Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

করোনায় মারা যাচ্ছেন একের পর এক শিল্পপতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৩৬:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০
  • ১৮৭ জন দেখেছেন

নুরুল ইসলাম বাবুল ও আবুল হাসেম

করোনায় প্রতি মুহুর্তে বিদায়ের বিউগল বাজছে। করোনার আপডেট তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুনিয়াজুড়ে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি। বাংলাদেশে তা ৭ হাজার ৩৫৯ জনে। এ তালিকায় অগুণতি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চলে যাচ্ছেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরাও।

চলে যাওয়া এই হাজারো মানুষের তালিকায় রয়েছেন দেশের দুই বিশিষ্ট শিল্পপতি। একজন নূরুল ইসলাম বাবুল। অন্যজন এম এ হাসেম।

দু’জনই দেশের দু’টি শিল্প পরিবারের কান্ডারি। এই দু’জনের হাত ধরে যমুনা গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ শিল্পের মহীরুহে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্টান দু’টিতে কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক। দুই কর্ণধারের মৃত্যুতে দেশের শিল্পখাতে শোক এবং দুশ্চিন্তার রেখা ছেয়ে গেছে।

ভ্যাকসিন আসি আসি করছে। গবেষণা চলছে দুনিয়াজুড়ে। সবশেষ করোনার নতুন স্ট্রেইন নিয়ে আতঙ্ক বেড়েছে বহুগুন। এ নিয়ে চিকিৎসার শতভাগ সুফল নিয়ে এখনও অন্ধকারে তাবৎ বিজ্ঞানীরা। এই আলোচনা বাংলাদেশেও হচ্ছে নানাভাবে। কিন্তু এরই মধ্যে একের পর বিশিষ্টজনদের মৃত্যু ভাবিয়ে তুলছে সকলকেই।

পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এম এ হাসেম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বুধবার রাত ১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার পুত্র শওকত আজিজ রাসেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি তার স্ট্যাটাসে লিখেন, আজ ২৪শে ডিসেম্বর রাত ১টা ২০ মিনিটে আমার বাবা ৭৮ বছর বয়সে এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

গত ১১ই ডিসেম্বর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর হাসেমকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৬ই ডিসেম্বর থেকে তিনি ছিলেন লাইফ সাপোর্টে।

এর আগে, একই হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে যান দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামও। ১৩ই জুলাই তিনি শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। গত ১৪ই জুন নুরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শূণ্য থেকে মহীরূহ একজন হাসেম

একেবারে শূণ্য থেকে শুরু। তাও পাঁচ দশক আগের কথা। একে একে গড়ে তুলেছেন ষাটটির বেশি প্রতিষ্টান। এই সময়ে তার বাণিজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন আবাসন, আমদানি-রপ্তানি, পার্টিকেল বোর্ড, ইস্পাত, প্লাস্টিক, ভোগ্যপণ্য, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন খাতে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হাসেম এক সময় সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। জনতা ইনসুরেন্স কোম্পানিও তিনি গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের বড় শিল্পগ্রুপগুলোর একটি পারটেক্স গ্রুপ।

ব্যবসায়ী এম এ হাসেম রাজনীতিতেও নাম লিখিয়েছিলেন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন : করোনার নতুন স্ট্রেইনে শিশুরাই সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে

আপসহীন এক উদ্যোক্তা নূরুল ইসলাম

আপসহীন এক উদ্যোক্তা ছিলেন। শিল্পখাত নিয়ে যেমনটি ভেবেছেন ঠিকঠিক তার রূপায়ণ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। নুরুল ইসলাম বাবুল ৩রা মে ১৯৪৬ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জের চুড়াইন ইউনিয়নের কামালখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ব্যবসায়িক জীবনে অত্যন্ত সফল এ মানুষটি, উদ্যোক্তা হয়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির চিন্তা লালন করতেন। কর্মজীবনের শুরুতে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। এর মধ্যেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। অস্ত্রহাতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন যমুনা গ্রুপ। কর্মজীবনে অসংখ্য বাধা এসেছে। সব বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন শিল্প খাতের এই আপসহীন উদ্যোক্তা। প্রায় চল্লিশটিরও অধিক প্রতিষ্টান গড়েছেন এই শিল্পোদ্যোক্তা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৩

