Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেউ যেন আর ভোটের অধিকার নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে না পারে : তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (১০ মে) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়— যে সরকার জনগণের কাছে জবাদিহি করতে বাধ্য থাকবে। তবে কেউ যেন আপনার-আমার আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার কুক্ষিত করে রাখার ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেজন্য জনগণের দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকটি মানুষৃ এই ঘরে যে মানুষগুলো আমরা উপস্থিত আছি, এই ঘরের বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা যে যেখানেই আছি না কেন, যে যার অবস্থান থেকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। আপনাদের সবার কাছে আমি আজ সেই আহ্বান জানাই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিগত দশক ধরে যারা অথবা যে দলটি ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষন চালিয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকামী জনগনের কাছে তারা এখন অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত। দেশের গণতন্ত্রকামী জনগন বর্তমানে দুইটা বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে একমত। তা হলো- বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এবং গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এই দ্ইুটা বিষয়ে জনগণ আর কোনো আপস করতে রাজি নয়। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটি আমি উপলব্ধি করি।

তারেক রহমান বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- যারা সংবিধান বারবার লঙ্ঘন করেছে, দেশে অবৈধ সংসদ এবং সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের জনগন, সরকার এবং রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম-খুন-অপহরণ-দুর্নীতি-লুটপাট-টাকা পাচার-বর্বর আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ। বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে এখানে একটি কথা রয়ে গেছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগনের কাছে যাতে স্বচ্ছ ধারণা থাকে এই কারণে বিএনপি প্রথম থেকে এই সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা-পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বারবার জানিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যদি জনমনে থাকে তাহলে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থাকে না।

ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর তাদের দুঃশাসন ও দুষ্কর্মসমূহের চিত্র এবং জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলী বেশি করে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী শাসনের দেড় দশকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর-উপাসনালয়ে ঘটা ঘটনাবলী নিয়েও গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না।

আগামী দিনে বিএনপি জনগণের রায়ে ইনশাল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী শাসনের দেড় দশকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় ‘নাগরিক তদন্ত কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে দেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান গর্বিত পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রেখেই বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র ও সমাজে সমান এবং ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে- এটি বিএনপির নীতি।

তারেক রহমান বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গৌতম বুদ্ধ তার অনুসারীদের জন্য ঘোষণা করেছিলেন পঞ্চশীল বা ৫টি মৌলিক শিক্ষা। এরকম প্রত্যেক ধর্মে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা ও মৌলিক শিক্ষা রয়েছে। বিশ্বে সত্য, ন্যায় ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হলো প্রতিটি ধর্মের মূল লক্ষ্য। একজন মানুষ বা নাগরিক হিসেবে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সমাজ বাস্তবায়নের জন্য ভূমিকা রাখা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। সব ধর্মের ও মতের সব মানুষ মিলে যেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। এজন্য রাজনীতিতে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও চর্চা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দল-মত নির্বিশেষে সবার নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র এবং সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে এখনো গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে যারা বা যে দলটি গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ কায়েম করেছিল তারা কিন্তু অপশক্তি হিসেবেই চিহ্নিত। দেশের জনগণ তাদের অপশক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। ১৯৭১, ৭৫-এর ৭ নভেম্বর, ৯০ এবং ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় এখানে দেশের মানুষ দুটি বিষয়ে একমত। এক, বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে। দুই, গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক তাঁবেদার অপশক্তি আর যাতে মাথাচড়া দিতে না পারে। এই দুই বিষয়ে দেশের জনগণ আর কোনো আপস মানতে রাজি নয় বলে আমি মনে করি। বিএনপিসহ দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে ঐকমত্য।

তারেক রহমান বলেন, আমাদের বক্তব্য হলো- যারা বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বা জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণ কোনোভাবেই আয়না ঘর স্থাপনকারী, গুম-খুন-অপহরণ ও দুর্নীতি-লুটপাটকারীদের পুনর্বাসন চায় না দেশের মানুষ। আমরাও দল হিসেবে মতামত দিয়েছি। বিএনপিসহ সব দল এই সরকারকে সফল দেখতে চায়। এজন্য কিন্তু আমরা সরকারের কাছে একটি পথনকশা ঘোষণার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছি। স্বচ্ছ পথনকশা থাকলে জনগণের মাঝে অস্পষ্টতা থাকে না।

গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিশ্বের কোথায় কখন কী হয় আমরা মুহূর্তেই জানতে ও দেখতে পারি। দেশের ফ্যাসিবাদ পতনের পর এখন গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, কুকর্ম কিন্তু আলোচনায় রাখা দরকার। ফ্যাসিবাদের অপকর্ম যদি নিয়মিত প্রচার করতে পারি তাহলে মানুষ সচেতন হবে এবং ফ্যাসিবাদী বিরোধী দলগুলোর মাঝে কেউ বিভেদ উসকে দিতে পারবে না। ফ্যাসিবাদী শাসনের দীর্ঘ দেড় দশকে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি নাটক ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালিয়ে ফ্যাসিস্টরা তাদের লুটপাটের ঘটনা আড়াল করতে চেয়েছিল। তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচার বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে ঘিরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করত। এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে পারে, যা আগামীতে রাজনৈতিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। কেননা, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বিচার হলে আগামীতে কেউ এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে না।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে রাষ্ট্র ও সমাজে নারী ও শিশু এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠী নিরাপদ বোধ করে না সেই রাষ্ট্র কোনো ভালো রাষ্ট্র হতে পারে না। সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু এটি কোনো পরিচয় হতে পারে না। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতিটি অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে এটিই বিএনপি মনে করে। বিএনপি আগামীতে জনগণের ভোটের মাধ্যমে এমন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যারা জবাদিহিতা করবে। আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সুভাষ চন্দ্রা চাকমার পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, অ্যাডভোকেট নিকোলা চাকমা, পার্থ প্রতিম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা, রাঙাপানি অনাথ শিশু সদনের ভিক্ষু এম শ্রী ইন্দ্র বংশ, আর্যসুখ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সুধর্ম ভিক্ষু, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত মৈত্রী রতন ভিক্ষু এবং আনন্দ প্রিয় শ্রমন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

কেউ যেন আর ভোটের অধিকার নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে না পারে : তারেক রহমান

প্রকাশের সময় : ০৯:২৫:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (১০ মে) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়— যে সরকার জনগণের কাছে জবাদিহি করতে বাধ্য থাকবে। তবে কেউ যেন আপনার-আমার আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার কুক্ষিত করে রাখার ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেজন্য জনগণের দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকটি মানুষৃ এই ঘরে যে মানুষগুলো আমরা উপস্থিত আছি, এই ঘরের বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা যে যেখানেই আছি না কেন, যে যার অবস্থান থেকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। আপনাদের সবার কাছে আমি আজ সেই আহ্বান জানাই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিগত দশক ধরে যারা অথবা যে দলটি ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষন চালিয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকামী জনগনের কাছে তারা এখন অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত। দেশের গণতন্ত্রকামী জনগন বর্তমানে দুইটা বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে একমত। তা হলো- বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এবং গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এই দ্ইুটা বিষয়ে জনগণ আর কোনো আপস করতে রাজি নয়। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এটি আমি উপলব্ধি করি।

তারেক রহমান বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- যারা সংবিধান বারবার লঙ্ঘন করেছে, দেশে অবৈধ সংসদ এবং সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের জনগন, সরকার এবং রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম-খুন-অপহরণ-দুর্নীতি-লুটপাট-টাকা পাচার-বর্বর আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ। বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে এখানে একটি কথা রয়ে গেছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগনের কাছে যাতে স্বচ্ছ ধারণা থাকে এই কারণে বিএনপি প্রথম থেকে এই সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা-পথনকশা ঘোষণার আহ্বান বারবার জানিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যদি জনমনে থাকে তাহলে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থাকে না।

ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর তাদের দুঃশাসন ও দুষ্কর্মসমূহের চিত্র এবং জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলী বেশি করে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদী শাসনের দেড় দশকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর-উপাসনালয়ে ঘটা ঘটনাবলী নিয়েও গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না।

আগামী দিনে বিএনপি জনগণের রায়ে ইনশাল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী শাসনের দেড় দশকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় ‘নাগরিক তদন্ত কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে দেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান গর্বিত পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। এমন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রেখেই বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র ও সমাজে সমান এবং ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে- এটি বিএনপির নীতি।

