কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাসশ্রমিকদের মারধরের ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কুষ্টিয়া থেকে ফরিদপুর ও খুলনাসহ তিন রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাস শ্রমিক ও মালিক গ্রুপ। হঠাৎ ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। হঠাৎ বাস চলাচল বন্ধের কারণে অনেকেই বাস কাউন্টারে এসে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়।
হামিদুল ইসলাম বলেন, জরুরি কাজে খুলনায় যেতে হবে। এখন টিকিট কাউন্টারে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। হঠাৎ করে বাস বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছি। দূরের পথে এখন কীভাবে যাব, সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি। আমার মতো অসংখ্য যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।
হামিদা বেগম নামে আরেক যাত্রী বলেন, খুলনায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রওনা হয়ে বাস কাউন্টারে গেলাম, কিন্তু বাস চলাচল বন্ধ। বাস বন্ধ করা মানেই আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। কুষ্টিয়ায় মাঝেমধ্যে ধর্মঘট করা হয়। এতে চরম ভোগান্তি হয় মানুষের। বাস বন্ধ থাকায় ট্রেনে যেতে হবে।
কুষ্টিয়া মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল আলম জানান, হঠাৎ করেই ঝিনাইদহ মোটর শ্রমিক নেতারা দাবি করেন কুষ্টিয়া থেকে ফরিদপুর রুটে তাদের গাড়ী চলতে দিতে হবে। এটা একটা অনৈতিক দাবি, তাই কুষ্টিয়ার মালিক শ্রমিকরা এই দাবি না মানায় গত ৩ মার্চ থেকে কুষ্টিয়ার গড়াই পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস তারা ঝিনাইদহের ওপর দিয়ে চলতে বাধা সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও কোন লাভ হয়নি। পরে কালিগঞ্জের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার গাড়ীগুলো কালিগঞ্জ থেকে খুলনা রুটে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মোতাবেক আমরা কিছু গাড়ি কালিগঞ্জে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু গতকাল রাতে ঝিনাইদহ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে গাড়িবহর নিয়ে ঝিনাইদহ থেকে কালিগঞ্জ গিয়ে কুষ্টিয়ার গাড়ির শ্রমিকদের ওপর হামলা করে মারধর করা হয়।
তিনি বলেন, এই হামলার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বাসশ্রমিক-মালিক গ্রুপ উভয় পক্ষ মিলে আজ ভোর ছয়টা থেকে কুষ্টিয়া হতে খুলনা ও ফরিদপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ খুলনা থেকে বাস কুষ্টিয়ায় আসবে না, কুষ্টিয়া থেকে বাস খুলনায় যাবে না। একই সঙ্গে ফরিদপুর রুটেও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাসের স্টাফদের মারধরের ঘটনায় জড়িতদের আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে পুলিশ-প্রশাসন গ্রেফতার না করলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এসব বিষয় লিখিত এবং মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এদিকে বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, ঝিনাইদহ মোটর শ্রমিক নেতারা বাসের নতুন টিপ চাচ্ছেন। এটা নিয়েই মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে আমরা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বসি। এ সময় সেখানেই তারা বাসের স্টাফদের মারধর করে। এতে বাস শ্রমিক-মালিক গ্রুপ উভয় মিলে বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খুলনা থেকে কুষ্টিয়ায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে ফরিদপুর রুটেও বাস চলাচল বন্ধ। বাসের স্টাফদের মারধরের ঘটনায় জড়িতদের আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিরসনের জন্য আমরা দুই জেলার বাস মালিক এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।