Dhaka বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কনকনে শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়ের মানুষ

পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি : 

কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঠলেও হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।

এর আগে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা) রেকর্ড করা হয় ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। রাতভর বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে। সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে তীব্র শীত অনুভূত হয়।

এদিকে তাপমাত্রা ৭-এর ঘরে নেমে আসায় বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এতে করে তীব্র শীত দুর্ভোগে পড়েছে এ সীমান্ত জেলা। এতে করে হিমশীতল হাওয়ায় কনকনে শীত জেঁকে বসেছে সীমান্ত এ জনপদে।

বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশা কাটিয়ে ভোরেই জেগে উঠেছে পুবালি সূর্য। তবে কনকনে শীতের তাণ্ডবে বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই হিম বাতাসে বইছে শীতের ঝঞ্জা। রাত ৯টার মধ্যে প্রায় কোলাহল থেমে যায় শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলোতে। রাত বাড়তে থাকলে কুয়াশার সঙ্গে শিশির ঝরা বৃষ্টি পড়তে দেখা যায়।

তবে জীবিকার তাগিদে সকালে কাজে যোগ দেওয়া খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষি শ্রমিকরা। শীতের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রিকশা-ভ্যানে উঠতে চায় না। কনকনে শীতের কারণে দৈনন্দিন আয় কমে গেছে এসব শ্রমজীবী মানুষের।

নাজিম উদ্দিন, সাহেরুল ও আমজাদ আলী নামের স্থানীয়রা জানান, নতুন বছরের দুই দিন ঘন কুয়াশার পর আজ ভোরে সূর্য দেখা গেছে। তবে হাড় কাঁপছে কনকনে শীতে। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। আর রাতে খুব ঠান্ডা অনুভব হয়েছে।

ভ্যানচালক আবুল কালাম আজাদ ও নুরু মিয়া বলেন, সকালেই ঝকঝকে রোদ উঠেছে। তবে প্রচণ্ড ঠান্ডা। রাতে কী পরিমাণ ঠান্ডা করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। রোদ উঠায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি।

পাথর শ্রমিক আরশেদ, জামাল ও জুয়েল জানান, দুই দিন পর আজ রোদ উঠেছে। কিন্তু প্রচণ্ড শীত। যে শীতে হাড় কাঁপছে। কিন্তু কী করবো জীবিকার তাগিদে কাজে বেরিয়েছি। একই কথা বলেন চা শ্রমিকরাও।

তবে শীত উপেক্ষা করেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ও নির্বাচনী সভার মধ্য দিয়ে শীতে ঘাম ঝরাচ্ছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা।

বোদা উপজেলার দিনমজুর অলকেশ রায় বলেন, গত দুই দিনের ঠান্ডায় একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছি। তীব্র শীতের কারণে সকালবেলা কাজে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু কাজে না গেলে খাব কী? পেটের দায়ে শীতের মাঝেও কাজের খোঁজে বের হতে হচ্ছে।

এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে হাসপাতালগুলোয় প্রতিনিয়তই বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। জ্বর সর্দি কাশি ডায়রিয়া শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগে হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুরা। গড়ে ৩ শতাধিক রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া গড়ে অন্তত ৭০ জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বেডে জায়গায় না হওয়ায় মেঝেতে বিছানা করে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেবাদানে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

সদর উপজেলার নুনিয়াপাড়ার আমিনা বেগম বলেন, ঠান্ডা লেগে দুই দিন ধরে ছেলের ডায়রিয়া। মাঝে মাঝে বমিও করছিল। এখন চিকিৎসা নিতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তবে আগের তুলনায় আমার ছেলে কিছুটা সুস্থ হয়েছে।

জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, আজ সকালে সূর্য দেখা গেছে। তবে গত দুই দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কমে আজ সকাল ৬টায় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি, সকাল ৯টায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে, যা এই মৌসুমে সর্বনিম্ন। এতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এ জেলা হিমালয় বিধৌত এলাকায় অবস্থান হওয়ায় এখানে অন্যান্য এলাকা থেকে শীত আগে নামে। এ সময়টাতে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

আবহাওয়া

১৪৬ যাত্রী নিয়ে ব্যাংককের পথে এক ঘণ্টা উড়ে মিয়ানমার থেকে ফিরে এল বিমানের ফ্লাইট

