Dhaka বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ছাড়া অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠবে না : আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার বিষয়ে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ছাড়া অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠবে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমরা কখনো পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) লোক নিয়োগ করিনি। আমরা ব্যাংকিং ডিভিশন (আর্থিক বিভাগ) বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ এটার কোনো ভূমিকা ছিল না। তারাই (পতিত সরকার) আবার পরে এটা ফেরত এনেছে। তাতে আরও নানা রকমের সমস্যা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার জন্য আবশ্যক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমরা কখনো পলিটিক্যাল লোক নিয়োগ করিনি। আমরা ব্যাংকিং ডিভিশন (আর্থিক বিভাগ) বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ এটার কোনো ভূমিকা ছিল না। তারাই আবার পরে এটা ফেরত এনেছে। তাতে আরো নানা রকমের সমস্যা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যত বড় ধরনের সংস্কার হয়েছে, তা বিএনপির সময়েই হয়েছে। ব্যাংকগুলো শর্ট টার্ম ডিপোজিট নিয়ে লং টার্ম লেন্ডিং করছে। এসবের কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

তিনি আরো বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নতি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত সংস্কার করুক না কেন, তাতে কোনো লাভ নেই।

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নতি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত সংস্কার করুক না কেন, তাতে কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশে ক্যাপিটাল মার্কেট বলতে কিছু নেই। মনেটারি পলিসি ও ফিসক্যাল পলিসির মধ্যে একটা সমন্বয় করতে হবে। অটোমেশন করা গেলে স্বচ্ছতা বাড়বে। কারণ ভবিষ্যতের অর্থনীতি হচ্ছে ক্যাশলেস সোসাইটি। ফলে সম্পূর্ণরূপে অটোমেশনের দিকে যেতে হবে।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ১ কোটি চাকরি তৈরি করব ১৮ মাসে। কিভাবে করব— আইটি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশে জনশক্তি দিয়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা কথা চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসতে হবে। এত লুটপাটের পরেও ব্যাংকগুলো টিকে আছে, এটাও অবাক করার মতো বিষয়। অর্থনীতির সংস্কার বিএনপির সময় অনেক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার বলে এখন আর কিছু নেই। আমাদের এখানে স্বল্প মেয়াদি আমানত নিয়ে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করছে। এভাবে ব্যাংক খাত যে টিকে আছে এটাই একটা আশ্চর্যজনক বিষয়। অর্থনীতির খারাপ অবস্থার জন্য দেশ থেকে অর্থ-পাচার একটা বড় বিষয়। আবার এই ব্যবস্থাপনাও একটা বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজি-বাজারের সমন্বয় করে চলতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পুঁজি-বাজার থেকে তুলতে হবে। আর দেশের দুর্নীতি কমাতে হলে অটোমেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সশরীরে উপস্থিতি যত কমানো যাবে, দুর্নীতি তত কম হবে। ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তুলতে হবে।

আমির খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কখনোই রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমাদের সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হয়েছিল। পরে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। আমরা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতেও রাজনৈতিক নিয়োগ দিইনি।

তিনি আরও বলেন, ২০০৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইনে যে সংস্কার করা হয়েছিল, তার সুফল দেশ পরবর্তীকালে পেয়েছে। আর্থিক খাতের বড় সংস্কারগুলো বিএনপি সরকারের সময়েই হয়েছে।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে আর্থিক, কাঠামোগত, আইনি ও প্রশাসনিক সব পর্যায়েই স্বাধীনতা দিতে হবে।’’ “গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের নিয়োগ স্বচ্ছ হতে হবে, ব্যাংকের নীতি নির্ধারণ থেকে জনবল নিয়োগ পর্যন্ত স্বাধীনতা থাকতে হবে, তবে জবাবদিহিও থাকতে হবে।

সভায় পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রিন্সিপাল অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আখতার হোসেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকসের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার, এলএফএমইএবি প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ, প্রিন্সিপাল ইকোনমিস্ট ড. আশিকুর রহমান প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ছাড়া অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠবে না : আমীর খসরু

