স্পোর্টস ডেস্ক :
প্রথম টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আড়াই দিনে জিতেছিল ভারত। দ্বিতীয় টেস্টেও শুরুটা অন্তত তেমন হয়েছিল। যদিও নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে প্রতিরোধে কিছুটা মান বাঁচাল সফরকারীরা। তিন দিনেই শেষ হতে বসা টেস্টের মীমাংসা হলো পঞ্চম দিনে এসে। কোনো রকমে ইনিংসে হার এড়াল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ম্যাচ বাঁচাতে পারল না তারা। ৭ উইকেটের জয়ে সিরিজ জিতল ভারত। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সিরিজ জিতলেন শুভমান গিল।
দাপুটে সিরিজ জয়ে একাধিক কীর্তি গড়েছে ভারত। প্রতিপক্ষ হিসেবে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টানা ১০ টেস্ট সিরিজ জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। এ ছাড়া ভারতের মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে টানা ৬ সিরিজ হেরেছে উইন্ডিজরা। এই ধারা শুরু হয়েছিল ড্যারেন স্যামি অধিনায়ক থাকাকালে, এখন সে ক্যারিবীয়দের হেড কোচ। একই ধারা চলমান আছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের পঞ্চম দিনে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৫৮ রান। হাতে ছিল ৯ উইকেট। এই পরিস্থিতি থেকে যে ভারত অনায়াসে জিতবে তা নিশ্চিতই ছিল। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার লোকেশ রাহুল ও সাই সুদর্শন জুটি দলকে জেতাতে পারবেন কি না নাকি আরও উইকেট পড়বে এ নিয়ে আলোচনা ছিল।
ব্যক্তিগত ৩৯ রানের মাথায় রোস্টন চেজের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরলেন সুদর্শন। ফলে অধিনায়ক শুভমানকে নামতে হয়। তিনি নেমে বড় শট খেলার চেষ্টা করছিলেন। সেই চেষ্টায় ১৩ রান করে আউট হন তিনিও। রাহুল অবশ্য এক দিকে টিকেছিলেন। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। ৫৮ রান করে অপরাজিত থাকলেন রাহুল।
দিল্লিতে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটে ৫১৮ রানে ডিক্লেয়ার করে ভারত। ১৭৫ রান করেন যশস্বী জয়সওয়াল। অপরাজিত ১২৯ রান করেন অধিনায়ক শুভমান। সুদর্শন খেলেন ৮৭ রানের ইনিংস। জবাবে ২৪৮ রানে শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস। সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন কুলদীপ যাদব। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলো-অন করায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য ক্যারিবীয় দলের ব্যাটিংয়ে অন্য ছবি দেখা যায়। তার একটা বড় কারণ অবশ্য দিল্লির উইকেট।
তৃতীয় দিনের শেষ সেশনেই দেখা যাচ্ছিল, দিল্লির পিচ থেকে কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না বোলাররা। সেই ছবি চতুর্থ দিনও দেখা গেল। প্রথম সেশনে জসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজরা সবরকম চেষ্টা করলেন। কিন্তু উইকেট তুলতে পারছিলেন না। দুই ক্যারিবীয় ব্যাটার জন ক্যাম্পবেল ও শাই হোপ ধীরেসুস্থে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিন স্পিনারকেও আক্রমণে আনেন অধিনায়ক শুভমান। তাতেও কিছু হচ্ছিল না। ছক্কা মেরে শতরান করেন ক্যাম্পবেল। টেস্টে এটি তার প্রথম শতরান। যদিও পরে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। জাদেজার বলে রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে ১১৫ রানের মাথায় আউট হন ক্যাম্পবেল। তৃতীয় উইকেটে ১৭৭ রানের জুটি গড়েছিলেন ক্যাম্পবেল ও হোপ।
