Dhaka সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কারো কাছে অনুনয় নয়, নিজ গুণেই নারীদের অধিকার আদায় করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কারো কাছে অনুনয় নয়, নিজ গুণেই নারীদের তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নবনির্মিত ‘জয়িতা টাওয়ার’ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গণভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। তিনি এ দেশে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানে কিন্তু নারীর সমঅধিকারের কথা বলা আছে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে, তার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, সমাজের অর্ধেক হচ্ছে নারী, তাদের অবহেলিত রেখে একটি সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। নারীরা শুধু আমাদের অধিকার দাও বললে চলবে না, নারীদের অধিকার নারীদের আদায় করে নিতে হবে। নারীদের অধিকার নিজের গুণে অর্জন করতে হবে।

একজন নারীর জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুবই প্রয়োজন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে একজন নারী কারও কাছে মুখাপেক্ষী থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীরা শুধু মাথা কুটে বললে হবে না, আমাদের অধিকার দাও। নিজের অধিকার নিজেকে অর্জন করতে হবে। এসময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতারও উদ্ধৃত করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের গল্পৎ তুলে ধরে বলেন, একজন নারী পাশে থাকলে একজন পুরুষ কতদূর যেতে পারে বা একটা দেশ কতদূর যেতে পারে, এটাই তার প্রমাণ।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যখন রাজপথে পুরুষেরা নামতে পারেননি, আমাদের নারীনেত্রীরা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন। আইভি রহমানসহ আমাদের অসংখ্য নারীনেত্রী জীবনও দিয়েছেন। আমি তাদের স্মরণ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাশে থেকে শক্তি-সাহস জুগিয়েছেন আমার মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বাবাকে বলতেন, তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমাদের পড়াশোনা করানো, সংসার সামলানো সবই দেখেছেন আমার মা।

তিনি বলেন, জাতির পিতা মানুষকে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। বার বার কারাবরণ করেছেন। তিনিই আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার ডাকেই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। তিনিই দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির শুরুটা করে দিয়ে গেছেন।

সরকারপ্রধান বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা জয়িতা ফাউন্ডেশন করেছি। নারীদের উৎপাদিত পণ্য পদর্শনীর জন্য এই টাওয়ার করেছি। গণভবনের মাটি আজ ধন্য, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দক্ষ ও সফল নারী উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। তিনি এ দেশে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানে কিন্তু নারীর সমঅধিকারের কথা বলা আছে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে, তার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেন।

তিনি বলেন, আল্লাহতালা মানুষকে সমান শক্তি দিয়েই পাঠিয়েছেন, শক্তিটা কাজে লাগাবার সুযোগটা তো দিতে হবে। সেই সুযোগটা আমরা দিয়েছি। আজ ইসলাম ধর্ম, আমি দেখি অনেক দেশে নারীদের পড়তে দেয় না। লেখাপড়া শেখায় বাধা দেয়। নানা রকম নির্যাতন হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে প্রথম ইসলাম ধর্ম কে গ্রহণ করেছে? আমাদের নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন কই কোন পুরুষ তো সাহস করে আসেনাই। এসে ছিল একজন নারী। প্রথম বিবি খাজিদা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি কে ছিলেন? তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, তিনি বিভিন্ন দেশে দেশে ঘুরতেন। তিনি তার ব্যবসায়ে নবী করিম (স:)কে চাকরি দিয়েছিলেন। তিনি তার অর্থ সম্পদ দিয়ে ইসলাম প্রচারে সহযোগিতা করেন। তাহলে, যে ধর্ম একজন নারী সহাস করে নিল আজকে সেই নারীকে পর্দার আড়ালে রাখা, বন্দি করে রাখা, কাজ করতে না দেওয়া এটা কেমন ধরনের কথা? এটা কেমন ধরনের ইসলাম কে রক্ষা করা এটা আমি বুঝি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মেয়েদের ওপর বিএনপির অত্যাচার, নির্যাতন, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল। আমাদের যুব মহিলা লীগের মেয়েদের, আমাদের আওয়ামী লীগের মেয়েদের ওপর যে অত্যাচার তারা করেছিল, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। গ্রেপ্তার করা, থানা নিয়ে আটকানো, নানাভাবে তাদের নির্যাতন করা হয়। এর প্রতিবাদ আমাদের মেয়েরা করে গেছে। আমাদের পুরুষরা যখন রাস্তায় নামতে পারেনি, তখন আমাদের যুব ও আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরা সাহসের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছে। যার ফলে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, সমাজের অর্ধেক হচ্ছে নারী, তাদের অবহেলিত রেখে একটি সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। নারীরা শুধু আমাদের অধিকার দাও বললে চলবে না, নারীদের অধিকার নারীদের আদায় করে নিতে হবে। নারীদের অধিকার নিজের গুনে অর্জন করতে হবে।

নারীরা পিছিয়ে থাকবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের প্রথম শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার যে অবদান, তিনি স্বপ্ন দেখতেন নারীরা একদিন জজ, ব্যারিস্টার হবেন। আজ আমাদের দেশের নারীরা জজ-ব্যারিস্টার থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে আপন স্থান করে নিয়েছে এবং নিতে পেরেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড, প্রতিটি জায়গা আমাদের নারীরা যাতে সমসুযোগ পায়, আমি ’৯৬ সালে সরকারে এসে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো মহিলা জজ ছিল না, আজ উচ্চ আদালতে আমাদের নারীরা স্থান পেয়েছে। কোনো সচিব ছিল না, কোনো জেলায় ডিসি করা হতো না। আমি সরকারে আসার পর নারীরা ওসি হয়েছে, এসপি হয়েছে, বিভিন্ন পদ তারা পেয়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের প্রচেষ্টা সবক্ষেত্রে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আমরা নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরই সেখানে নারীর যে অধিকারের কথা ছিল সব বাতিল করে দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জামায়াতে ইসলামকে নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। ফলে তাদের ২০ দলীয় জোট নারীদের অধিকার বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ পুনরায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবারও আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। ব্রিটিশ হাইকমিশনের উপর গ্রেনেড হামলা করা হলো, আমাদের ছাত্রলীগ নেতা তুষারকে হত্যা করা হলো। সারাদেশে তখন সন্ত্রাসের রাজত্ব। বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বোমা হামলা-গুলি এসবের বিরুদ্ধে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা র‌্যালি করেছিলাম। কিন্তু আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে র‌্যালি করতে গিয়ে আমরাই গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছি।

তিনি বলেন, বিএনপির অত্যাচার-নির্যাতন, অগ্নিসন্ত্রাস… বিশেষ করে আমাদের যুব মহিলা লীগের মেয়েদের উপর যে অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। গ্রেপ্তার করা, থানায় নিয়ে আটকানোসহ নানানভাবে তাদের (বিএনপির) নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু তারপরও এর প্রতিবাদ আমাদের মেয়েরা করে গেছে। যখন রাস্তায় পুরুষরা নামতে পারেনি। তখন আমাদের আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগের নারী নেত্রীরাই সাহসের সঙ্গে পথে নেমেছেন। যার ফলেই আমরা আবারও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক ও জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান।

এর আগে সকাল ১০টায় ধানমন্ডিতে নবনির্মিত জয়িতা টাওয়ারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সেখানে জামদানি গ্যালারি ও জয়িতা মার্কেট প্লেসও উদ্বোধন করেন তিনি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

কারো কাছে অনুনয় নয়, নিজ গুণেই নারীদের অধিকার আদায় করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০২:২৮:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কারো কাছে অনুনয় নয়, নিজ গুণেই নারীদের তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নবনির্মিত ‘জয়িতা টাওয়ার’ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গণভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। তিনি এ দেশে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানে কিন্তু নারীর সমঅধিকারের কথা বলা আছে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে, তার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, সমাজের অর্ধেক হচ্ছে নারী, তাদের অবহেলিত রেখে একটি সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। নারীরা শুধু আমাদের অধিকার দাও বললে চলবে না, নারীদের অধিকার নারীদের আদায় করে নিতে হবে। নারীদের অধিকার নিজের গুণে অর্জন করতে হবে।

একজন নারীর জন্য অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুবই প্রয়োজন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাহলে একজন নারী কারও কাছে মুখাপেক্ষী থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীরা শুধু মাথা কুটে বললে হবে না, আমাদের অধিকার দাও। নিজের অধিকার নিজেকে অর্জন করতে হবে। এসময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতারও উদ্ধৃত করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের গল্পৎ তুলে ধরে বলেন, একজন নারী পাশে থাকলে একজন পুরুষ কতদূর যেতে পারে বা একটা দেশ কতদূর যেতে পারে, এটাই তার প্রমাণ।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যখন রাজপথে পুরুষেরা নামতে পারেননি, আমাদের নারীনেত্রীরা আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন। আইভি রহমানসহ আমাদের অসংখ্য নারীনেত্রী জীবনও দিয়েছেন। আমি তাদের স্মরণ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাশে থেকে শক্তি-সাহস জুগিয়েছেন আমার মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। বাবাকে বলতেন, তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমাদের পড়াশোনা করানো, সংসার সামলানো সবই দেখেছেন আমার মা।

তিনি বলেন, জাতির পিতা মানুষকে বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। বার বার কারাবরণ করেছেন। তিনিই আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার ডাকেই দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। তিনিই দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির শুরুটা করে দিয়ে গেছেন।

সরকারপ্রধান বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা জয়িতা ফাউন্ডেশন করেছি। নারীদের উৎপাদিত পণ্য পদর্শনীর জন্য এই টাওয়ার করেছি। গণভবনের মাটি আজ ধন্য, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দক্ষ ও সফল নারী উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। তিনি এ দেশে নারীদের সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানে কিন্তু নারীর সমঅধিকারের কথা বলা আছে। নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। নারী নেতৃত্ব যাতে গড়ে ওঠে, তার জন্য পার্লামেন্টে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেন।

তিনি বলেন, আল্লাহতালা মানুষকে সমান শক্তি দিয়েই পাঠিয়েছেন, শক্তিটা কাজে লাগাবার সুযোগটা তো দিতে হবে। সেই সুযোগটা আমরা দিয়েছি। আজ ইসলাম ধর্ম, আমি দেখি অনেক দেশে নারীদের পড়তে দেয় না। লেখাপড়া শেখায় বাধা দেয়। নানা রকম নির্যাতন হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে প্রথম ইসলাম ধর্ম কে গ্রহণ করেছে? আমাদের নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন কই কোন পুরুষ তো সাহস করে আসেনাই। এসে ছিল একজন নারী। প্রথম বিবি খাজিদা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি কে ছিলেন? তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন, তিনি বিভিন্ন দেশে দেশে ঘুরতেন। তিনি তার ব্যবসায়ে নবী করিম (স:)কে চাকরি দিয়েছিলেন। তিনি তার অর্থ সম্পদ দিয়ে ইসলাম প্রচারে সহযোগিতা করেন। তাহলে, যে ধর্ম একজন নারী সহাস করে নিল আজকে সেই নারীকে পর্দার আড়ালে রাখা, বন্দি করে রাখা, কাজ করতে না দেওয়া এটা কেমন ধরনের কথা? এটা কেমন ধরনের ইসলাম কে রক্ষা করা এটা আমি বুঝি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মেয়েদের ওপর বিএনপির অত্যাচার, নির্যাতন, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল। আমাদের যুব মহিলা লীগের মেয়েদের, আমাদের আওয়ামী লীগের মেয়েদের ওপর যে অত্যাচার তারা করেছিল, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। গ্রেপ্তার করা, থানা নিয়ে আটকানো, নানাভাবে তাদের নির্যাতন করা হয়। এর প্রতিবাদ আমাদের মেয়েরা করে গেছে। আমাদের পুরুষরা যখন রাস্তায় নামতে পারেনি, তখন আমাদের যুব ও আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরা সাহসের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছে। যার ফলে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, সমাজের অর্ধেক হচ্ছে নারী, তাদের অবহেলিত রেখে একটি সমাজ গড়ে উঠতে পারে না। নারীরা শুধু আমাদের অধিকার দাও বললে চলবে না, নারীদের অধিকার নারীদের আদায় করে নিতে হবে। নারীদের অধিকার নিজের গুনে অর্জন করতে হবে।

নারীরা পিছিয়ে থাকবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের প্রথম শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার যে অবদান, তিনি স্বপ্ন দেখতেন নারীরা একদিন জজ, ব্যারিস্টার হবেন। আজ আমাদের দেশের নারীরা জজ-ব্যারিস্টার থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে আপন স্থান করে নিয়েছে এবং নিতে পেরেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড, প্রতিটি জায়গা আমাদের নারীরা যাতে সমসুযোগ পায়, আমি ’৯৬ সালে সরকারে এসে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো মহিলা জজ ছিল না, আজ উচ্চ আদালতে আমাদের নারীরা স্থান পেয়েছে। কোনো সচিব ছিল না, কোনো জেলায় ডিসি করা হতো না। আমি সরকারে আসার পর নারীরা ওসি হয়েছে, এসপি হয়েছে, বিভিন্ন পদ তারা পেয়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের প্রচেষ্টা সবক্ষেত্রে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আমরা নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরই সেখানে নারীর যে অধিকারের কথা ছিল সব বাতিল করে দিয়েছিলেন। কারণ তিনি জামায়াতে ইসলামকে নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। ফলে তাদের ২০ দলীয় জোট নারীদের অধিকার বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগ পুনরায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবারও আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। বিএনপি তখন ক্ষমতায়। ব্রিটিশ হাইকমিশনের উপর গ্রেনেড হামলা করা হলো, আমাদের ছাত্রলীগ নেতা তুষারকে হত্যা করা হলো। সারাদেশে তখন সন্ত্রাসের রাজত্ব। বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বোমা হামলা-গুলি এসবের বিরুদ্ধে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা র‌্যালি করেছিলাম। কিন্তু আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে র‌্যালি করতে গিয়ে আমরাই গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছি।

তিনি বলেন, বিএনপির অত্যাচার-নির্যাতন, অগ্নিসন্ত্রাস… বিশেষ করে আমাদের যুব মহিলা লীগের মেয়েদের উপর যে অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছিল তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। গ্রেপ্তার করা, থানায় নিয়ে আটকানোসহ নানানভাবে তাদের (বিএনপির) নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু তারপরও এর প্রতিবাদ আমাদের মেয়েরা করে গেছে। যখন রাস্তায় পুরুষরা নামতে পারেনি। তখন আমাদের আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগের নারী নেত্রীরাই সাহসের সঙ্গে পথে নেমেছেন। যার ফলেই আমরা আবারও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক ও জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান।

এর আগে সকাল ১০টায় ধানমন্ডিতে নবনির্মিত জয়িতা টাওয়ারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সেখানে জামদানি গ্যালারি ও জয়িতা মার্কেট প্লেসও উদ্বোধন করেন তিনি।