Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোটা নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসলে সরকারের কিছু করার নেই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসলে সরকারের কিছু করার নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পবে?

রোববার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে, আইন মানবে না, আদালত মানবে না। সরকার কীভাবে চলে কোনো ধারণা নেই। জ্ঞান নেই। ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে। পড়াশোনা করছে। ভালো রেজাল্ট করছে। কিন্তু সংবিধান কী বলে জানা উচিত। রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালনা হয় কোনো ধারণা আছে? আদালত সুযোগ দিয়েছে। সেখানে যাক, বলুক। না, তারা রাজপথে সমাধান করবে। আদালত যখন বলেছে, এখন আমার কিছু বলার অধিকার নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসে কিছু করার নেই।

হুঁশিয়ার করে সরকারপ্রধান বলেন, কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। পুলিশের গায়ে হাত দেওয়া, গাড়ি ভাঙা… তখন আইন আপন গতিতে চলবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তারা দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবনপণ লড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় কীভাবে? মুক্তিযুদ্ধ তাদের এখন ভালো লাগে না।

তিনি বলেন, তারা বলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা অযোগ্য বলে কোটার সুবিধা নিয়ে চাকরি পায়। আমি বলব মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু সব সময়ই বিজয়ী। মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে কিন্তু তাদের পরাজিত করেছিল।

তিনি আরো বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা আইন মানবে না, আদালত মানবে না আইন মানবে না। সংবিধান কী তা তারা চেনে না। একটা সরকার কীভাবে চলে তা সম্পর্কে আন্দোলনকারীদের কোনো জ্ঞানই নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা (শিক্ষার্থীরা) এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?

শেখ হাসিনা বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তারা আইন মানে না, সংবিধান বোঝে না। আদালতে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করা যাবে না।

তিনি বলেন, মেধা কার কত সেটা পরীক্ষায় দেখা যায়, সবসময় সব কোটা পূর্ণও হয় না। তখন মেধা তালিকা থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?

শেখ হাসিনা বলেন একসময় আমার বাসার পিয়ন ছিল। সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। পরে তাকে ধরা হয়েছে। খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে।

পিএসসির গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর অঢেল সম্পদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন ড্রাইভার কীভাবে এত কোটি কোটি টাকার মালিক হলো, সেটা কীভাবে বলবো? তাদের অপকর্ম আমরা ধরছি বলেই তো এখন জানতে পারছেন। এতদিন তো আপনারা জানতে পারেননি। প্রথমে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে, তাদের থামিয়েছি। এখন আমরা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছি, দুর্নীতবাজদের ধরছি। এটা চলতে থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আমাকে বলেন— এটা করলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে। আমি সেটা মনে করি না। যারা অপরাধ করছে, দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে; তাদেরকে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।

সরকারি চাকরিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নিয়মের যেসব ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে সেগুলোর সূচনা বিএনপির আমলে বলে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ বিসিএস হয় ২০০২ সালে। তখন পরীক্ষা-টরিক্ষা হতো না। হাওয়া ভবন থেকে তালিকা যেতো। ঢাকা কলেজে একটা বিশেষ কামরা ছিল। সেখানে বসে পরীক্ষা দিয়ে তাদের লোকজন চাকরি পেত। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনিয়ম তখন থেকেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় বলা হয়, এসব ধরতে গেলে ইমেজ নষ্ট হবে। আমি এটা মানি না। অন্যায় অবিচার ধরবই। তাদের ধরতেই হবে। ছেড়ে দিলে তো চলতেই থাকবে।

সরকার আন্তরিক বলেই সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ধরা পড়েছে বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দিন ধরে লেগে থেকে থেকে ধরতে পেরেছি।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে কেউ ভেনিফিশিয়ারি হলে তাদেরও ধরা হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে দেবে কে। অমুকের কাছে বিক্রি করেছি বললে এবং প্রমাণ করতে পারলে ধরা যাবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘুষ যে দেবে আর ঘুষ যে নেবে উভয়ই অপরাধী। যারা ফাঁস করে আর যারা কিনে উভয়ই সমান অপরাধী। সরকার কাউকে ছাড় দেবে না।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

কোটা নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসলে সরকারের কিছু করার নেই : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৫:২১:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসলে সরকারের কিছু করার নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পবে?