করোনায় মারা যাচ্ছেন একের পর এক শিল্পপতি

প্রকাশের সময় : ০৫:৩৬:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

করোনায় প্রতি মুহুর্তে বিদায়ের বিউগল বাজছে। করোনার আপডেট তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুনিয়াজুড়ে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি। বাংলাদেশে তা ৭ হাজার ৩৫৯ জনে। এ তালিকায় অগুণতি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চলে যাচ্ছেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরাও।

চলে যাওয়া এই হাজারো মানুষের তালিকায় রয়েছেন দেশের দুই বিশিষ্ট শিল্পপতি। একজন নূরুল ইসলাম বাবুল। অন্যজন এম এ হাসেম।

দু’জনই দেশের দু’টি শিল্প পরিবারের কান্ডারি। এই দু’জনের হাত ধরে যমুনা গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ শিল্পের মহীরুহে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্টান দু’টিতে কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক। দুই কর্ণধারের মৃত্যুতে দেশের শিল্পখাতে শোক এবং দুশ্চিন্তার রেখা ছেয়ে গেছে।

ভ্যাকসিন আসি আসি করছে। গবেষণা চলছে দুনিয়াজুড়ে। সবশেষ করোনার নতুন স্ট্রেইন নিয়ে আতঙ্ক বেড়েছে বহুগুন। এ নিয়ে চিকিৎসার শতভাগ সুফল নিয়ে এখনও অন্ধকারে তাবৎ বিজ্ঞানীরা। এই আলোচনা বাংলাদেশেও হচ্ছে নানাভাবে। কিন্তু এরই মধ্যে একের পর বিশিষ্টজনদের মৃত্যু ভাবিয়ে তুলছে সকলকেই।

পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এম এ হাসেম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বুধবার রাত ১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার পুত্র শওকত আজিজ রাসেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পিতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি তার স্ট্যাটাসে লিখেন, আজ ২৪শে ডিসেম্বর রাত ১টা ২০ মিনিটে আমার বাবা ৭৮ বছর বয়সে এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

গত ১১ই ডিসেম্বর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর হাসেমকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১৬ই ডিসেম্বর থেকে তিনি ছিলেন লাইফ সাপোর্টে।

এর আগে, একই হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে যান দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামও। ১৩ই জুলাই তিনি শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। গত ১৪ই জুন নুরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শূণ্য থেকে মহীরূহ একজন হাসেম

একেবারে শূণ্য থেকে শুরু। তাও পাঁচ দশক আগের কথা। একে একে গড়ে তুলেছেন ষাটটির বেশি প্রতিষ্টান। এই সময়ে তার বাণিজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন আবাসন, আমদানি-রপ্তানি, পার্টিকেল বোর্ড, ইস্পাত, প্লাস্টিক, ভোগ্যপণ্য, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন খাতে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হাসেম এক সময় সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। জনতা ইনসুরেন্স কোম্পানিও তিনি গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের বড় শিল্পগ্রুপগুলোর একটি পারটেক্স গ্রুপ।

ব্যবসায়ী এম এ হাসেম রাজনীতিতেও নাম লিখিয়েছিলেন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন : করোনার নতুন স্ট্রেইনে শিশুরাই সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে

আপসহীন এক উদ্যোক্তা নূরুল ইসলাম

আপসহীন এক উদ্যোক্তা ছিলেন। শিল্পখাত নিয়ে যেমনটি ভেবেছেন ঠিকঠিক তার রূপায়ণ করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। নুরুল ইসলাম বাবুল ৩রা মে ১৯৪৬ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জের চুড়াইন ইউনিয়নের কামালখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ব্যবসায়িক জীবনে অত্যন্ত সফল এ মানুষটি, উদ্যোক্তা হয়ে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির চিন্তা লালন করতেন। কর্মজীবনের শুরুতে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। এর মধ্যেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। অস্ত্রহাতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন যমুনা গ্রুপ। কর্মজীবনে অসংখ্য বাধা এসেছে। সব বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন শিল্প খাতের এই আপসহীন উদ্যোক্তা। প্রায় চল্লিশটিরও অধিক প্রতিষ্টান গড়েছেন এই শিল্পোদ্যোক্তা।