নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে মানুষের চাওয়ার দিকে তাকান। স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিন। এতে লজ্জার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
শনিবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক কণ্ঠ বাংলাদেশ আয়োজিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার প্রয়োগে নাগরিক সমাজের ভূমিকা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তবে আমরা এটি ফিরিয়ে আনবো গণতান্ত্রিক উপায়ে। আমরা লগিবৈঠার রাজনীতি, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। এই সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দিক, সেটাই চাই। সরকারের প্রতি অনুরোধ থাকবে মানুষের চাওয়ার দিকে তাকান। স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিন। এতে লজ্জার কিছু নেই।
তিনি আরো বলেন, সরকার বিদেশে ও মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু বিপজ্জনক হলো তারা মুখে বলে গণতন্ত্র। আর যা করে, তা পুরোটাই উল্টো। সেটাই বাংলাদেশে হচ্ছে। গত ১৪ বছর ধরে সারাবিশ্বে দেশকে গণতন্ত্রকামী বলে প্রচার করে যে ফানুস উড়িয়েছে, তা এখন ফুটে গেছে। এখন দেশ এবং সারাবিশ্বে এটা প্রচার হয়ে গেছে, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। সেজন্য বিশ্ব আজ হস্তক্ষেপ করছে এই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশে এখন অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্বৈরাচারের চেয়ে খারাপ গণতন্ত্রের পোশাকী স্বৈরাচার। গণতন্ত্রের প্রচার করার দাবি করলেও মুখে এক কথা বলে কাজে উল্টো করে দেশের পরিস্থিতি সঙ্গীন করে তুলেছে আওয়ামী লীগ। আন্তর্জাতিক বিশ্ব, সংস্থাগুলোর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে দেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
উন্নয়নের জোয়ারে একশ কোটি টাকার প্রকল্প একহাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে দেশের সৃষ্টিই অর্থহীন। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত না হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, চলমান আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, দেশের সকল মানুষের জন্য আন্দোলন, মানুষের অধিকার মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করছে বিএনপি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মঈন খান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না বলে আওয়ামী লীগ একসময় দাবি করলেও তা এখন হারাম কেন?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সংশোধিত সংবিধান দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপি শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছিল কারণ পৃথিবীর কোথাও এ ব্যবস্থা ছিল না। পরে বিএনপি জনগণের চাওয়াকে সম্মান দেখিয়েছিল। বিএনপি জনগণের জন্য রাজনীতি করে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে ২০০ এর অধিক দেশ রয়েছে— গণতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক কিংবা স্বৈরাচার। তবে কোনো দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ মামলা হয়, আর ৪৫ লাখ বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। কোথাও এমন দেখাতে পারবেন না। অস্ত্র, লগি বৈঠা দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা যায়, তবে এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করতে পারবে না। সরকার বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। তবে এর মাধ্যমে তারা কোনোদিন মানুষের মন জয় করতে পারবে না। এই সরকার প্রচার করে দেশে মেগা উন্নয়ন হয়েছে। তবে দেশে মেগা দুর্নীতি করেছে তারা।
নাগরিক কণ্ঠের আহ্বায়ক মো. রমিজ খানের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।