Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কটিয়াদীতে সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি রাস্তার কাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ করার শর্ত ছিল। কিন্তু কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী জেসি হতে চরিয়াকোনা-শিবনাথ সাহার বাজার ভায়া মাগুরা রাস্তাটি নির্ধারিত সময়ের সাড়ে তিন বছর পরও শেষ হয়নি। এখন বন্ধ রয়েছে নির্মাণ কাজ। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

আগে কষ্ট হলেও কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যেতো। এখন তাও আর সম্ভব হয় না। মাটি খুঁড়ে রাখার কারণে জাগায় জাগায় গর্ত আর সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। কাদামাটি পেরিয়ে কোনো রিকশা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও যাওয়ার জো নেই। কটিয়াদী উপজেলা সদর বা বাজারে যেতে হলে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। বিশেষ প্রয়োজন না হলে এখন আর সেদিকে যাই না। শুনেছি রাস্তার মাটি খুঁড়ে ঠিকাদার টাকা-পয়সা নিয়ে চলে গেছে। পাকা যে কবে হবে!’ হতাশা নিয়েই বলছিলেন এলাকার প্রবীণ আক্কাছ আলী। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকার চরিয়াকোনা হতে মানিকখালী বাজার রাস্তা ভায়া মুমুরদিয়া ইউনিয়নের মাগুরা বাজার হয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু হয় সাড়ে ৩ বছর পূর্বে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মানিকখালী জিসি হইতে চরিয়াকোনা ভায়া মাগুরা বাজার পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ পায় মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশান নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। শর্তানুযায়ী ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। প্রতিষ্ঠানটি যথাসময়ে কাজ শুরু করলেও তা শেষ করেনি। রাস্তার আংশিক কাজ করে একটি চলতিবিল (আংশিক) উঠিয়ে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ওই সড়কের কাজ হয়েছে ৩৫ শতাংশ।

স্থানীয়রা বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এ সড়কটি কাঁচা। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি পাকা করার জন্য আবেদন জানাচ্ছিলাম। কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ি পর বন্ধ রয়েছে কাজ। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি খুঁড়ে ফেলে রাখায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দের। বর্তমানে ওই রাস্তা হেঁটে চলাচলেরও অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এখন মনে হচ্ছে, আগের কাঁচা রাস্তাই ভালো ছিল।

স্থানীয় এডভোকেট জয়নাল আবেদীন জানান, রাস্তাটির নির্মাণকাজ যথা সময়ে শুরু হলেও শুধুমাত্র মাটি খুঁড়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তাটি বর্তমানে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে আছে। বৃষ্টি হলে মনে হয় রাস্তাটি যেন একটি খালে পরিণত হয়েছে। কৃষক, ব্যবসায়ী এবং সর্বসাধারণ তাদের নিত্যপণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে অনেকটা পথ ঘুরে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার মানববন্ধনও করেছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে না। জনদুর্ভোগ লাঘব করতে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে মুমুরদিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সামসুদ্দিন ভূঁইয়া জানান, উপজেলার মাগুরা, কুড়িখাই, জোয়ারিয়া, কমরভোগ হালুয়াপাড়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ নিত্য যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাটির নাজুক অবস্থার কারণে সর্বসাধারণসহ বিশেষ করে অসুস্থ ও রোগীদের নিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম ভোপান্তি পোহাতে হয়।

উপজেলা প্রকৌশলী অন্তু বল জানান, উল্লেখিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল হলে পুনঃটেন্ডার প্রক্রিয়ায় বেশ কালক্ষেপণ হয়। তাই প্রকল্পটি যথা সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি। যেহেতু নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তাই প্রকল্প ছোট করে জনগুরুত্বপূর্ণ অংশটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুনঃপ্রাক্কলন তৈরি করে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণ করা হবে।

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ডলি কনস্ট্রাশন বিভিন্ন উপজেলায় কাজ নিলেও কোনো কাজ শতভাগ সম্পন্ন করেনি। এ ব্যাপারে তাদেরকে বার বার নোটিশ করা হলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি। তাই ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ, ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিলসহ জরিমানা করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন আছে।