তারেক রহমান বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গৌতম বুদ্ধ তার অনুসারীদের জন্য ঘোষণা করেছিলেন পঞ্চশীল বা ৫টি মৌলিক শিক্ষা। এরকম প্রত্যেক ধর্মে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা ও মৌলিক শিক্ষা রয়েছে। বিশ্বে সত্য, ন্যায় ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা হলো প্রতিটি ধর্মের মূল লক্ষ্য। একজন মানুষ বা নাগরিক হিসেবে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সমাজ বাস্তবায়নের জন্য ভূমিকা রাখা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। সব ধর্মের ও মতের সব মানুষ মিলে যেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি। এজন্য রাজনীতিতে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও চর্চা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। দল-মত নির্বিশেষে সবার নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হলে নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র এবং সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বে এখনো গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে যারা বা যে দলটি গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ কায়েম করেছিল তারা কিন্তু অপশক্তি হিসেবেই চিহ্নিত। দেশের জনগণ তাদের অপশক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। ১৯৭১, ৭৫-এর ৭ নভেম্বর, ৯০ এবং ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় এখানে দেশের মানুষ দুটি বিষয়ে একমত। এক, বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে। দুই, গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক তাঁবেদার অপশক্তি আর যাতে মাথাচড়া দিতে না পারে। এই দুই বিষয়ে দেশের জনগণ আর কোনো আপস মানতে রাজি নয় বলে আমি মনে করি। বিএনপিসহ দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে ঐকমত্য।

তারেক রহমান বলেন, আমাদের বক্তব্য হলো- যারা বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বা জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণ কোনোভাবেই আয়না ঘর স্থাপনকারী, গুম-খুন-অপহরণ ও দুর্নীতি-লুটপাটকারীদের পুনর্বাসন চায় না দেশের মানুষ। আমরাও দল হিসেবে মতামত দিয়েছি। বিএনপিসহ সব দল এই সরকারকে সফল দেখতে চায়। এজন্য কিন্তু আমরা সরকারের কাছে একটি পথনকশা ঘোষণার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছি। স্বচ্ছ পথনকশা থাকলে জনগণের মাঝে অস্পষ্টতা থাকে না।

গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিশ্বের কোথায় কখন কী হয় আমরা মুহূর্তেই জানতে ও দেখতে পারি। দেশের ফ্যাসিবাদ পতনের পর এখন গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, কুকর্ম কিন্তু আলোচনায় রাখা দরকার। ফ্যাসিবাদের অপকর্ম যদি নিয়মিত প্রচার করতে পারি তাহলে মানুষ সচেতন হবে এবং ফ্যাসিবাদী বিরোধী দলগুলোর মাঝে কেউ বিভেদ উসকে দিতে পারবে না। ফ্যাসিবাদী শাসনের দীর্ঘ দেড় দশকে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি নাটক ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালিয়ে ফ্যাসিস্টরা তাদের লুটপাটের ঘটনা আড়াল করতে চেয়েছিল। তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচার বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে ঘিরে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করত। এ বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে পারে, যা আগামীতে রাজনৈতিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। কেননা, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার বিচার হলে আগামীতে কেউ এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে না।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে রাষ্ট্র ও সমাজে নারী ও শিশু এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠী নিরাপদ বোধ করে না সেই রাষ্ট্র কোনো ভালো রাষ্ট্র হতে পারে না। সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু এটি কোনো পরিচয় হতে পারে না। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশি। প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতিটি অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে এটিই বিএনপি মনে করে। বিএনপি আগামীতে জনগণের ভোটের মাধ্যমে এমন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যারা জবাদিহিতা করবে। আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সুভাষ চন্দ্রা চাকমার পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, সাথী উদয় কুসম বড়ুয়া, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, অ্যাডভোকেট নিকোলা চাকমা, পার্থ প্রতিম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা, রাঙাপানি অনাথ শিশু সদনের ভিক্ষু এম শ্রী ইন্দ্র বংশ, আর্যসুখ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সুধর্ম ভিক্ষু, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত মৈত্রী রতন ভিক্ষু এবং আনন্দ প্রিয় শ্রমন।