ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কুমার নদে স্পিডবোটে করে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। সাউন্ড বক্সে উচ্চস্বরে গানের তালে তালে তারা রামদা ও চাইনিজ কুড়ালের মতো অস্ত্র প্রদর্শন করে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ৮ কিশোর-তরুণকে রামদা ও চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা যায়। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালালেও কাউকে আটক করতে বা শনাক্ত করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার ভাঙ্গা থানার ওসি মো. আশরাফ হোসেন এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ভাঙ্গা উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের প্রায় চার কিলোমিটার অংশে অন্তত ২০টি স্পিডবোট ও অর্ধশতাধিক ট্রলার নিয়ে কিশোর ও তরুণরা এই মহড়া দেয়। বাইসাখালি, চণ্ডীদাসদী, আতাদী ও পূর্ব সদরদী এলাকা জুড়ে এই কর্মকাণ্ড চলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শত বছর ধরে বিশ্বকর্মা পূজার দিন কুমার নদে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হতো। ২০০৫ সালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার পর এই আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে আবার এটি চালু হলেও রাজনৈতিক আধিপত্যের কারণে ২০১৮ সাল থেকে তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর স্থানীয় কিশোর-তরুণরা ট্রলার ও স্পিডবোট দিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে এই দিনে উৎসব পালন করে। তবে এ বছরই প্রথম সেখানে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা গেল।
ভাইরাল হওয়া দুটি ভিডিওতে এই মহড়ার চিত্র ধরা পড়েছে। ১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্পিডবোট ও ট্রলারে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে কিছু কিশোর দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করছে। আরেকটি ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা একটি ট্রলার নিয়ে তাদের ধাওয়া করলে তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিপন বলেন, কুমার নদে নৌকা বাইচের কথা থাকলেও কোনো বাইচ অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে ট্রলার ও স্পিডবোটে চড়ে নাচ-গান ও নানা অঙ্গভঙ্গিতে কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যায়। পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের আটকের চেষ্টা করলে তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়।
ভাঙ্গা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জগদীশ মালো বলেন, নৌকা বাইচ বন্ধ থাকলেও প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পূজার দিন কিশোর-তরুণরা মহড়া দেয়। তবে কোন স্পিডবোট থেকে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তাদের আটকের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে তারা আমাদের এলাকার নয়। ধারণা করা হচ্ছে মাদারীপুরের রাজৈর থেকে ট্রলার, স্পিডবোট ভাড়া করে এখানে আসে। বিষয়টি রাজৈর থানায় জানানো হয়েছে। তাদের আটকের জোর চেষ্টা করা হচ্ছে।