পাই না। সে লক্ষ্যে আপনাদের প্রতি অনুরোধ রফতানির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের অর্থনীতিতে সহযোগিতার।
গেল ৩ মেয়াদে আওয়ামী লীগের ব্যাপক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরইমধ্যে রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন হয়েছে; উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। যা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে। দেশের উৎপাদন বাড়াতে বগহুমুখী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।
আমদানি ও রফতানিতে ভারসাম্য আনতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগ আসুক, তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের। জানান, এবার বাংলাদেশের কূটনীতি হবে অর্থনীতি। এরই বিদেশি মিশনগুলোকে তা জানানো হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী বক্তব্যে হস্তশিল্পজাত পণ্যকে ২০২৪ সালের বর্ষ পণ্য হিসাবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান বলেন, সাধারণ মানুষের ঘরে এখন সবই আছে। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। নতুন নতুন উৎপাদন বাড়াতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রফতানি বাড়বে।
আজকের কূটনীতি রাজনৈতিক নয়, এটি অর্থনৈতিক কূটনীতি হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশে আমাদের সব দূতাবাসকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি, এখনকার ডিপ্লোমেসি এটা পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি না, ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি হবে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি দূতাবাস ব্যবসা-বাণিজ্য, রফতানি, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, কী আমরা রফতানি করতে পারি বা কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি- সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির মধ্যে নতুন বাজার খুঁজে বের করার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি আমদানি-রফতানিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া রফতানিতে সুনির্দিষ্ট পণ্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পণ্য বহুমুখীকরণে কাজ করার তাগিদ দেন।
কোভিডকালীন অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড অতিমারি চলাকালীন অন্যান্য দেশের মানুষ যেখানে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল, সেখানে বাংলাদেশের অগ্রগতি দৃশ্যমান ছিল।
নারীদের কর্মসংস্থান বাড়ানো ও তাদের স্বাবলম্বী করার কথা উল্লেখ করে হস্তশিল্পকে ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। বাড়িতে ও সমাজে তাদের একটা জায়গা (অবস্থান) তৈরি হবে। নারীদের কর্মসংস্থান করে দেওয়ার জন্য আমি এবার এই ‘২৪ সালে হস্তশিল্পকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করছি।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস-চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুব আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।