রোববার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে, আইন মানবে না, আদালত মানবে না। সরকার কীভাবে চলে কোনো ধারণা নেই। জ্ঞান নেই। ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে। পড়াশোনা করছে। ভালো রেজাল্ট করছে। কিন্তু সংবিধান কী বলে জানা উচিত। রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালনা হয় কোনো ধারণা আছে? আদালত সুযোগ দিয়েছে। সেখানে যাক, বলুক। না, তারা রাজপথে সমাধান করবে। আদালত যখন বলেছে, এখন আমার কিছু বলার অধিকার নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসে কিছু করার নেই।

হুঁশিয়ার করে সরকারপ্রধান বলেন, কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। পুলিশের গায়ে হাত দেওয়া, গাড়ি ভাঙা… তখন আইন আপন গতিতে চলবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তারা দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবনপণ লড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় কীভাবে? মুক্তিযুদ্ধ তাদের এখন ভালো লাগে না।

তিনি বলেন, তারা বলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা অযোগ্য বলে কোটার সুবিধা নিয়ে চাকরি পায়। আমি বলব মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু সব সময়ই বিজয়ী। মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে কিন্তু তাদের পরাজিত করেছিল।

তিনি আরো বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা আইন মানবে না, আদালত মানবে না আইন মানবে না। সংবিধান কী তা তারা চেনে না। একটা সরকার কীভাবে চলে তা সম্পর্কে আন্দোলনকারীদের কোনো জ্ঞানই নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা (শিক্ষার্থীরা) এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?

শেখ হাসিনা বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তারা আইন মানে না, সংবিধান বোঝে না। আদালতে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করা যাবে না।

তিনি বলেন, মেধা কার কত সেটা পরীক্ষায় দেখা যায়, সবসময় সব কোটা পূর্ণও হয় না। তখন মেধা তালিকা থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয়।

২০১৮ সালে আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?

শেখ হাসিনা বলেন একসময় আমার বাসার পিয়ন ছিল। সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। পরে তাকে ধরা হয়েছে। খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে।

পিএসসির গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর অঢেল সম্পদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন ড্রাইভার কীভাবে এত কোটি কোটি টাকার মালিক হলো, সেটা কীভাবে বলবো? তাদের অপকর্ম আমরা ধরছি বলেই তো এখন জানতে পারছেন। এতদিন তো আপনারা জানতে পারেননি। প্রথমে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে, তাদের থামিয়েছি। এখন আমরা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছি, দুর্নীতবাজদের ধরছি। এটা চলতে থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আমাকে বলেন— এটা করলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে। আমি সেটা মনে করি না। যারা অপরাধ করছে, দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে; তাদেরকে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।

সরকারি চাকরিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নিয়মের যেসব ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে সেগুলোর সূচনা বিএনপির আমলে বলে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ বিসিএস হয় ২০০২ সালে। তখন পরীক্ষা-টরিক্ষা হতো না। হাওয়া ভবন থেকে তালিকা যেতো। ঢাকা কলেজে একটা বিশেষ কামরা ছিল। সেখানে বসে পরীক্ষা দিয়ে তাদের লোকজন চাকরি পেত। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনিয়ম তখন থেকেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় বলা হয়, এসব ধরতে গেলে ইমেজ নষ্ট হবে। আমি এটা মানি না। অন্যায় অবিচার ধরবই। তাদের ধরতেই হবে। ছেড়ে দিলে তো চলতেই থাকবে।

সরকার আন্তরিক বলেই সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ধরা পড়েছে বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দিন ধরে লেগে থেকে থেকে ধরতে পেরেছি।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে কেউ ভেনিফিশিয়ারি হলে তাদেরও ধরা হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে দেবে কে। অমুকের কাছে বিক্রি করেছি বললে এবং প্রমাণ করতে পারলে ধরা যাবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘুষ যে দেবে আর ঘুষ যে নেবে উভয়ই অপরাধী। যারা ফাঁস করে আর যারা কিনে উভয়ই সমান অপরাধী। সরকার কাউকে ছাড় দেবে না।