পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি :
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো জায়গায় করিডোর দেওয়ার আগে জনগণের রায় লাগবে। বাংলাদেশের যেসব রাজনৈতিক দল রাজনীতি করছে তাদের রায় লাগবে। এটা কোনো ছোট বিষয় না।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বারো আওলিয়ার মাজারে উরস শরিফ ও মেলা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সারজিস আলম। এসময় জাতীয় নাগরিক পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ইন্টেরিম সরকারকে (অন্তর্বর্তী সরকার) আমরা অনেক জায়গায় দেখছি, তারা গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে অবহেলা করছেন। এই জায়গায় অবহেলা করার সুযোগ নেই।
সারজিস আলম বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি, করিডোরের নাম করে বিদেশি এজেন্ট এসেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এসেছে। বিভিন্ন দেশ ঢুকেছে। ইউএন (জাতিসংঘ) ঢুকেছে। ইউএনের নাম করে বিভিন্ন ধরনের সাম্রাজ্যবাদী মানুষ ঢুকেছে, রাষ্ট্র ঢুকেছে। এই সুযোগ আমরা বাংলাদেশে আর হতে দেবো না।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তার পাশেই পাকিস্তান। এ দুটি দেশে যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি হয়, তৃতীয় দেশ হিসেবে এর সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে বাংলাদেশ। আমরা আমাদের জায়গা থেকে কখনো প্রত্যাশা করি না যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটি দেশে যুদ্ধ লাগুক। জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। তবে যেভাবে পুশইন করা হচ্ছে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বর্তমান সরকার কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এর দায়ভার তাদের নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আব্দুল হামিদ যে রাষ্ট্রপতি ছিল, উনি গতকাল দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন। তিনি পালিয়েছেন না তাকে পালাতে দেওয়া হয়েছে। নয় মাস পরে উনি কিভাবে দেশ ছেড়ে যায়? আওয়ামী লীগের যে কয়েকজন সুবিধাভোগী বাংলাদেশে ছিল তার মধ্যে অন্যতম তিনি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা তিনি সব সময় পেয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি কত কিছু করেছেন তার প্রমাণ অনেক জায়গায় আছে। সেই মানুষ এই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় নয় মাস পরে। এটা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এবং এর জন্য আমি মনে করি প্রফেসর ডক্টর ইউনূসকে সরাসরি জবাবদিহি করা উচিত। ডক্টর আসিফ নজরুলকেও সরাসরি জবাবদিহি করা উচিত।
সারজিস আলম বলেন, ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ, তার পাশে পাকিস্তান। এই দুইটি দেশের মধ্যে যদি যুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি দাঁড়িয়ে যায় সবচেয়ে বেশি তৃতীয় দেশ হিসেবে যে দেশটা ভুক্তভোগী হবে সেটা হবে বাংলাদেশ। আমরা আমাদের জায়গা থেকে কখনোই প্রত্যাশা করি না যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগুক তার উপরন্তে এই দুটি দেশ হচ্ছে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। দুটি দেশের মধ্যে ধর্মীয় দিক থেকেও কিন্তু মুখোমুখি অবস্থান মাঝেমধ্যে আমরা দাঁড়াতে দেখেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বিভিন্ন কথায় ও কাজের মধ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ছোয়া পাই। সেই জায়গা থেকে আমরা কখনো এটা প্রত্যাশা করি না, যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ যেকোনো কারণেই হোক না কেন তারা যুদ্ধের জড়িয়ে পড়ুক।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে বলেছি পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কখনো এক দেড় বছরের মধ্যে সম্ভব না। কিন্তু একটা মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা আমরা নিজে এনসিপির পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের কাছে গিয়ে উপস্থাপন করেছি। ওই মৌলিক সংস্কারগুলো যেগুলোর সাথে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন জড়িত, যেগুলোর সাথে সুষ্ঠু একটি বিচার ব্যবস্থাপনা জড়িত, ওই সময়ের জন্য যেগুলোর সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করাটা জড়িত, এই মৌলিক সংস্কারগুলো করে যদি এই অন্তর্বর্তীকালের সরকার মনে করে ডিসেম্বরে হোক, মার্চে হোক আর জুনের মধ্যে হোক নির্বাচন দিতে তারা পারবে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা কিন্তু একবারও বলিনি, অন্তর্বর্তী সরকার যে সময়সীমা বলেছে সেটার সাথে আমাদের আপত্তি আছে। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তারা যেই সময়ের মধ্যেই এই মৌলিক সংস্কারগুলো করে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করতে পারবে এবং আমরা আমাদের জায়গা থেকে ওইটুকু কনফিডেন্স হতে পারব যে তারা দিতে পারবে তখনই তারা দিক আমাদের কোনো আপত্তি নেই কিন্তু তার পূর্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হচ্ছে এই মিথ্যা মামলা। আমরা চাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের নামে মামলা হবে, বিচার হবে, দৃশ্যমান শাস্তি হবে কিন্তু আমরা কখনো এটা চাই না যে একজন নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হবে। কোনো একজন মানুষ যে কোনো রাজনৈতিক দলের হোক না কেন সে যদি কোনোদিন অন্যায় না করে অপকর্ম না করে ক্ষমতার অপব্যবহার না করে তাহলে তার নামে মিথ্যা মামলা কেন হবে। যদি হয় তাহলে যারা করছে তার সাথে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কোথায়। আওয়ামী লীগ সেই কাজ জামায়াতের সাথে করেছিল বিএনপির সাথেও করেছিল। মিথ্যা মামলা দেওয়ার পূর্বে ফোন দিয়ে মামলায় আসামি হিসেবে নাম না দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় নাম দেওয়ার পর নাম কাটানোর জন্যও টাকা নেওয়া হচ্ছে।