Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেন্দ্রীয় বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটি স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারাদেশের সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।

রোববার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর শাহবাগে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ডাকা এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

রিফাত রশিদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে দেশজুড়ে অন্যায় করা হচ্ছে। এজন্য আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারাদেশের সকল কমিটির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সামনে আমরা সংগঠনটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্য আবার বসবো এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। জুলাইয়ের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কাজ আমরা করবো না, করতে চাইও না।

এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জুলাই আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে আমাদের ব্যানার ব্যবহার করে যারা অপকর্ম করার চেষ্টা করবে, আপনারা তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিন। আমরা আমাদের দিক থেকে সব ধরনের সাহায্য করবো। আমাদের ব্যানার দিয়ে কারো অপকর্ম করার সুযোগ নেই।

রিফাত রশিদ বলেন, চলমান চাঁদাবাজির ঘটনায় আমরা দায় স্বীকার করেছি। আমরা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ধরনের কাজ করে যাবো। সামনের দিনগুলোতে আমাদের কর্মকাণ্ডে আপনারা তা দেখতে পাবেন।

গত কয়েক দিন ধরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যেই গতকাল রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচজন আটক হন, যারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা বলে দাবি করেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কমিটি সারাদেশের কমিটি স্থগিতের মতো বড় সিদ্ধান্ত নিলো।

২০২৪ সালে কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ)। এটি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

২০২৪ সালের ১ জুলাই সংগঠনটি সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টির পরপরই আন্দোলন সফলের জন্য ৮ জুলাই সংগঠনটি ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে, যার মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন। আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পর ৩ আগস্ট সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক দল গঠন করে, যার মধ্যে ৪৯ জন সমন্বয়ক ও ১০৯ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাধিক সমন্বয়ককে এই সংগঠনের নেতৃত্বে দেখা গেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সারজিস আলম, ইংরেজি বিভাগের হাসনাত আবদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের আসিফ মাহমুদ ও ভূগোল বিভাগের আবু বাকের মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের খান তালাত মাহমুদ রাফি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলসহ অন্যরা।

জুলাই বিপ্লবের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে গঠন হয় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। রিফাত রশিদসহ অন্যরা এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারটি জিইয়ে রেখেছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

কেন্দ্রীয় বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটি স্থগিত

প্রকাশের সময় : ০৭:৪৮:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারাদেশের সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।

রোববার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর শাহবাগে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ডাকা এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

রিফাত রশিদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে দেশজুড়ে অন্যায় করা হচ্ছে। এজন্য আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত সারাদেশের সকল কমিটির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সামনে আমরা সংগঠনটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্য আবার বসবো এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। জুলাইয়ের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কাজ আমরা করবো না, করতে চাইও না।

এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জুলাই আন্দোলনের এই সমন্বয়ক বলেন, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে আমাদের ব্যানার ব্যবহার করে যারা অপকর্ম করার চেষ্টা করবে, আপনারা তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিন। আমরা আমাদের দিক থেকে সব ধরনের সাহায্য করবো। আমাদের ব্যানার দিয়ে কারো অপকর্ম করার সুযোগ নেই।

রিফাত রশিদ বলেন, চলমান চাঁদাবাজির ঘটনায় আমরা দায় স্বীকার করেছি। আমরা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ধরনের কাজ করে যাবো। সামনের দিনগুলোতে আমাদের কর্মকাণ্ডে আপনারা তা দেখতে পাবেন।

গত কয়েক দিন ধরেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যেই গতকাল রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচজন আটক হন, যারা নিজেদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা বলে দাবি করেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কমিটি সারাদেশের কমিটি স্থগিতের মতো বড় সিদ্ধান্ত নিলো।

২০২৪ সালে কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ)। এটি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

২০২৪ সালের ১ জুলাই সংগঠনটি সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টির পরপরই আন্দোলন সফলের জন্য ৮ জুলাই সংগঠনটি ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে, যার মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন। আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পর ৩ আগস্ট সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক দল গঠন করে, যার মধ্যে ৪৯ জন সমন্বয়ক ও ১০৯ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাধিক সমন্বয়ককে এই সংগঠনের নেতৃত্বে দেখা গেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সারজিস আলম, ইংরেজি বিভাগের হাসনাত আবদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের আসিফ মাহমুদ ও ভূগোল বিভাগের আবু বাকের মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের খান তালাত মাহমুদ রাফি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলসহ অন্যরা।

জুলাই বিপ্লবের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে গঠন হয় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। রিফাত রশিদসহ অন্যরা এখনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারটি জিইয়ে রেখেছেন।