Dhaka রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে এতগুলো প্রাণ ঝরে যাবে কোনোদিন ভাবতে পারিনি : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে এতগুলো প্রাণ ঝরে যাবে কোনোদিন ভাবতে পারিনি বলে আক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে আন্দোলনকারীরা কী অর্জন করলো, দেশবাসী তার বিচার করবে। আন্দোলনের নামে যা ঘটেছে তা অবর্ণনীয়। আন্দোলনের নামে কতগুলো প্রাণ ঝরে গেলো। এমন ঘটনা ঘটবে তা ভাবতে পারিনি। এই সময় এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হবে, আর সেখানে এতগুলো তাজা প্রাণ যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কোটা সংস্কারের ইস্যুতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল করে সরকার। সব দাবি তো মানাই হলো। আমার দিক থেকে কোটা ইস্যুতে কোনো ঘাটতি রাখিনি আমি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না অপরাধটা কী আমাদের। যে ইস্যুটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে কে কী অর্জন করল সেটাই আমার প্রশ্ন। সেখানে এতগুলো তাজাপ্রাণ ঝরে গেল। সেগুলোতো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। আমি জানি আপনজন হারালে কী কষ্ট হয়। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না আর আমি তো সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি।

আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে কে কী অর্জন করলো, এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি এই সময়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো ঠিক করা যাবে, কিন্তু যে নিরীহ প্রাণগুলো ঝরে গেলো তার কী হবে?

আন্দোলন ঘিরে হতাহতদের ঘটনায় মর্মাহত জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা বুঝি আমি। তাই কারও বুক খালি হোক তা আমি কখনোই চাইনি। প্রতিটি মৃত্যর ঘটনা তদন্ত হবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে উল্লেখ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের সাথে দেখে। সেই বাংলাদেশে আবার রক্ত ঝরবে, কেন এই রক্ত ঝরা। আজকে আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।

সরকারপ্রধান বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা তো ভোগের বস্তু না। আমি তো আরাম-আয়েশ করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমি দিনরাত পরিশ্রম করেছি বাংলাদেশকে উন্নত করতে, আর সেটা আমি সফলভাবে করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদা কেন নষ্ট করা হলো, সেটার বিচারের ভার আমি দেশবাসীর কাছে দিচ্ছি।

বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা জুডিশিয়াল কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারো দাবির অপেক্ষায় আমি থাকিনি। আগেই জুডিশিয়াল কমিটি করে দিয়ে, আজকে আবার আমরা নির্দেশ দিয়েছি… আমরা একজন জজ সাহেবকে দিয়ে করেছিলাম। সেটা আমি বলেছি— আরও দুই জন জজ সাহেবকে দিয়ে, আরও দুজন লোকবল বৃদ্ধি করে দিয়ে এবং তাদের তদন্তের পরিধি বাড়ানো (হয়েছে)।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা আছে, বিশেষ করে বিদেশে; তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই। যেন এই ঘটনা যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত এবং যারা এর সঙ্গে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা (করা যায়)।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিজের কোনও ঘাটতি ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, এখানে আমার কোনও ঘাটতি ছিল না। যারা (আন্দোলনে) বসেছিল, আমি বার বার আলোচনা… তাদের দাবি মানা। আর তাদের দাবি মানবো কি, যেটা আমি করে দিয়েছি সেটাই তো, এটা তো আমারই করা, ইস্যুটা তো আমারই। আপিল করা হয়েছে আপিলেট ডিভিশনে। তারপরও এই যে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পেছনে টেনে নেওয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত, সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, তাদের চক্রান্ত বার বার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।’

অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদক হিসেবে ছিল ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে-অনলাইনে পরে থাকতে হবে : তারেককে ইঙ্গিত করে পাটওয়ারী

কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে এতগুলো প্রাণ ঝরে যাবে কোনোদিন ভাবতে পারিনি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৩:২৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে এতগুলো প্রাণ ঝরে যাবে কোনোদিন ভাবতে পারিনি বলে আক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে আন্দোলনকারীরা কী অর্জন করলো, দেশবাসী তার বিচার করবে। আন্দোলনের নামে যা ঘটেছে তা অবর্ণনীয়। আন্দোলনের নামে কতগুলো প্রাণ ঝরে গেলো। এমন ঘটনা ঘটবে তা ভাবতে পারিনি। এই সময় এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হবে, আর সেখানে এতগুলো তাজা প্রাণ যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কোটা সংস্কারের ইস্যুতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিল করে সরকার। সব দাবি তো মানাই হলো। আমার দিক থেকে কোটা ইস্যুতে কোনো ঘাটতি রাখিনি আমি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না অপরাধটা কী আমাদের। যে ইস্যুটা নেই সেটা নিয়ে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে কে কী অর্জন করল সেটাই আমার প্রশ্ন। সেখানে এতগুলো তাজাপ্রাণ ঝরে গেল। সেগুলোতো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। আমি জানি আপনজন হারালে কী কষ্ট হয়। মানুষ একটা শোক সইতে পারে না আর আমি তো সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি।

আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে কে কী অর্জন করলো, এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি এই সময়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো ঠিক করা যাবে, কিন্তু যে নিরীহ প্রাণগুলো ঝরে গেলো তার কী হবে?

আন্দোলন ঘিরে হতাহতদের ঘটনায় মর্মাহত জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা বুঝি আমি। তাই কারও বুক খালি হোক তা আমি কখনোই চাইনি। প্রতিটি মৃত্যর ঘটনা তদন্ত হবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা চেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে উল্লেখ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের সাথে দেখে। সেই বাংলাদেশে আবার রক্ত ঝরবে, কেন এই রক্ত ঝরা। আজকে আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।

সরকারপ্রধান বলেন, আমার কাছে ক্ষমতা তো ভোগের বস্তু না। আমি তো আরাম-আয়েশ করার জন্য ক্ষমতায় আসিনি। আমি দিনরাত পরিশ্রম করেছি বাংলাদেশকে উন্নত করতে, আর সেটা আমি সফলভাবে করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই মর্যাদা কেন নষ্ট করা হলো, সেটার বিচারের ভার আমি দেশবাসীর কাছে দিচ্ছি।

বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আমরা জুডিশিয়াল কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কারো দাবির অপেক্ষায় আমি থাকিনি। আগেই জুডিশিয়াল কমিটি করে দিয়ে, আজকে আবার আমরা নির্দেশ দিয়েছি… আমরা একজন জজ সাহেবকে দিয়ে করেছিলাম। সেটা আমি বলেছি— আরও দুই জন জজ সাহেবকে দিয়ে, আরও দুজন লোকবল বৃদ্ধি করে দিয়ে এবং তাদের তদন্তের পরিধি বাড়ানো (হয়েছে)।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা আছে, বিশেষ করে বিদেশে; তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই। যেন এই ঘটনা যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত এবং যারা এর সঙ্গে দোষী তাদের সাজার ব্যবস্থা (করা যায়)।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিজের কোনও ঘাটতি ছিল না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, এখানে আমার কোনও ঘাটতি ছিল না। যারা (আন্দোলনে) বসেছিল, আমি বার বার আলোচনা… তাদের দাবি মানা। আর তাদের দাবি মানবো কি, যেটা আমি করে দিয়েছি সেটাই তো, এটা তো আমারই করা, ইস্যুটা তো আমারই। আপিল করা হয়েছে আপিলেট ডিভিশনে। তারপরও এই যে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশকে পেছনে টেনে নেওয়ার এই চক্রান্তে যারা জড়িত, সেটা আপনাদের খুঁজে বের করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই একাত্তরে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, তাদের চক্রান্ত বার বার আমাদের দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে দুঃখের।’

অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদক হিসেবে ছিল ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান।