নিজস্ব প্রতিবেদক :
ওমানে রাজনৈতিক সভা থেকে আটক হওয়া সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিসহ ১৭ জন বাংলাদেশি মুক্ত হয়েছেন। মাস্কাটের বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তারা মুক্ত হন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরীন।
বৃহস্পতিবার ( ৩ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
মুখপাত্র বলেন, দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্য মতে সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার এবং প্রবাসী বাংলাদেশিসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশি হেফাজত থেকে আমাদের কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের মুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসীদের সে দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ব্যাপারে গুরত্বারোপ করে থাকেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি প্রত্যাশা হলো, সফরে গিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে স্থানীয় আইন-কানুন মেনে চলবেন। এছাড়া এ ধরনের কার্যকলাপ এড়িয়ে চলবেন। এ ধরনের ঘটনা প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিব্রতকর।
ওমানে বাংলাদেশি এমপিকে কেন গ্রেফতার করা হলো? জানতে চাইলে সেহেলী সাবরীন বলেন, আমরা যা জানতে পারলাম তা হলো, ওমানে এ ধরনের কোনো সংলাপ বা কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা নিষেধ। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি এ সভার আয়োজন করেছিলেন তারা ওমান সরকারের অনুমতি নেননি বলে জানতে পেরেছি।
এমপি খাদিজাতুল আনোয়ারকে কোর্ট থেকে নাকি পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত করতে হয়েছে, মুচলেকা দিতে হয়েছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছুর একটা অফিসিয়াল প্রক্রিয়া রয়েছে। সেখানে দূতাবাস যখন হস্তক্ষেপ করেছে, সেখানে একটি আন্ডারটেকিং দিয়ে পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্ত করেছে। অনুষ্ঠানটি রাত ১০টায় আয়োজন করা হয়েছিল। পরদিন সকালেই দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তাদের মুক্ত করা হয়। স্থানীয় যে আইন সে অনুযায়ী পারমিশনটা নেওয়া হয়নি। যার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
এই সময় তিস্তা ইস্যুতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন বাংলাদেশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে জানিয়ে সেহেলি সাবরীন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি গত ২৫ জুলাই তাদের ২২তম প্রতিবেদন ভারত সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। সেখানে তারা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বাংলাদেশের সাথে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে অর্থবহ সংলাপ শুরু করতে ভারত সরকারকে যে সুপারিশ করেছে, তা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমাদের দিল্লিস্থ মিশন থেকেও আমরা এ ব্যাপারে অবগত হয়েছি। বিষয়টি অবশ্যই আশাব্যাঞ্জক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে এই সংসদীয় কমিটিতে বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেসসহ ভারতের সব রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যরা আছেন। তাই এ ধরনের একটি সুপারিশ আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। এই সুপারিশকে উদ্ধৃত করে বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগামী দিনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে বলে আমরা আশা করি।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ও নুর চৌধুরীকে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি এবং ওই দেশগুলোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশনের মাধ্যমে নিয়মিত এই আত্মস্বীকৃত খুনিদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে দাবি জানিয়ে চলেছে। উচ্চ পর্যায়ের সকল দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এই ন্যায্য দাবি উত্থাপন করে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, অপরাধী তার সাজা ভোগ থেকে রেহাই পেলে তা শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকেই বাধাগ্রস্ত করে না, বরং তা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি ও পরিবারের মানবাধিকারকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী হারজিৎ এস সাজ্জানের সাক্ষাতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠককালে এবং বাংলাদেশে সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে খুনিদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
ওয়াশিংটনে চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত ৯ম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সংলাপেও পূর্ববর্তী বছরগূলোর মতো পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের এই দাবি উত্থাপন করেন।
মুখপাত্র আরও বলেন, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আত্মস্বীকৃত এই খুনিরা এসব দেশের আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অপরাধের শাস্তি এড়িয়ে চলছে। তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সুরাহা করার বিষয়ে দেশ দুটির পক্ষ থেকে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা উভয় দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরই বিষয়টি তাদের বিচার বিভাগের এখতিয়ারাধীন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট আইনগত প্রক্রিয়ার জটিলতা উল্লেখ করে বাংলাদেশের দাবির ব্যাপারে তাদের বিচার বিভাগ ওয়াকিবহাল রয়েছে বলে জানিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে জানান সেহেলি সাবরীন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মিডিয়াতে প্রকাশিত তথ্যমতে আগ্রহী বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথ সহায়তা করবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন, তার দৌড়ঝাঁপে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন হয়নি। তাহলে সরকারের তরফ থেকে এটা বলা হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়ে গত ২৬ জুলাই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তার মিডিয়া ব্রিফিংয়ে খুব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬১-এর কথা ১৩ জন রাষ্ট্রদূতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতদের নিজস্ব ইন্টারপ্রেটেশন থাকতে পারে। তবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তারা ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬১-এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন।