Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাপ্তাই হ্রদে ১০ দিন আগেই মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা

রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি : 

পানি কম থাকায় ১০ দিন আগেই কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধির জন্য আগামী ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে প্রতি বছরের মতো এবারও তিন মাস সব ধরনের মাছ শিকার, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। এসময়ে বন্ধ থাকবে স্থানীয় পর্যায়ের বরফকলসমূহ, নিয়মিত হ্রদ টহলে থাকবে বিএফডিসির মনিটরিং টিম।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল জেলেদেরকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের গুরুত্বর্পূর্ণ স্থানে নৌ পুলিশ মোতায়েন করা হবে। হ্রদে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, গত বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবার রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। ফলে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন রক্ষার্থে প্রায় ১০ দিন আগেই কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। মৌসুমের এই সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৬ এমএসএল। বর্তমানে পানি রয়েছে ৭৬ এমএসএল।

এদিকে, পানিস্বল্পতার কারণে কাপ্তাই হ্রদে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা গত বছর পহেলা মে থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনমাস ১৭ করা হয়েছিল। এর আগের মৌসুমেও একই কারণে তিন মাসের নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞা একমাস বর্ধিত করে চার মাস হয়েছিল। তবে এই দুই মৌসুমে বর্ধিত সময়ের পরও পানিস্বল্পতার মধ্য দিয়ে মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় ভাটা পড়ে বার্ষিক মৎস্য অবতরণে।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, সদর ইউএনও নাজমা বিনতে আমিন, সংরক্ষিত পৌর কাউন্সিলর জোবায়তুন নাহার, রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়াসহ অন্যান্য মৎস্য ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে ৭৬ দশমিক ৩৭ এমএসএল (মীনস্ সি লেভেল) পানি রয়েছে। স্বাভাবিক সময় অনুযায়ী হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৬ দশমিক ২০ এমএসএল। সে হিসাবে বর্তমানেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ এমএসএল পানিস্বল্পতা রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে।

প্রসঙ্গত, ১৯৫৬ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬২ সালে বাঁধ নির্মাণ শেষে রাঙ্গামাটির বিশাল এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ। এই হ্রদই বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয়সমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ। আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। যা বাংলাদেশের পুকুরসমূহের মোট জলাশয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ মোট জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ। ১৯৬১ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ হ্রদের সৃষ্টি হলেও এটি রাঙ্গামাটিতে মৎস্য উৎপাদন ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

কাপ্তাই হ্রদে ১০ দিন আগেই মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশের সময় : ০৪:১১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি : 

পানি কম থাকায় ১০ দিন আগেই কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ও বংশ বৃদ্ধির জন্য আগামী ২০ এপ্রিল থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের বংশবিস্তার ও প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণে প্রতি বছরের মতো এবারও তিন মাস সব ধরনের মাছ শিকার, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন। এসময়ে বন্ধ থাকবে স্থানীয় পর্যায়ের বরফকলসমূহ, নিয়মিত হ্রদ টহলে থাকবে বিএফডিসির মনিটরিং টিম।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন মাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল জেলেদেরকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের গুরুত্বর্পূর্ণ স্থানে নৌ পুলিশ মোতায়েন করা হবে। হ্রদে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, গত বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এবার রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। ফলে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন রক্ষার্থে প্রায় ১০ দিন আগেই কাপ্তাই হ্রদে সব ধরনের মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। মৌসুমের এই সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৬ এমএসএল। বর্তমানে পানি রয়েছে ৭৬ এমএসএল।

এদিকে, পানিস্বল্পতার কারণে কাপ্তাই হ্রদে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা গত বছর পহেলা মে থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনমাস ১৭ করা হয়েছিল। এর আগের মৌসুমেও একই কারণে তিন মাসের নির্ধারিত নিষেধাজ্ঞা একমাস বর্ধিত করে চার মাস হয়েছিল। তবে এই দুই মৌসুমে বর্ধিত সময়ের পরও পানিস্বল্পতার মধ্য দিয়ে মাছ আহরণ শুরু হওয়ায় ভাটা পড়ে বার্ষিক মৎস্য অবতরণে।

বৈঠকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, সদর ইউএনও নাজমা বিনতে আমিন, সংরক্ষিত পৌর কাউন্সিলর জোবায়তুন নাহার, রাঙ্গামাটি জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়াসহ অন্যান্য মৎস্য ব্যবসায়ী ও খাতসংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে ৭৬ দশমিক ৩৭ এমএসএল (মীনস্ সি লেভেল) পানি রয়েছে। স্বাভাবিক সময় অনুযায়ী হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৬ দশমিক ২০ এমএসএল। সে হিসাবে বর্তমানেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ এমএসএল পানিস্বল্পতা রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে।

প্রসঙ্গত, ১৯৫৬ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬২ সালে বাঁধ নির্মাণ শেষে রাঙ্গামাটির বিশাল এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদ। এই হ্রদই বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয়সমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ। আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। যা বাংলাদেশের পুকুরসমূহের মোট জলাশয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ মোট জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ। ১৯৬১ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ হ্রদের সৃষ্টি হলেও এটি রাঙ্গামাটিতে মৎস্য উৎপাদন ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে।