স্পোর্টস ডেস্ক :
অ্যাশেজ শেষে জেমস অ্যান্ডারসন অবসর নেবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল বেশ। তবে ৪১ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অবসরের কথা চিন্তাও করছেন না তিনি। কিন্তু তার ‘পার্টনার অব ক্রাইম’ স্টুয়ার্ট ব্রড অনেকটা হুট করেই দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা। চলমান অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্ট শেষেই ১৮ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতি টানছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ইংলিশ পেসার ঝলমলে সব পরিসংখ্যান সঙ্গী করেই বিদায় নিচ্ছেন ক্রিকেট থেকে।
দ্য ওভাল টেস্টের তৃতীয় দিন শেষ হওয়ার পর ব্রড বলেন, ‘কাল (রোববার) অথবা সোমবার ক্রিকেটে আমার শেষ দিন হবে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যাতেই অবসরের সিদ্ধান্ত নেন ব্রড। টেস্টে ৬০২ উইকেট নেওয়া ডানহাতি এই পেসার বলেন, দারুণ এক যাত্রা ছিল এটি। ইংল্যান্ড ও নটিংহ্যামশায়ারের (কাউন্টি ক্লাব) জার্সিতে যতদিন খেলেছি, তা ছিল আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের এবং ক্রিকেটকে আমি আগের মতোই ভালোবাসি। দুর্দান্ত এক সিরিজের অংশ হতে পেরে ভালো লাগছে এবং আমি সবসময় চেয়েছিলাম চূড়ায় থেকে শেষ করতে। এই সিরিজে খেলে মনে হয়েছে অন্যতম উপভোগ্য ও আনন্দদায়ক কিছুর অংশ হয়েছি আমি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রডের অভিষেক হয় ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট দিয়ে। তবে পরের বছর এই ফরম্যাটেরই বিশ্বকাপের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হতাশাজনক দিনটি কাটান ব্রড। ডানহাতি এই পেসারের এক ওভারে সেদিন ছয় ছক্কা হাঁকিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন ভারতীয় ব্যাটার যুবরাজ সিং। কিন্তু এর পরের গল্পটা ব্রড লিখেছেন অন্যভাবে।
রঙিন পোশাকে অতটা রঙিন হতে না পারলেও, সাদা পোশাকে ছড়িয়েছেন শুভ্রতা। ক্রিকেট যখন ছাড়বেন তখন তার গায়ে বসবে কিংবদন্তি ট্যাগ। ১৬৭ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ৬০২ উইকেট। এই অ্যাশেজেই ছুঁয়েছেন ৬০০ ঊইকেটের মাইলফলক। এখনো অবশ্য আরও এক ইনিংসে বল করা বাকি তার। টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় পঞ্চম তিনি। শুধু তা-ই নয়, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৫১ উইকেট নিয়ে সফলতম ইংলিশ বোলার তিনি।
ব্রড বলেন, আমি এনিয়ে (অবসর) কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভাবছি। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ সবসময়ই আমার কাছে সেরা। আমার দিক থেকে এবং দলের দিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াইটা আমি উপভোগ করেছি। অ্যাশেজের সঙ্গে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক আছে এবং আমি মনে করি, অ্যাশেজেই শেষবারের মতো ব্যাট ও বল হাতে নামতে চেয়েছিলাম আমি। গত রাতে স্টোকসকে বলেছিলাম এবং আজ সকালে ড্রেসিং রুমে সবাইকে বলি। এবং সত্যিই বলতে এটাই সরে দাঁড়ানোর সঠিক সময় বলে মনে হয়েছে। আমি এনিয়ে অনেক ভেবেছি এবং গত রাত ৮টা পর্যন্ত মনে হয়েছিল অবসর নেব, আবার মনে হয়েছিল নেব না। তবে যখন স্টোকসের রুমে গিয়ে তাকে কথাটা বললাম, তখন থেকে খুব খুশি লাগছিল এবং যা অর্জন করেছি সবকিছু নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
ইংল্যান্ডের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৪৪ ম্যাচ খেলেছেন ব্রড। উইকেট নিয়েছেন ৮৪৫টি টেস্টে ৬০২, ওয়ানডেতে ১৭৮ আর টি-টোয়েন্টিতে ৬৫টি। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন। টেস্টে ১৩টি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরি আছে তাঁর। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দিনে জোনাথান ট্রটের সঙ্গে ৩৩২ রানের মহাকাব্যিক জুটি গড়েছিলেন; যা টেস্ট ইতিহাসে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ।
অথচ ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুবরাজ সিংহের কাছে ছয় বলে ছয় ছক্কা খাওয়ার পর অনেকেই ব্রডের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু বিখ্যাত বাবার (সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে আইসিসি ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড) বিখ্যাত ছেলে হতে চাওয়ার তাড়না হয়তো তাঁর মধ্যে কাজ করেছে। ২০০৭–এর ওই একটি ওভারের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন ২০১০ সালে ইংল্যান্ডকে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানোয় বড় অবদান রেখে। সেটাই ছিল ইংলিশদের প্রথম কোনো বৈশ্বিক শিরোপা।
২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ইংল্যান্ড ছিটকে পড়ার পর ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়েন ব্রড। ২০১৬ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দলে ফিরলেও মাত্র দুটি ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন। ক্যারিয়ার লম্বা করতে এরপর টেস্টেই মনোযোগী হয়েছেন। দেশের জার্সিতে শেষ টি–টোয়েন্টিটাও খেলেছেন অনেক আগে। সেটা বাংলাদেশের মাটিতেই, ২০১৪ বিশ্বকাপে।