Dhaka বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কবি নজরুলের গান বিকৃতি, তোপের মুখে এ আর রহমান

  • বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৫৬:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩
  • ১৯২ জন দেখেছেন

বিনোদন ডেস্ক : 

রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ‘পিপ্পা’ ছবির গান নিয়ে সমালোচনায় পড়লেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক এ আর রহমান। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির নতুন সংগীতায়োজন নিয়ে এ সমালোচনার সূত্রপাত।

পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বনে ছবি। নির্মাতা পক্ষ ভারতীয় তথা বলিউড। যার সংগীত অংশীদার হিসেবে আছেন অস্কারজয়ী দক্ষিণী এ আর রাহমান। ফলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটু বেশিই প্রত্যাশা ছিল ছবিটির প্রতি। ধারণা করা হচ্ছিল, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ও রাহমানের সংগীতে কিংবদন্তি এক বাংলাদেশের ছবি মিলবে ‘পিপ্পা’ নামের এই ছবিতে। এতে কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানের রিমেক ব্যবহার হয়েছে।

রিমেকটি তৈরি করেছেন উপমহাদেশের সুরসম্রাট এআর রহমান। এতে প্রশংসার বদলে বাংলা ভাষাভাষীদের সমালোচনার ঝড়ে পড়েছেন এ অস্কারজয়ী কম্পোজার। বেশিরভাগ বাংলাদেশির হৃদয়ে সাড়া ফেলেনি এই রিমেক।

নেটিজেনদের বক্তব্য, কাজী নজরুল সৃষ্ট গানটি নতুন সংগীতায়োজনে তৈরি করতে গিয়ে এ আর রহমান এ গানটির সারমর্মই বদলে ফেলেছেন! এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকে, তোপের মুখে পড়লেন এ আর রহমান।

‘কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট’ গানটি শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। দেশাত্মবোধের ভাব মনকে নাড়া দিয়ে যায়। গানটির কথা ও সুর ভাবায়, মনে ছাপ ফেলে। সে গানটি হিন্দি ছবি ‘পিপ্পা’য় নতুন সংগীতায়োজনে বানিয়ে বিতর্কের মুখে পড়লেন এ আর রহমান।

নেটিজেনরা বলছেন, এ আর রহমান ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির নতুন যে সংগীতায়োজন করেছেন, তার সঙ্গে প্রকৃত গান অনেকটাই আলাদা। বাঙালিরা এত দিন গানটি যেভাবে শুনে আসছেন, তার সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন না শ্রোতারা। মন্তব্যের ঘরে এক ব্যক্তি লেখেন, ‘আমি মোটেও রিমিক্সের বিপক্ষে নই, কিন্তু এখানে যা হয়েছে সেটা বিকৃতি।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘মনটাই ভেঙে গেল। এ আর রহমান এত সুন্দর গানের বারোটা বাজিয়ে দিলেন।’ কেউ আবার লেখেন, ‘সঠিক সুরে সঠিকভাবে গানটি বানালে ভালো হতো। আসল গানটা শুনলে যে অনুপ্রেরণা পাই, তার সিকিভাগ এটা শুনে আসছে না। আসল গানটা শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়, এ আর রহমান এটা কী বানিয়েছেন? জঘন্য।’

কেউ আবার এভাবেও লিখেছেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না কোনো গানের আত্মাকে এ আর রহমান এভাবে খুন করতে পারেন!’

এ আর রহমানের ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত গানটির মন্তব্যের ঘরে সোমা পত্রা নামের একজন লিখেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলামের এমন একটি গানের আত্মাকে ধ্বংস করা হয়েছে। যে গান আমাদের দেশের স্বাধীনতার মতো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত, যা শুনলে আমাদের মহান বিপ্লবীদের প্রতি মাথা নত হয়ে আসে। তা নষ্ট করার অধিকার কারোর নেই। এ আর রহমানের মতো শিল্পীর কাছ থেকে এটা আশা করিনি। একজন শ্রোতা হিসেবে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানালাম।’ কৃষ্টি চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘হোক প্রতিবাদ। হোক কলরব। এতটা স্বাধীনতা শুধু স্পর্ধা নয়, দু–স্পর্ধা।’এম ডি আলামিন নামের একজন লিখেছেন, ‘পর্যাপ্ত গবেষণা না করে রক্ত গরম করা গানটাকে রক্ত ঠান্ডা করা গানে পরিণত করলেন।