কনকনে শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়ের মানুষ

প্রকাশের সময় : ১২:৩৪:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৪

পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি : 

কুয়াশা ভেদ করে সূর্য উঠলেও হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।

এর আগে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপমাত্রা (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা) রেকর্ড করা হয় ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। রাতভর বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে। সঙ্গে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে তীব্র শীত অনুভূত হয়।

এদিকে তাপমাত্রা ৭-এর ঘরে নেমে আসায় বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এতে করে তীব্র শীত দুর্ভোগে পড়েছে এ সীমান্ত জেলা। এতে করে হিমশীতল হাওয়ায় কনকনে শীত জেঁকে বসেছে সীমান্ত এ জনপদে।

বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশা কাটিয়ে ভোরেই জেগে উঠেছে পুবালি সূর্য। তবে কনকনে শীতের তাণ্ডবে বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই হিম বাতাসে বইছে শীতের ঝঞ্জা। রাত ৯টার মধ্যে প্রায় কোলাহল থেমে যায় শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলোতে। রাত বাড়তে থাকলে কুয়াশার সঙ্গে শিশির ঝরা বৃষ্টি পড়তে দেখা যায়।

তবে জীবিকার তাগিদে সকালে কাজে যোগ দেওয়া খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষি শ্রমিকরা। শীতের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রিকশা-ভ্যানে উঠতে চায় না। কনকনে শীতের কারণে দৈনন্দিন আয় কমে গেছে এসব শ্রমজীবী মানুষের।

নাজিম উদ্দিন, সাহেরুল ও আমজাদ আলী নামের স্থানীয়রা জানান, নতুন বছরের দুই দিন ঘন কুয়াশার পর আজ ভোরে সূর্য দেখা গেছে। তবে হাড় কাঁপছে কনকনে শীতে। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। আর রাতে খুব ঠান্ডা অনুভব হয়েছে।

ভ্যানচালক আবুল কালাম আজাদ ও নুরু মিয়া বলেন, সকালেই ঝকঝকে রোদ উঠেছে। তবে প্রচণ্ড ঠান্ডা। রাতে কী পরিমাণ ঠান্ডা করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। রোদ উঠায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি।

পাথর শ্রমিক আরশেদ, জামাল ও জুয়েল জানান, দুই দিন পর আজ রোদ উঠেছে। কিন্তু প্রচণ্ড শীত। যে শীতে হাড় কাঁপছে। কিন্তু কী করবো জীবিকার তাগিদে কাজে বেরিয়েছি। একই কথা বলেন চা শ্রমিকরাও।

তবে শীত উপেক্ষা করেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ও নির্বাচনী সভার মধ্য দিয়ে শীতে ঘাম ঝরাচ্ছেন প্রার্থী ও তার সমর্থকরা।

বোদা উপজেলার দিনমজুর অলকেশ রায় বলেন, গত দুই দিনের ঠান্ডায় একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছি। তীব্র শীতের কারণে সকালবেলা কাজে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু কাজে না গেলে খাব কী? পেটের দায়ে শীতের মাঝেও কাজের খোঁজে বের হতে হচ্ছে।

এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে হাসপাতালগুলোয় প্রতিনিয়তই বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। জ্বর সর্দি কাশি ডায়রিয়া শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগে হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুরা। গড়ে ৩ শতাধিক রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া গড়ে অন্তত ৭০ জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বেডে জায়গায় না হওয়ায় মেঝেতে বিছানা করে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সেবাদানে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

সদর উপজেলার নুনিয়াপাড়ার আমিনা বেগম বলেন, ঠান্ডা লেগে দুই দিন ধরে ছেলের ডায়রিয়া। মাঝে মাঝে বমিও করছিল। এখন চিকিৎসা নিতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তবে আগের তুলনায় আমার ছেলে কিছুটা সুস্থ হয়েছে।

জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, আজ সকালে সূর্য দেখা গেছে। তবে গত দুই দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কমে আজ সকাল ৬টায় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি, সকাল ৯টায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে, যা এই মৌসুমে সর্বনিম্ন। এতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এ জেলা হিমালয় বিধৌত এলাকায় অবস্থান হওয়ায় এখানে অন্যান্য এলাকা থেকে শীত আগে নামে। এ সময়টাতে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।