নিজস্ব প্রতিবেদক :
কোনো ব্যক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে নয়, বরং দেশের প্রয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি প্রতিষ্ঠানের হলেও কোনো ব্যক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে নয়, বরং দেশের চাহিদার কারণেই তাদের কাছ থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার বিবেচনা করেই এলএনজি ও গম কেনা হচ্ছে। ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে অতিরিক্ত দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি করা হলেও এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না। সার আমদানিতে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখবে।
সার আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি তদন্ত করতে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকার এই বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবে। দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে নানামুখী কাজ করা হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে, কর রাজস্ব এখন স্থিতিশীল রয়েছে, যা একটি ইতিবাচক সংকেত।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশে, আপনারা আমদানি শুল্ক আরো বাড়াচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা নির্ভর করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা ঘাটতিটা কমানোর জন্য কি কি আমদানি করতে পারে। সেখানে মোটামুটি আমরা কমর্ফোটেবল পজিশনে আছি।
আমেরিকা থেকে পণ্য আনতে ভিয়েতনাম থেকে বেশি খরচ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুটাতো হবেই। যেমন আমরা গমের বিষয় বলেছি এতে আমদানি মূল্য বেশি হবে কিন্তু মানটা অনেক ভালো। আমরা ট্যারিফ অ্যাভয়েড করতে চাইছি, ঘাটতি কমাতে চাইছি তাতে কিছুটাতো লাগবেই।
ভোক্তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, না, ভোক্তাদের ওপর প্রভাব পড়বে না। আমরাতো এমনিতেই ভোক্তাদের জন্য মূল্য নিয়ে অনেকটা ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছি। টিসিবিসহ অন্যান্য বিষয়ে আমরা ভতুর্কি দিচ্ছি।
মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতিতে এখনো প্রভাব পড়েনি, আমরা যতোই আমদানি করি, সরবরাহ বাড়াই। বড় সমস্যা হলো পাইকারি ও খুচরা বাজারে। তারাতো অর্থনীতির ধারাকে ছাড়িয়ে গেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এটা কমই হয়। আমাদের মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল, সম্প্রতি খাদ্য বর্র্হিভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে।
সম্প্রতি অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দেশে বেকার সংখ্যা এমন ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে যা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ কর্মসংস্থান হয় বেসরকারি খাতে। ব্যবসা-বাণিজ্য যদি একটু মন্থর হয়ে যায়, অবশ্যই প্রভাব পড়ে। সেটা নির্ভর করে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য কতটুকু সহায়তা দিচ্ছি। একেবারে ভয়ংকর কিছু এটা মনযোগ আকর্ষণ করার জন্য তারা বলেন। তবে আমরা সচেতন আছি।
ব্যাবসা বাণিজ্য মন্থর হয়েছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসাটা মাঝখানে একটু মন্থর ছিল। এখন একটু ভালো হয়েছে।
ট্যাক্স প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ট্যাক্স ব্যবস্থাকে সহজ করার চেষ্টা করছি। ল’য়ারদের দায়িত্ব দিয়েছি যাতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন হয়। অনেকেই ট্যাক্স ফরম পূরণ করতে পারেন না, তাই যদি সামান্য ফি নিয়ে এ কাজ করে দেওয়া যায় তবে সবার জন্যই সুবিধা হবে।
রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রয় কমিটিতে রাজনৈতিক কোনো বিষয় আলোচনা হয় না। তবে অর্থনীতির কিছু বিষয় অবশ্যই আলোচনা হয়। আমরা অর্থনীতির দিকটা মোটামুটি কনসোলিডেট করার চেষ্টা করছি।
এদিন অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে রয়েছে নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন, এলএনজি আমদানির উদ্যোগ এবং সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জেনারেশন যাই হোক, ডিস্ট্রিবিউশনের সমস্যার কারণে ফল্ট তৈরি হয়। এসব সমাধানের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এমওপি ও ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।