Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোরবানি দিতে গিয়ে আহতদের ভিড় হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীতে পশু কোরবানি দিতে গিয়ে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। এরমধ্যে গরু কাটাকাটি করতে ও পশুর লাথি-গুঁতায় আহত হয়েছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ছাড়াও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

ঢামেক সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকে কোরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে নানাভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ইতোমধ্যেই চিকিৎসা নিয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। সবমিলিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন ঢামেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে প্রায় সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।ছঁৎনধহরএ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে কেউ গরুর শিংয়ের আঘাত পেয়েছেন, আবার কেউবা ছুরি চালাতে গিয়ে আঙুল কেটে ফেলেছেন। এরকম কেসই বেশি।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই গরুর শিংয়ের আঘাতে বা ছুরি চালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন। দুই-একজন অবজারভেশনে আছেন। তবে আপাতত তেমন গুরুতর কেউ নেই।

গরুর শিংয়ের আঘাতে আহত হয়েছেন কেরানীগঞ্জের শিমুল। আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছে পরিবারের সদস্যরা। গরুর আক্রমণে শিমুল কোমরে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন বলে জানায় তার পরিবার। সকালে কোরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। একই ধরনের ঘটনায় সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।

একই অবস্থা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর), যা পঙ্গু হাসপাতাল নামেও পরিচিত। এখানেও সকাল থেকে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। আহতদের মধ্যে কারও হাড় ভেঙেছে, কারও আঙুল কাটা পড়েছে। এছাড়াও কোরবানির গরুর মাংস কাটতে গিয়েও হাতের রগ কেটে যাওয়া অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সবমিলিয়ে সকাল থেকে পঙ্গু হাসপাতালে অন্তত শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সবাই কোরবানি দিতে কিয়ে নানাভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন।

সাভারের বলিয়ারপুর থেকে পঙ্গু হাসপাতালে এসেছেন মোহাম্মদ রহমত। গরুর হাড় কোপাতে গিয়ে ভুলবশত নিজের বাম হাতেই কোপ পড়ে যায় তার। এর ফলে তার বাম হাতের রগ কেটে গেছে। জানা গেছে, দ্রুত অস্ত্রোপচার করা না হলে রহমতের হাত কেটে ফেলারও আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য হাসপাতালে আনার জন্য তাকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে পাঠায় নিটোরের জরুরি বিভাগ।

এ দিন হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই কোরবানির গরু জবাই করতে গিয়ে গরুর লাথি-গুঁতা খেয়ে হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। আবার কেউবা গরু জবাই করার সময় ছুরি ফসকে কিংবা মাংস প্রস্তুত করতে গিয়েও হাত-পায়ের রগ কেটে যাওয়ায় চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

রাজধানীর মিরপুর এলাকার মামুন তাদেরই একজন। ঈদের দিনে গরু জবাই করতে সহায়তা করার সময় হাত ফসকে ডান হাতের রগ কেটে গেছে তার। বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কাতরাচ্ছেন এই তরুণ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মামুনের ডান হাতের প্রায় ৩০ শতাংশ কেটে দুই ভাগ হয়ে গেছে।ছঁৎনধহরএকই অবস্থা কলাবাগান এলাকা আসা রাসেলের। গরু জবাই করতে গিয়ে বাম হাতের তিনটি আঙুল কাটা পড়েছে তার। দুর্ঘটনার পর দ্রুত হাসপাতালে আনা হলে পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করেছে।

এদিকে, নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে পঙ্গু হাসপাতালে এসেছেন চাঁদ মিয়া। ট্রলিতে ঠেলে তাকে এক্স-রে রুমে নেওয়া হচ্ছে। হাতে থাকা এক্স-রে রিপোর্টে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে- তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে।

চাঁদ মিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে আসা তার বড় ভাই মিন্টু মিয়া বলেন, গরু জবাই দেওয়ার সময় রশি দিয়ে ভালোভাবে বাঁধা হয়নি। যখন হুজুর জবাই শুরু করেন, ওইসময় গরু পা দিয়ে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে। এতে তার হাড় ভেঙে গেছে।

অন্যদিকে, শেওড়াপাড়া থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সৈয়দ শফিউল হক গরুর মাংস প্রস্তত করার সময় গুরুতর জখম হয়েছেন। মাংস প্রস্তুত করতে গিয়ে হাড়ে কোপ মারার সময় ছুরি ফসকে তার ডান হাতে লাগে। এতে গুরুতর জখম হন শফিউল।

এছাড়া আশুলিয়া থেকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন মোক্তার হোসেন। গরু জবাই করার সময় হুজুরকে সহায়তা করছিলেন তিনি। তবে ওই সময় গরু নড়ে ওঠায় ছুরি মুক্তারের হাতের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে মোক্তারের বাম হাতের রগ কেটে গেছে। এখন সেই হাত রাখা নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কোরবানি দিতে গিয়ে আহতদের ভিড় হাসপাতালে

প্রকাশের সময় : ০৯:২১:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীতে পশু কোরবানি দিতে গিয়ে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। এরমধ্যে গরু কাটাকাটি করতে ও পশুর লাথি-গুঁতায় আহত হয়েছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ছাড়াও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

ঢামেক সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকে কোরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে নানাভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ইতোমধ্যেই চিকিৎসা নিয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। সবমিলিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন ঢামেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে প্রায় সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।ছঁৎনধহরএ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে কেউ গরুর শিংয়ের আঘাত পেয়েছেন, আবার কেউবা ছুরি চালাতে গিয়ে আঙুল কেটে ফেলেছেন। এরকম কেসই বেশি।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই গরুর শিংয়ের আঘাতে বা ছুরি চালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন। দুই-একজন অবজারভেশনে আছেন। তবে আপাতত তেমন গুরুতর কেউ নেই।

গরুর শিংয়ের আঘাতে আহত হয়েছেন কেরানীগঞ্জের শিমুল। আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছে পরিবারের সদস্যরা। গরুর আক্রমণে শিমুল কোমরে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন বলে জানায় তার পরিবার। সকালে কোরবানির পশু জবাই করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। একই ধরনের ঘটনায় সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।

একই অবস্থা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (নিটোর), যা পঙ্গু হাসপাতাল নামেও পরিচিত। এখানেও সকাল থেকে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। আহতদের মধ্যে কারও হাড় ভেঙেছে, কারও আঙুল কাটা পড়েছে। এছাড়াও কোরবানির গরুর মাংস কাটতে গিয়েও হাতের রগ কেটে যাওয়া অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সবমিলিয়ে সকাল থেকে পঙ্গু হাসপাতালে অন্তত শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সবাই কোরবানি দিতে কিয়ে নানাভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন।

সাভারের বলিয়ারপুর থেকে পঙ্গু হাসপাতালে এসেছেন মোহাম্মদ রহমত। গরুর হাড় কোপাতে গিয়ে ভুলবশত নিজের বাম হাতেই কোপ পড়ে যায় তার। এর ফলে তার বাম হাতের রগ কেটে গেছে। জানা গেছে, দ্রুত অস্ত্রোপচার করা না হলে রহমতের হাত কেটে ফেলারও আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য হাসপাতালে আনার জন্য তাকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে পাঠায় নিটোরের জরুরি বিভাগ।

এ দিন হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই কোরবানির গরু জবাই করতে গিয়ে গরুর লাথি-গুঁতা খেয়ে হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। আবার কেউবা গরু জবাই করার সময় ছুরি ফসকে কিংবা মাংস প্রস্তুত করতে গিয়েও হাত-পায়ের রগ কেটে যাওয়ায় চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

রাজধানীর মিরপুর এলাকার মামুন তাদেরই একজন। ঈদের দিনে গরু জবাই করতে সহায়তা করার সময় হাত ফসকে ডান হাতের রগ কেটে গেছে তার। বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কাতরাচ্ছেন এই তরুণ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মামুনের ডান হাতের প্রায় ৩০ শতাংশ কেটে দুই ভাগ হয়ে গেছে।ছঁৎনধহরএকই অবস্থা কলাবাগান এলাকা আসা রাসেলের। গরু জবাই করতে গিয়ে বাম হাতের তিনটি আঙুল কাটা পড়েছে তার। দুর্ঘটনার পর দ্রুত হাসপাতালে আনা হলে পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করেছে।

এদিকে, নগরীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে পঙ্গু হাসপাতালে এসেছেন চাঁদ মিয়া। ট্রলিতে ঠেলে তাকে এক্স-রে রুমে নেওয়া হচ্ছে। হাতে থাকা এক্স-রে রিপোর্টে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে- তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে।

চাঁদ মিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে আসা তার বড় ভাই মিন্টু মিয়া বলেন, গরু জবাই দেওয়ার সময় রশি দিয়ে ভালোভাবে বাঁধা হয়নি। যখন হুজুর জবাই শুরু করেন, ওইসময় গরু পা দিয়ে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে। এতে তার হাড় ভেঙে গেছে।

অন্যদিকে, শেওড়াপাড়া থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সৈয়দ শফিউল হক গরুর মাংস প্রস্তত করার সময় গুরুতর জখম হয়েছেন। মাংস প্রস্তুত করতে গিয়ে হাড়ে কোপ মারার সময় ছুরি ফসকে তার ডান হাতে লাগে। এতে গুরুতর জখম হন শফিউল।

এছাড়া আশুলিয়া থেকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন মোক্তার হোসেন। গরু জবাই করার সময় হুজুরকে সহায়তা করছিলেন তিনি। তবে ওই সময় গরু নড়ে ওঠায় ছুরি মুক্তারের হাতের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে মোক্তারের বাম হাতের রগ কেটে গেছে। এখন সেই হাত রাখা নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।