ক্যাম্পবেল ফিরলেও খেলার ধরন বদলায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হোপের সঙ্গে জুটি বাধেন অধিনায়ক চেজ। মধ্যাহ্ন বিরতির পর শতরান করেন হোপও। শেষ ২০১৭ সালে টেস্টে শতরান করেছিলেন তিনি। আট বছর পর আবারও তিন অঙ্কে পৌঁছালেন। ৫১ বছর পর ভারতের মাটিতে এক ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটার শতরান করলেন।
এই পিচে খেলায় ফিরতে হলে কিছুটা ভাগ্যের সঙ্গও দরকার ছিল ভারতের। সেটাই হলো। শতরানের পর সিরাজের একটি বলে প্লেড-অন হলেন হোপ। বলে কিছুটা নিচু ছিল। ফলে শট খেলতে সমস্যা হয় তার। ১০৩ রানে আউট হন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নীচের দিকের ব্যাটাররা যে কুলদীপের বল বুঝতে পারছেন না তা এই ইনিংসেও দেখা গেল। যে কুলদীপ প্রথম ১৫ ওভার উইকেট পাননি, সেই তিনিই পরপর ৩ উইকেট তুলে নেন। অধিনায়ক চেজ ফিরলেন ৪০ রানে। দেখে মনে হচ্ছিল, আর বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ঠিক তখনই দশম উইকেটে জুটি বাঁধলেন জাস্টিন গ্রিভস ও জেইডেন সিলস। শেষ উইকেটে আরও ৭৯ রান যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে যে লক্ষ্য ৫০ রানের নিচে থাকতে পারত সেটাই বেড়ে দাঁড়ায় ১২১। অর্ধশতরান করেন গ্রিভস। ৩২ রান করে আউট হন সিলস। ভারতের বোলারদের মধ্যে কুলদীপ ও বুমরাহ ৩ করে উইকেট নেন। ২ উইকেট গেল সিরাজের দখলে।
১২১ রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেন যশস্বী জয়সওয়াল। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় ওভারেই ৮ রান করে আউট হন তিনি। যশস্বী আউট হওয়ার পর খেলার ধরন বদলে ফেলে ভারত। বোঝা যাচ্ছিল, চার দিনে খেলা শেষ করার মানসিকতা থেকে সরে এসেছে তারা। রাহুল ও সুদর্শন ধৈর্য্য ধরে ব্যাট করেন। আর যাতে কোনও উইকেট না পড়ে সেই লক্ষ্য ছিল তাদের। চতুর্থ দিনের শেষ পর্যন্ত তারাই ক্রিজে ছিলেন। পঞ্চম দিন প্রথম ঘণ্টায় বাকি রান করে ফেলে ভারত।
দুই ইনিংস মিলিয়ে আট উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ হন কুলদিপ ইয়াদাভ। ম্যান অব দা সিরিজের স্বীকৃতি পান রাভিন্দ্রা জাদেজা। সিরিজে এক ইনিংসেই ব্যাট করে অপরাজিত সেঞ্চুরি করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার, দুই টেস্টে উইকেট শিকার করেন আটটি।
জয়ের পর অধিনায়ক শুবমান গিল বলেন, নেতার দায়িত্বে মানিয়ে নিচ্ছেন তিনি। ভারতকে নেতৃত্ব দিতে পারা অনেক বড় সম্মানের। বলতে পারেন, এসবে এখন অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। দলকে সামলানো, অধিনায়কত্ব করা, এসব বড় প্রাপ্তি।
তিনি বলেন, নেতৃত্বের ব্যাপারটি হলো, ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। আমি চেষ্টা করি, ম্যাচের অবস্থা বুঝে সেরা বিকল্পটি বেছে নিতে। কখনও কখনও সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হয়, নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হয়ে কে গুরুত্বপূর্ণ রান করতে পারে বা উইকেট নিতে পারে, সেটা ঠিক করতে হয়।
প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের পর দ্রুতই শুরু হচ্ছে গিলের নেতৃত্বের নতুন অধ্যায়। টেস্ট জয়ের পরদিনই অস্ট্রেলিয়ার উড়ানে উঠবেন তিনি ও তার দল। সেখান থেকে শুরু হবে ভারতের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তার পথচলা।
অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি শুরু আগামী রোববার।