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

কটিয়াদীতে সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি রাস্তার কাজ

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৫:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ করার শর্ত ছিল। কিন্তু কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মানিকখালী জেসি হতে চরিয়াকোনা-শিবনাথ সাহার বাজার ভায়া মাগুরা রাস্তাটি নির্ধারিত সময়ের সাড়ে তিন বছর পরও শেষ হয়নি। এখন বন্ধ রয়েছে নির্মাণ কাজ। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলার ১৫ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

আগে কষ্ট হলেও কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যেতো। এখন তাও আর সম্ভব হয় না। মাটি খুঁড়ে রাখার কারণে জাগায় জাগায় গর্ত আর সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। কাদামাটি পেরিয়ে কোনো রিকশা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও যাওয়ার জো নেই। কটিয়াদী উপজেলা সদর বা বাজারে যেতে হলে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয়। বিশেষ প্রয়োজন না হলে এখন আর সেদিকে যাই না। শুনেছি রাস্তার মাটি খুঁড়ে ঠিকাদার টাকা-পয়সা নিয়ে চলে গেছে। পাকা যে কবে হবে!’ হতাশা নিয়েই বলছিলেন এলাকার প্রবীণ আক্কাছ আলী। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকার চরিয়াকোনা হতে মানিকখালী বাজার রাস্তা ভায়া মুমুরদিয়া ইউনিয়নের মাগুরা বাজার হয়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু হয় সাড়ে ৩ বছর পূর্বে।

জানা যায়, ২০১৮ সালে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মানিকখালী জিসি হইতে চরিয়াকোনা ভায়া মাগুরা বাজার পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ পায় মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশান নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। শর্তানুযায়ী ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। প্রতিষ্ঠানটি যথাসময়ে কাজ শুরু করলেও তা শেষ করেনি। রাস্তার আংশিক কাজ করে একটি চলতিবিল (আংশিক) উঠিয়ে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ওই সড়কের কাজ হয়েছে ৩৫ শতাংশ।

স্থানীয়রা বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এ সড়কটি কাঁচা। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি পাকা করার জন্য আবেদন জানাচ্ছিলাম। কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ি পর বন্ধ রয়েছে কাজ। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি খুঁড়ে ফেলে রাখায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দের। বর্তমানে ওই রাস্তা হেঁটে চলাচলেরও অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এখন মনে হচ্ছে, আগের কাঁচা রাস্তাই ভালো ছিল।

স্থানীয় এডভোকেট জয়নাল আবেদীন জানান, রাস্তাটির নির্মাণকাজ যথা সময়ে শুরু হলেও শুধুমাত্র মাটি খুঁড়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তাটি বর্তমানে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে আছে। বৃষ্টি হলে মনে হয় রাস্তাটি যেন একটি খালে পরিণত হয়েছে। কৃষক, ব্যবসায়ী এবং সর্বসাধারণ তাদের নিত্যপণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে অনেকটা পথ ঘুরে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার মানববন্ধনও করেছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে না। জনদুর্ভোগ লাঘব করতে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে মুমুরদিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সামসুদ্দিন ভূঁইয়া জানান, উপজেলার মাগুরা, কুড়িখাই, জোয়ারিয়া, কমরভোগ হালুয়াপাড়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ নিত্য যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাটির নাজুক অবস্থার কারণে সর্বসাধারণসহ বিশেষ করে অসুস্থ ও রোগীদের নিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম ভোপান্তি পোহাতে হয়।

উপজেলা প্রকৌশলী অন্তু বল জানান, উল্লেখিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল হলে পুনঃটেন্ডার প্রক্রিয়ায় বেশ কালক্ষেপণ হয়। তাই প্রকল্পটি যথা সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি। যেহেতু নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তাই প্রকল্প ছোট করে জনগুরুত্বপূর্ণ অংশটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুনঃপ্রাক্কলন তৈরি করে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। অনুমোদন হলে রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণ করা হবে।

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ডলি কনস্ট্রাশন বিভিন্ন উপজেলায় কাজ নিলেও কোনো কাজ শতভাগ সম্পন্ন করেনি। এ ব্যাপারে তাদেরকে বার বার নোটিশ করা হলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি। তাই ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ, ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিলসহ জরিমানা করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন আছে।