নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। আরেকটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। চলমান এক দফা আন্দোলন অক্টোবরে আরও উত্তাল হবে। এই আন্দোলন সফল করতে সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীদের মুক্তি ও সংবিধান সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা এ কথা বলেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে ও রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খানের পরিচালনায় এই সমাবেশে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদউল্লাহ কায়সার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমনসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার দেশ চালাতে পারছে না। একটি ডেঙ্গু মশা মারতে পারছে না। যে সরকার একটি ডেঙ্গু মশা মারতে পারে না, সেই সরকার কিভাবে দেশ চালাবে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার ডিম-পেঁয়াজ-চিনি-আলুর-আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজার সিন্ডিকেট সেটি মানছে না। অর্থাৎ, সরকারের থেকে সিন্ডিকেটের ক্ষমতা বেশি।
তিনি বলেন, আমার দেশের টাকা উড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জুয়ার বাজারে। এই সরকার অবৈধ সরকার। রাষ্ট্র চালাতে হলে মানুষের সম্মতি লাগে। মানুষ ভোটের মাধ্যমে তাদের সম্মতি দেয়। কিন্তু এই সরকার ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতায় আছে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বেহেস্তে আছে। যেখানে মানুষ জাহান্নামে আছে। এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। এই সরকারের বিরুদ্ধে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে অবস্থান নিয়েছে। নৌকা যত ডুববে তাদের শরীক দলগুলোও পক্ষ পরিবর্তন করবে। মানুষ আর এই ভোট চোরদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, এই সরকার রাত ৮টা পর্যন্ত বিচারবিভাগকে ব্যস্ত রেখেছে। তারা নানানভাবে স্বাক্ষীসমর নিয়ে এসে বিএনপি নেতাদের একে একে জেলে পোরার ব্যবস্থা করছে। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে তো সাজা দিয়েছেনই, এখন মহাসচিব থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সাজা দিয়ে জেলে পুরার ব্যবস্থা করছেন।
তিনি বলেন, কেবল বিএনপি নয়; মানবাধিকার সংগঠনগুলোকেও তারা ছাড় দিচ্ছেন না। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে পুলিশের দেওয়া ‘মিথ্যা’ রিপোর্ট অনুযায়ী দুই বছরের সাজা দিয়ে তাদের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। ভুয়া রিপোর্টের ওপর ভর করে এই সরকার আদালতকে ব্যবহার করে মানবাধিকার সংগঠকদের জেলে পুরছে।
পরিণতি খুব ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যে মানবাধিকার সংগঠকদের ফরমায়েশি সাজা দেওয়া হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রেজুলেসন্স নিচ্ছে। কেবল তারা নিন্দাই করেননি, ইইউ বলেছে, মানবাধিকার পরিস্থিতি যদি এভাবে চলতে থাকতে বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে যে সুবিধা পায়, তার ওপর প্রভাব পড়বে।
জোনায়েদ সাকী বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারে গণতন্ত্র মঞ্চের ওপর হামলা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনের ওপর হামলা করা হয়েছে। দমনপীড়ন মানেই হচ্ছে সরকার ভয় পেয়ে গেছে। তারা সবাইকে ভয় দেখিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা খুঁজছে। সরকার ভয় পেয়েছে মানে এই আরেকটু ধাক্কা দিলেই সরকার পড়ে যাবে। এদের ভয় দেখানোর অস্ত্রটা ভোতা করে দিতে হবে। শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আগামী জানুয়ারিতে এই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় থাকার জন্য এক তরফা নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। আমরা যারা চলমান আন্দোলনে আছি তাদের বাদ দিয়ে এই এক তরফা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে বলে দিতে চাই, বাংলার মাটিতে আর কোনো দিন এক তরফা নির্বাচন হবে না। বুকের রক্ত দিয়ে হলেও এক তরফা নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। গুলি খেয়ে রাস্তায় মারা যাব, তবুও এক তরফা নির্বাচন এই সরকারকে করতে দেব না।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, এই সরকার আবার এক তরফা নির্বাচন করার পায়তারা করছে। কিন্তু এক তরফা নির্বাচন আর বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। বুকের রক্ত দিয়ে হলেও আপনাদের (আওয়ামী লীগ) এক তরফা নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন বলেন, আজকের এই ফ্যাসিবাদী শাসক, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ব্যবসায়ীরা মিলে যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে দেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। জনগণ এই লুটপাটের সিন্ডিকেট ভেঙে ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন ঘটানো ছাড়া ঘরে ফিরে যাবে না। এই অবৈধ শাসকের দিন শেষ। এখনও সময় আছে, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন।
সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা একই দাবিতে গণমিছিল করেন। মিছিলটি মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে টিকাটুলির হাটখোলায় গিয়ে শেষ হয়।