গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কালীগঞ্জে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উস্কানিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর হামলার ঘটনায় ১৫ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন আলমগীর হোসেনকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে আনসার সদস্য এনায়েত উল্লাহ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
ওইদিন দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাতজন আহত হয়।
আহতরা হলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান, তার গাড়ি চালক রুবেল, আনসার সদস্য আকরাম ও রেজোয়ান, বিআরডিবি অফিসের লিটন আহমেদ, প্রকৌশলী অফিসের রাসেল ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের প্রোগ্রাম উজ্জ্বল কুমার শীল।
আসামিরা হলেন মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন (৪৮), মো. জাকির (৪৭), আকরাম হোসেন (৪৮), সিদ্দিকুর রহমান (৪৩), মো. কাজল (৩৪), মো. কামাল হোসেন ফরাজী, মো. হেকিম, ফয়সাল ফকির (৪৫), মো. কালাম, জাহাঙ্গীর মেম্বার, রুবেল পালোয়ান (৩২), মনির (৩৮), জাহিদুল (২৮), সিরাজ (৪৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ ময়েজ উদ্দিনের ৩৯তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুরে কালীগঞ্জ আর.আর.এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্মরণসভার আয়োজন করে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। দুপুরে বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়। কিন্তু মোক্তারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরের ভেতরে জড়ো হয়। এ সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় কন্যাদিবস উপলক্ষে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠান চলছিল। একপর্যায়ে বাইরে জটলা থাকায় আনসার সদস্যরা ওইসব নেতাকর্মীদের গাড়ি চত্বরের বাইরে নিয়ে রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু নেতাকর্মীরা এতে উত্তেজিত হন।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান সেখানে যান। পরে চেয়ারম্যানকে ডেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ভিআইপি নেতারা উপজেলা পরিষদে আসবেন বলে চেয়ারম্যানের নেতাকর্মীদের গাড়ি বাইরে নিয়ে রাখতে বলেন ইউএনও। এতে চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনওর সঙ্গেই উচ্চস্বরে কথা বলেন। একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা ইউএনওসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘিরে ফেলেন। একপর্যায়ে ইউএনওর ওপর হামলা চালায় এবং তার শার্ট ধরে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় আনসার সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাঁধা দিলে তাদের ওপরও হামলা চালান নেতাকর্মীরা। এতে ইউএনওসহ সাতজন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে নেতাকর্মীরা ইউএনও অফিস এবং উপজেলা নির্বাচন অফিসে ইটপাটকেল ছুড়ে জানালার গ্লাস ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
রোববার (১ অক্টোবর) সকালে মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের মোবাইলে একাধিক বার ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
কালীগঞ্জ ইউএনও আজিজুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান এবং তার নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে জটলার সৃষ্টি করে অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল রাখেন। তাদের গাড়ি চত্বরের বাইরে খোলা স্থানে রাখার অনুরোধ করার পর চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এসময় তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যানের উসকানি পেয়ে আমার এবং সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। এছাড়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে দপ্তরের জানালা ভাঙচুর করেন। এতে আমিসহ সাতজন আহত হয়েছি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনের নামে আনসার সদস্য আকরাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক রয়েছেন। যাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।