প্রকাশের সময় : ০৯:৩২:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতার বিষয়ে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ছাড়া অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠবে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমরা কখনো পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) লোক নিয়োগ করিনি। আমরা ব্যাংকিং ডিভিশন (আর্থিক বিভাগ) বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ এটার কোনো ভূমিকা ছিল না। তারাই (পতিত সরকার) আবার পরে এটা ফেরত এনেছে। তাতে আরও নানা রকমের সমস্যা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার জন্য আবশ্যক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমরা কখনো পলিটিক্যাল লোক নিয়োগ করিনি। আমরা ব্যাংকিং ডিভিশন (আর্থিক বিভাগ) বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ এটার কোনো ভূমিকা ছিল না। তারাই আবার পরে এটা ফেরত এনেছে। তাতে আরো নানা রকমের সমস্যা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যত বড় ধরনের সংস্কার হয়েছে, তা বিএনপির সময়েই হয়েছে। ব্যাংকগুলো শর্ট টার্ম ডিপোজিট নিয়ে লং টার্ম লেন্ডিং করছে। এসবের কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

তিনি আরো বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নতি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত সংস্কার করুক না কেন, তাতে কোনো লাভ নেই।

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নতি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত সংস্কার করুক না কেন, তাতে কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশে ক্যাপিটাল মার্কেট বলতে কিছু নেই। মনেটারি পলিসি ও ফিসক্যাল পলিসির মধ্যে একটা সমন্বয় করতে হবে। অটোমেশন করা গেলে স্বচ্ছতা বাড়বে। কারণ ভবিষ্যতের অর্থনীতি হচ্ছে ক্যাশলেস সোসাইটি। ফলে সম্পূর্ণরূপে অটোমেশনের দিকে যেতে হবে।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ১ কোটি চাকরি তৈরি করব ১৮ মাসে। কিভাবে করব— আইটি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশে জনশক্তি দিয়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা কথা চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরকেও এগিয়ে আসতে হবে। এত লুটপাটের পরেও ব্যাংকগুলো টিকে আছে, এটাও অবাক করার মতো বিষয়। অর্থনীতির সংস্কার বিএনপির সময় অনেক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার বলে এখন আর কিছু নেই। আমাদের এখানে স্বল্প মেয়াদি আমানত নিয়ে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করছে। এভাবে ব্যাংক খাত যে টিকে আছে এটাই একটা আশ্চর্যজনক বিষয়। অর্থনীতির খারাপ অবস্থার জন্য দেশ থেকে অর্থ-পাচার একটা বড় বিষয়। আবার এই ব্যবস্থাপনাও একটা বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজি-বাজারের সমন্বয় করে চলতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পুঁজি-বাজার থেকে তুলতে হবে। আর দেশের দুর্নীতি কমাতে হলে অটোমেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সশরীরে উপস্থিতি যত কমানো যাবে, দুর্নীতি তত কম হবে। ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তুলতে হবে।

আমির খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে কখনোই রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমাদের সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হয়েছিল। পরে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। আমরা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতেও রাজনৈতিক নিয়োগ দিইনি।

তিনি আরও বলেন, ২০০৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইনে যে সংস্কার করা হয়েছিল, তার সুফল দেশ পরবর্তীকালে পেয়েছে। আর্থিক খাতের বড় সংস্কারগুলো বিএনপি সরকারের সময়েই হয়েছে।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে আর্থিক, কাঠামোগত, আইনি ও প্রশাসনিক সব পর্যায়েই স্বাধীনতা দিতে হবে।’’ “গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরের নিয়োগ স্বচ্ছ হতে হবে, ব্যাংকের নীতি নির্ধারণ থেকে জনবল নিয়োগ পর্যন্ত স্বাধীনতা থাকতে হবে, তবে জবাবদিহিও থাকতে হবে।

সভায় পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রিন্সিপাল অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আখতার হোসেন, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকসের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার, এলএফএমইএবি প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ, প্রিন্সিপাল ইকোনমিস্ট ড. আশিকুর রহমান প্রমুখ।