Dhaka রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোটা বাতিলে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদ এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টিতে ভিজেই তারা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, উপাচার্যের বাসভবন, রাজু ভাস্কর্য ঘুরে শাহবাগে এসে অবরোধ করেন তারা। তারা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

বেলা ১১টার পর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ করে ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেয় তারা।

এতে শাহবাগ মোড়সহ আশপাশ এলাকার সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সড়ক অবরোধের ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে। যানজট তীব্র হওয়ায় অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে।

এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘নো কোটা, নো ডিসক্রিমিনেশন’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সবার জন্য সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, পোস্টার প্রদর্শন এবং কোটাবিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়।

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, এই বৃষ্টি আমাদের চাঙা করার জন্য এসেছে। আমরা ক্লান্ত ছিলাম আমাদের এই ক্লান্তি দূর করতেই এই বৃষ্টি নেমেছে। এই বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সারা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সবাই রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন চালাচ্ছে। আমরা দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো:

১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।

২. ‘১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।

৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কোটা বাতিলে শাহবাগে শিক্ষার্থীদের অবরোধ

প্রকাশের সময় : ০২:৪১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের প্রতিবাদ এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টিতে ভিজেই তারা অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, উপাচার্যের বাসভবন, রাজু ভাস্কর্য ঘুরে শাহবাগে এসে অবরোধ করেন তারা। তারা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

বেলা ১১টার পর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দিক প্রদক্ষিণ করে ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেয় তারা।

এতে শাহবাগ মোড়সহ আশপাশ এলাকার সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সড়ক অবরোধের ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে গেছে। যানজট তীব্র হওয়ায় অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে।

এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘নো কোটা, নো ডিসক্রিমিনেশন’, ‘সংবিধানের মূল কথা, সবার জন্য সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, পোস্টার প্রদর্শন এবং কোটাবিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়।

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, এই বৃষ্টি আমাদের চাঙা করার জন্য এসেছে। আমরা ক্লান্ত ছিলাম আমাদের এই ক্লান্তি দূর করতেই এই বৃষ্টি নেমেছে। এই বৃষ্টি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সারা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সবাই রাজপথ অবরোধ করে আন্দোলন চালাচ্ছে। আমরা দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।

ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

চার দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো:

১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে।

২. ‘১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।

৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।