নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ ও জনবিচ্ছিন্ন। ভোটারবিহীন সরকার দিনে দিনে অস্থির বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
রোববার (১২ মে) বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশজুড়েই একদলীয় ভোটারবিহীন ডামি সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে জনগণের পদধ্বনি বাড়ছে। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে জনগণের সুদৃঢ় ইস্পাত কঠিন ঐক্য অবলোকন করে ভীত সন্ত্রস্ত সরকার আবারো নতুন করে বিএনপিসহ বিরোধীদল নিশ্চিহ্ন করতে ভয়ঙ্কর ক্র্যাকডাউনের পরিকল্পনা করেছেন। গত ২৮শে অক্টোবর জনগণের মহাসমাবেশ লন্ডভন্ডের মাধ্যমে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করে বিরোধীদলের ওপর দমনাভিযান চালিয়েছে, একই কায়দায় শনিবার যুবদলের সমাবেশের দিনে গোয়েন্দা সংস্থা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের নাটক সাজানো হয়েছে।
রিজভী বলেন, গত বুধবার ‘আওয়ামী লীগ ভার্সেস আওয়ামী লীগ’ উপজেলা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র বর্জনের মাধ্যমে জনগণ শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার পর সরকার আরও উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেছে। উপজেলার মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে একেবারেই জনপ্রিয়তা শূন্য হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। একটি দল নিজের কর্মদোষে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হওয়ার এটা বড় লক্ষণ।
তিনি বলেন, গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, ‘বিএনপি আবার নৈরাজ্য করলে আগে তো একটা শিক্ষা দিয়েছি, এবার ডাবল শিক্ষা দেব। আমরা বসে নেই।’ ওবায়দুল কাদের সাহেবের ডাবল শিক্ষা দেওয়ার ঘোষণার পরই আওয়ামী নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও অরাজকতা করার এজেন্টরা মাঠে নেমেছে। তারাই নয়াপল্টনে পলিথিনের ভেতর ককটেল রেখে এক ভবঘুরে কিশোরকে আহত করেছে। তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। তারা পরিকল্পিতভাবে আরও নৈরাজ্য সহিংসতা করতে পারে বলে জনগণ সন্দেহ করছে।
তিনি বলেন, নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্মমভাবে দমন করবার জন্য, নিজেরাই নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টি করছে জনবিচ্ছিন্ন সরকার। উদ্দেশ্য হলো- বিদ্যমান পরিস্থিতির ফায়দা লুটে, বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ওপর হামলা-মামলা ও গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা।
রিজভী বলেন, আজ রোববার বিশ্ব মা দিবস। বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে আপনজন, আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’ বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। সরকারপ্রধান প্রতিহিংসাপরায়ণতাবশত দেশমাতাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার রিপোর্টেও এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ আমাদের হৃদয় বিদীর্ন হচ্ছে কষ্টে। অবর্ণনীয় কষ্টে আছেন ‘গণতন্ত্রের মা’। উপযুক্ত চিকিৎসা বঞ্চিত মাকে অতি জরুরি সুচিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে দিচ্ছেন না সরকার। সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য ৭৮ বছরের একজন প্রৌঢ় মহীয়সী নারী, যিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়ে যাচ্ছেন, তাকে অন্যায়ভাবে ফরমায়েশী রায়ে বন্দী রেখে চরমতম মানসিক ও শারীরিক শাস্তি দিচ্ছে। আজ সর্ববিদিত যে তাকে হত্যা করতে চায় সরকার।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব মা দিবসে’ সরকারপ্রধানের প্রতি আহ্বান, বারবার সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শুধু প্রতিহিংসাবশত এমন নিষ্ঠুর আচরণের অবসান ঘটান। তাকে মুক্তি দিন। সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধা দিবেন না। পাকিস্তান আমল বা ব্রিটিশ শাসনেও এই দেশের রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি এমন বর্বর আচরণ করা হয়নি। আওয়ামী সরকারের চেয়ে ব্রিটিশরাও অনেক মানবিক ছিল। অবৈধ ক্ষমতা দখলে রাখতে গিয়ে মানবিকতা, সভ্যতা, ভদ্রতা, ন্যায়নীতি আর বিসর্জন দিবেন না। ক্ষমতা, মানুষের জীবন স্থায়ী নয়। সময় অসময় হতে সময় নেয়না! কারো মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করা আমাদের ধর্মে মহাপাপ হিসেবে গণ্য। প্রকৃতির বিচার খুবই মারাত্মক এবং অনিবার্য। যার যার কর্মের প্রাপ্তি প্রকৃতি থেকে আপনা আপনিই নেমে আসবে। আসুন, আমরা মানবিক হই। ঘৃণার পরিবর্তে ভালোবাসতে শিখি। মানুষের জন্য, সমাজের জন্য ঘৃণার রাজনীতি থেকে অবসর নেই। বাংলাদেশের মানুষের মাতা দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন।’
রিজভী অভিযোগ করেন, ‘গত ৭ জানুয়ারির একদলীয় ভোটারবিহীন ডামি নির্বাচনের পরে বায়বীয় সরকারকে রক্ষার জন্য বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। তারা নানা মিথ্যা অজুহাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, গ্রেফতার, দমন-নিপীড়ন, সাঁড়াশি আক্রমণ চালাচ্ছে। নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলকে নির্মমভাবে দমন করার জন্য নিজেরাই নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টি করছে জনবিচ্ছিন্ন সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, ফিরোজ আবদুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু আল আতিক হাসান মিন্টু, শাহ নাসির উদ্দিন রুম্মন, কামাল উদ্দিন দাদা, প্রচার সম্পাদক আবদুল করিম সরকার, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, সহ-আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ প্রমুখ।