সাধারণ শ্রোতা ছাড়াও কলকাতার সংগীতশিল্পীরাও এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। বিরক্তি প্রকাশ করে প্রবীণ গায়িকা হৈমন্তী শুক্লা বলেন, ‘এগুলো সহ্য হয় না। অসভ্যতা! আমাদের তো বয়স হয়েছে। এগুলো কী চলছে? বাংলা গান নিয়ে এটা কী হচ্ছে?’ একই সুর কলকাতার গায়ক শিলাজিতেরও। তার ভাষায়, ‘অন্য প্রদেশের মানুষেরা হয়তো এই গানের মর্ম বুঝবে না। কিন্তু আমরা বাঙালিরা তো বুঝি এই গানের মধ্যে যে আবেগ রয়েছে, তা নষ্ট হয়েছে। এ আর রহমানের কোনো গানের সঙ্গে যদি এরকম হতো, তবে উনি কী বলতেন?’

একই সুর কলকাতার গায়ক শিলাজিতেরও। তার ভাষায়, ‘অন্য প্রদেশের মানুষেরা হয়তো এই গানের মর্ম বুঝবে না। কিন্তু আমরা বাঙালিরা তো বুঝি এই গানের মধ্যে যে আবেগ রয়েছে, তা নষ্ট হয়েছে। এ আর রহমানের কোনো গানের সঙ্গে যদি এরকম হতো, তবে উনি কী বলতেন?’

এ আর রহমানের সংগীতায়োজনে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন একাধিক ভারতীয় বাঙালি গায়ক। তাঁদের মধ্যে আছেন তীর্থ ভট্টাচার্য, রাহুল দত্ত, পীযূষ দাস, শালিনী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আপস করলে খালেদা জিয়া অনেক আগেই ক্ষমতায় বসতে পারতেন : সেলিমা রহমান

কবি নজরুলের গান বিকৃতি, তোপের মুখে এ আর রহমান

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৬:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩

বিনোদন ডেস্ক : 

রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ‘পিপ্পা’ ছবির গান নিয়ে সমালোচনায় পড়লেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক এ আর রহমান। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির নতুন সংগীতায়োজন নিয়ে এ সমালোচনার সূত্রপাত।

পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বনে ছবি। নির্মাতা পক্ষ ভারতীয় তথা বলিউড। যার সংগীত অংশীদার হিসেবে আছেন অস্কারজয়ী দক্ষিণী এ আর রাহমান। ফলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটু বেশিই প্রত্যাশা ছিল ছবিটির প্রতি। ধারণা করা হচ্ছিল, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ও রাহমানের সংগীতে কিংবদন্তি এক বাংলাদেশের ছবি মিলবে ‘পিপ্পা’ নামের এই ছবিতে। এতে কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানের রিমেক ব্যবহার হয়েছে।

রিমেকটি তৈরি করেছেন উপমহাদেশের সুরসম্রাট এআর রহমান। এতে প্রশংসার বদলে বাংলা ভাষাভাষীদের সমালোচনার ঝড়ে পড়েছেন এ অস্কারজয়ী কম্পোজার। বেশিরভাগ বাংলাদেশির হৃদয়ে সাড়া ফেলেনি এই রিমেক।

নেটিজেনদের বক্তব্য, কাজী নজরুল সৃষ্ট গানটি নতুন সংগীতায়োজনে তৈরি করতে গিয়ে এ আর রহমান এ গানটির সারমর্মই বদলে ফেলেছেন! এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকে, তোপের মুখে পড়লেন এ আর রহমান।

‘কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট’ গানটি শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়। দেশাত্মবোধের ভাব মনকে নাড়া দিয়ে যায়। গানটির কথা ও সুর ভাবায়, মনে ছাপ ফেলে। সে গানটি হিন্দি ছবি ‘পিপ্পা’য় নতুন সংগীতায়োজনে বানিয়ে বিতর্কের মুখে পড়লেন এ আর রহমান।

