নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দল একমত হয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করার এক দফা দাবি জানিয়েছি। আমি মনে করি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করতে সক্ষম হবো।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে এক হয়েছি। একটা দফার মধ্যে এসেছি, এই রেজিমের (সরকার) পদত্যাগের জন্য। আমরা স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন চাই বলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার চাই।
বিএনপি মহাসচিব আশা করেন যে, আন্দোলনের মধ্যদিয়ে দাবি অর্জন হবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমরা আজকে যেভাবে ঐক্য হয়েছি আন্দোলনের মধ্যদিয়ে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের দাবি অর্জন করতে পারবো। আমরা বিশ্বাস করি জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ও চেষ্টার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন জয়ী হয়েছে। এবারও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তাদের গণতন্ত্রকে পূনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
সরকারের দমননীতি চালাচ্ছে দাবি করে এর চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল। বলেন, আমরা যে সময়টা অতিক্রম করছি এই সময়টা জাতির জন্য সবচাইতে একটা সংকটময় সময়। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রের পক্ষে তার সারাটা জীবন দিয়েছেন তিনি আজকে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় এই শাসকগোষ্ঠির চরম প্রতিহিংসার কারণে বিনা চিকিৎসায় মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। আমাদের প্রায় ৭শ তরুণ যুবক তার মধ্যে তিনজন সংসদ সদস্য ছিলেন তাদেরকে গুম করা হয়েছে এনফোর্স ডিস অ্যাপিয়ারেন্সের কারণে। আমাদের প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চলছে। নির্বাচনে যেন অংশ নিতে না পারে সেজন্য আমাদের অনেককেই নির্বাচনের পূর্বে সাজা দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার এই অবস্থা তৈরি করেছে। এর একটাই মাত্র কারণ যেন বিরোধী দল নির্বাচনে না আসতে পারে, নির্বাচনে না যোগ দিতে পারে। যেখানে একমাত্র আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় যাবে, শাসকগোষ্ঠি ক্ষমতায় যাবে।
সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ খসরু বলেন, আমাদের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে জনগণের আশা-আকাঙক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিই প্রতিফলিত হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক দেশ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে কাতারবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করার পাশাপাশি লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম ও রাজনীতি নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির স্বাধীনতা, সমতা, সমৃদ্ধির ক্ষমতায়নের জন্য দেশীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের দল বিএনপি জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিত করতে নিবেদিত।
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বিশ্বে গৃহীত ইন্দো-প্যাসেফিক কৌশল বৈশ্বিক একটি অবাধ, উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থাপত্যকে নতুন করে ঢেলে সাজাবে বলে আশা করা যায়। সংযোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বঙ্গোপসাগরের শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধ্বের পাশাপাশি ভারত মহাসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা সহযোগিতা, নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সম্প্রীতি, নিরাপদ নৌ চলাচল, টেকসই অর্থনীতি, মুক্ত বাণিজ্য, জলবায়ু, স্বাস্থ্য, মহামারীর মতো হুমকিসমূহের মোকাবিলার পাশাপাশি একটি অবাধ, মুক্ত, উদার, গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ ইন্দা-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গ্রহণ করেছি।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমর, তাবিথ আউয়াল, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহেদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানী, জাপান, ফ্রান্স, কোরিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।