বিনোদন ডেস্ক :
হঠাৎ করেই ভক্তদের দুঃসংবাদ দিলেন দেশের জনপ্রিয় গায়িকা দিলশাদ নাহার কনা। জানালেন নিজের বিবাহবিচ্ছেদের কথা। ছয় বছরের বৈবাহিক জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন এ গায়িকা। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক আবেগঘন বার্তায় তিনি এই তথ্য জানান।
যদিও তার সংসার নিয়ে টানাপোড়েনের ঘটনা শোবিজের অনেকেই জানতেন। কনা এবং তার প্রাক্তন স্বামী গহীন অনেক দিন ধরেই আলাদা থাকছিলেন। কিন্তু চেষ্টা করেছেন নিজেদের মধ্যে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে। সে কথাই গতকাল গহীন তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, বিচ্ছেদের পথেই যেতে হয়েছে দুজনের।
কনার বিচ্ছেদের ঘোষণার পরই গায়িকার স্বামী মো. ইফতেখার গহীন এক পোস্টে লেখেন ‘আমাদের বিচ্ছেদ হয়নি’। নিজের ফেসবুকে কনাকে মেনশন করে তিনি লিখেছিলেন, ‘যারাই কনাকে নিয়ে এমন অযাচিত আর বাজে সংবাদ ছড়াচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য করে আমি গোলাম মো. ইফতেখার এখন পর্যন্ত দিলশাদ নাহার কনার স্বামী। তাকে নিয়ে যা লিখছেন তা নিতান্তই কিছু কুচক্রী ও কুরুচিপূর্ণ মানুষের বানানো।’
এরপর তিনি আরো লিখেছিলেন, ‘আমাদের কিছু পারিবারিক সমস্যা চলছে যা আমরা দুই জনই সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমাদের কোনো বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি। আল্লাহ মাফ করুন যদি কোনোদিন আলাদা হতে হয় তার কারণ আমাদের বহুদিন চলে আসা পারাবারিক দ্বন্দ্ব হতে পারে। কোনো পরকীয়া বা এই ধরণের যত্তসব নোংরা মিথ্যা বানোয়াট নিয়ে যদি কোনো সংবাদ প্রকাশ করেন তাহলে আমি সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকব।’
এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয় অনুরাগীদের মাঝে। তবে সকালে সে পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি কনার স্বামীর আইডিতে। আগের পোস্ট মুছে ফেলেছেন তিনি। অর্থাৎ তাদের যে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তা একেবারেই স্পষ্ট।
দীর্ঘ ৭ বছর প্রেমের পর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল ভালোবেসে ব্যবসায়ী ইফতেখার গহীনকে বিয়ে করেছিলেন কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা।
কনা সামাজিক মাধ্যমে নিজের বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানিয়ে লেখেন, ‘আমি আপনাদের ভালোবাসার কনা। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে- সবই আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে।’ এরপর তিনি ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন এবং বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের পেছনের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। ব্যক্তিগত যন্ত্রণাকে আবেগময় শব্দে প্রকাশ করে কনা ভক্তদের পাশে থাকার আহ্বানও জানান।
কনার স্ট্যাটাসটি প্রকাশের ঠিক প্রায় এক ঘণ্টা পর, রাত ১২টার দিকে, আরেক জনপ্রিয় শিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি ছোট্ট স্ট্যাটাস দেন, যেখানে লেখা ছিল, ‘জন্ম মৃত্যু বিয়ে বিচ্ছেদ, এর সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়- বাণীতে শেয়াল রানী।’
এই বাক্য নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে শুরু হয় জল্পনা। ন্যান্সি তার পোস্টটি কার উদ্দেশ্যে করেছেন তা উল্লেখ না করলেও কনার পোস্টের একটি বাক্য সরাসরি ব্যবহার করায় অনেকেই ধরে নেন, এই মন্তব্য কনাকে উদ্দেশ করেই করা। বিশেষ করে ‘শেয়াল রানি’ শব্দটি ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পেছনে পুরনো একটি প্রেক্ষাপটও নতুন করে সংযোগ তৈরি করছে। গত বছরের ১৪ জুলাই ন্যান্সি একটি শেয়ালের ছবি পোস্ট করেছিলেন, যা অনেকেই মনে করেন, কনার দিকেই ইঙ্গিত ছিল। সে সময় কনার গাওয়া সুপারহিট গান ‘দষ্টু কোকিল’ নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন কনা।
এরপর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়- দুই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীর মধ্যে যেন পর্দার আড়ালে চলছে টানাপোড়েন। যদিও কনা বা ন্যান্সি কেউই প্রকাশ্যে কোনো বিরোধ স্বীকার করেননি, কিংবা একে অপরকে নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। তবে কণার স্ট্যাটাসের পর এবারও ন্যান্সির এই পোস্টে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাচ্ছেন নেটিজেনরা।
এবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস নিয়ে হাজির জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সালমা। তিনি লিখেছেন, ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। কঠিন সময়ে শিল্পীর পাশে থাকাটা জরুরি। আমাদের ট্যাগ কিন্তু আমরা শিল্পী। সেখানে আমাদের কর্তব্য সবাই একসাথে মিলে থাকাটা। দুই দিনের দুনিয়া কে কখন আছি আবার নেই। যার যার কষ্ট তার তার। সবাই মিলে ভালো থাকার চেষ্টা করুন।’
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, সালমা পরোক্ষভাবে কনার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে ন্যান্সির খোঁচার প্রতি সমালোচনামূলক ইঙ্গিত করেছেন।
তিনজন প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর পরপর পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে জন্ম দিয়েছে আলোচনা ও কিছুটা বিভাজনেরও। তবে একথা স্পষ্ট— শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবনের কষ্টের মুহূর্তে সমবেদনা ও সংবেদনশীল হওয়া উচিত। কে কাকে খোঁচা দিলেন, আর কে পাশে দাঁড়ালেন তা সময়ই বলবে।