নেটিজেনরা বলছেন, এ আর রহমান ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির নতুন যে সংগীতায়োজন করেছেন, তার সঙ্গে প্রকৃত গান অনেকটাই আলাদা। বাঙালিরা এত দিন গানটি যেভাবে শুনে আসছেন, তার সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছেন না শ্রোতারা। মন্তব্যের ঘরে এক ব্যক্তি লেখেন, ‘আমি মোটেও রিমিক্সের বিপক্ষে নই, কিন্তু এখানে যা হয়েছে সেটা বিকৃতি।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘মনটাই ভেঙে গেল। এ আর রহমান এত সুন্দর গানের বারোটা বাজিয়ে দিলেন।’ কেউ আবার লেখেন, ‘সঠিক সুরে সঠিকভাবে গানটি বানালে ভালো হতো। আসল গানটা শুনলে যে অনুপ্রেরণা পাই, তার সিকিভাগ এটা শুনে আসছে না। আসল গানটা শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়, এ আর রহমান এটা কী বানিয়েছেন? জঘন্য।’

কেউ আবার এভাবেও লিখেছেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না কোনো গানের আত্মাকে এ আর রহমান এভাবে খুন করতে পারেন!’

এ আর রহমানের ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত গানটির মন্তব্যের ঘরে সোমা পত্রা নামের একজন লিখেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলামের এমন একটি গানের আত্মাকে ধ্বংস করা হয়েছে। যে গান আমাদের দেশের স্বাধীনতার মতো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত, যা শুনলে আমাদের মহান বিপ্লবীদের প্রতি মাথা নত হয়ে আসে। তা নষ্ট করার অধিকার কারোর নেই। এ আর রহমানের মতো শিল্পীর কাছ থেকে এটা আশা করিনি। একজন শ্রোতা হিসেবে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানালাম।’ কৃষ্টি চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘হোক প্রতিবাদ। হোক কলরব। এতটা স্বাধীনতা শুধু স্পর্ধা নয়, দু–স্পর্ধা।’এম ডি আলামিন নামের একজন লিখেছেন, ‘পর্যাপ্ত গবেষণা না করে রক্ত গরম করা গানটাকে রক্ত ঠান্ডা করা গানে পরিণত করলেন।

সাধারণ শ্রোতা ছাড়াও কলকাতার সংগীতশিল্পীরাও এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। বিরক্তি প্রকাশ করে প্রবীণ গায়িকা হৈমন্তী শুক্লা বলেন, ‘এগুলো সহ্য হয় না। অসভ্যতা! আমাদের তো বয়স হয়েছে। এগুলো কী চলছে? বাংলা গান নিয়ে এটা কী হচ্ছে?’ একই সুর কলকাতার গায়ক শিলাজিতেরও। তার ভাষায়, ‘অন্য প্রদেশের মানুষেরা হয়তো এই গানের মর্ম বুঝবে না। কিন্তু আমরা বাঙালিরা তো বুঝি এই গানের মধ্যে যে আবেগ রয়েছে, তা নষ্ট হয়েছে। এ আর রহমানের কোনো গানের সঙ্গে যদি এরকম হতো, তবে উনি কী বলতেন?’

একই সুর কলকাতার গায়ক শিলাজিতেরও। তার ভাষায়, ‘অন্য প্রদেশের মানুষেরা হয়তো এই গানের মর্ম বুঝবে না। কিন্তু আমরা বাঙালিরা তো বুঝি এই গানের মধ্যে যে আবেগ রয়েছে, তা নষ্ট হয়েছে। এ আর রহমানের কোনো গানের সঙ্গে যদি এরকম হতো, তবে উনি কী বলতেন?’

এ আর রহমানের সংগীতায়োজনে ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন একাধিক ভারতীয় বাঙালি গায়ক। তাঁদের মধ্যে আছেন তীর্থ ভট্টাচার্য, রাহুল দত্ত, পীযূষ দাস, শালিনী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।