নিজস্ব প্রতিবেদক :
একাত্তরের পরাজিত শক্তি দেশের বিজয়ের ইতিহাস মুছে দিয়েছিল মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাঁথা কেউ যেন আর বিকৃত করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মিলনায়তনে চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা শিল্পকর্ম নিয়ে আয়োজিত ‘শাহাবুদ্দিন : এ রেট্টোস্পেক্টিভ (১৯৭৩-২০২৩)’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ জাতির পিতাকে হত্যা করা পর স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সবই মুছে গিয়েছিল। আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখকরা তাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে এ চেতনাকে ধরে রেখেছিলেন। আমরা রাজনীতিবিদরা রাজনীতির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলাম। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাঙালি, জাতির পিতা আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। শিল্পী শাহাবুদ্দিন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার তুলিতে উঠে আসে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
দেশের দারিদ্র্যের ছবি অনেকটাই পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, পরাজিত শক্তি দেশের বিজয়ের ইতিহাস মুছে দিয়েছিল। আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখকরা তাদের লেখনীর মধ্য দিয়ে এ চেতনাকে ধরে রেখেছিলেন। আমরা রাজনীতিবিদরা রাজনীতির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলাম।
শিল্পীদের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, শিল্পীর মনের আবেগ যখন বিকশিত হয়, তখন কোনো বাধাই বাধা মানে না। তার কাছে কোনো না কোনোভাবেই সেটা প্রকাশ পায়। যাক আজকে আমি খুব আনন্দিত যে, শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে তার যে প্রকৃতিকে তুলে ধরা, দেশের মানুষের অবস্থা তুলে ধরা, সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তুলে ধরা, এগুলো বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় যুব সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং তার সাফল্য কামনা করি।
সরকারপ্রধান বলেন, চিত্রশিল্পীদের তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠে আমাদের প্রকৃতি, আমাদের দেশের নানা চিত্র। আমাদের ইতিহাস যেমন ফুটে উঠে, সেইসঙ্গে দরিদ্র মানুষের দৃশ্যগুলো উঠে আসে। আমি ’৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পী একটা সম্মেলন করি। সেখানের কয়েকটি শিল্পকর্ম আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমি নিজেও একটি কিনে নিই। তার সঙ্গে কয়েকটি উপহারও পাই। আমাদের পরিকল্পনা কমিশনে, যেখানে বসে উন্নয়নের পরিকল্পনা করি, সেখানে সেই চিত্রটি লাগিয়ে রেখেছি। আরেকটি আছে গণভবনে। এগুলো আমাদের সঙ্গেই থাকে। আমি যদি না থাকি, এগুলো তুলে নিয়ে যাব কোনো সন্দেহ নাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি রেখেছি কেন জানেন? সেখানে কতগুলো ছোট ছোট বাচ্চা রাস্তায় পড়ে আছে। আমি সেখানে বসেই সব সময় আমার সঙ্গে যারা কাজ করে তাদের বলি, এই চিত্র আমি বাংলাদেশ থেকে বদলাতে চাই। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পেরেছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিল্পীর তুলির আঁচড় অনেক শক্তিশালী।
শাহাবুদ্দীনের আঁকা ছবি থেকে তরুণ প্রজন্মও স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করার প্রেরণা পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শিল্পীকে কখনো দমানো যায় না। শিল্পীর আবেগ কোনো বাধা মানে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জনগণের সামনে তুলে ধরা যুবসমাজের সামনে তুলা ধরা বড় কাজ। শাহাবুদ্দীন আহমেদকে ধন্যবাদ জানাই। তার শিল্পকর্ম থেকে জনগণ দেশপ্রেম সম্পর্কে জানতে পারবে। ধানমন্ডির বাড়ি থেকেই ৬ দফা-স্বাধীনতার ঘোষণা- আর এখানেই তাকে হত্যা করা হয়। তার সেই বাড়িটিকে জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি ১৯৯৪ সালে। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হিসেবে। সেখানে রাখা হয়েছে শাহাবুদ্দীনের আঁকা ছবি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের পর নির্বাসিত সময়ে বিচার চাওয়ার অধিকারও আমাদের ছিল না। রিফিউজি হিসেবে ছিলাম। বাবা-মা-ভাইয়ের হত্যার বিচার পাওয়ার অধিকার আমাদের ছিল না। কারণ খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল। বিচার পাওয়ার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছিল। তদন্ত কমিশনকে তখন জিয়াউর রহমান দেশে আসতে দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে আমি আমার ফুফুর বাড়িতে থাকতাম। পরে আমার স্বামীর কোয়ার্টারে থাকতাম। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, জাতির পিতা তার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তাই তার ওই সম্পত্তি তো জনগণেরই। তাই আমরা আমাদের ধানমন্ডির বাড়িটি ১৯৯৪ সালে মিউজিয়াম বানিয়েছি।
তিনি বলেন, যে বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিয়েছিলেন, যেই বাড়ি থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, সেই বাড়িতেই জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাই এই সম্পত্তিটা আমরা জনগণকে উৎসর্গ করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট করে এই বাড়িটি আমরা দান করে দিয়েছি। যদিও ঢাকা শহরে আমাদের দুই বোনের থাকার কোনো বাড়ি ছিল না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সেখানে সিঁড়িতে জাতির পিতা শহীদ হয়েছেন, সেখানে সাহাবুদ্দিনের আঁকা ছবি রেখেছি। কারণ শিল্পীর আঁকা ছবি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায়। সেইসঙ্গে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়। একটা চেতনাও জাগ্রত হয়। আর আমাদের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।