স্পোর্টস ডেস্ক :
শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে এশিয়া কাপ শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। সেই লঙ্কানদের বিপক্ষে সুপার ফোরে বাঁচা-মরার ম্যাচে মাঠে নামে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান সংগ্রহ করে লঙ্কানরা। রান তাড়ায় ব্যাট করতে নেমে বেশ সাবধানী শুরু করে টাইগাররা। তবে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ২৩৪ রানে বাংলাদেশ অলআউট হলে, ২১ রানের জয় পায় লঙ্কানরা। এতে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিলো সাকিব-লিটনদের দল।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচটিতে একজন ব্যাটার কম নিয়ে নেমেছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। আফিফ হোসেনকে বসিয়ে একাদশে যোগ করা হয় স্পিনার নাসুম আহমেদকে। সেই নাসুম নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে শ্রীলঙ্কার রান তাড়ায় শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নাটকীয় কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন তিনি। তবে বাউন্ডারিজুড়ে লঙ্কান ফিল্ডারদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য সেটি যথেষ্ট ছিল না। শেষমেষ নাসুমের চেষ্টা থামে ‘জুনিয়র মালিঙ্গা’খ্যাত মাথিশা পাথিরানার ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুই টাইগার ওপেনার নাইম ও মিরাজ। দলকে ভালো শুরু এনে দন এই দুই ব্যাটার। লঙ্কান বোলারদের কোন সুযোগ না দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন মিরাজ-নাইম। তবে দলীয় ৫৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
২৯ বলে ২৮ রান করে ফেরেন মেক শিফট ওপেনার মিরাজ। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন লিটন দাস। নাইমকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করে লিটন। তবে দলীয় ৬০ রানে ফের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৪৬ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফিরে যান নাইম। এরপর তৃতীয় উইকেটে আসা টাইগার অধিনায়ক সাকিবও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিব।
নামের পাশে ৩ রান যোগ করতেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। এরপর ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন দাসও। স্পিনার ওয়াল্লালেগের ঘূর্ণিতে আটকা পড়েন তিনি। পঞ্চম উইকেটে জয়ের আশা মিটিমিটি জ্বালিয়ে রেখেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও তাওহীদ হৃদয়। ধীরে ধীরে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন লক্ষ্যের কাছে। তবে বেশিদূর গেলো না সেই পথ, ৭২ রানের এই জুটিতে আবারো বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন শানাকা।
দলীয় ১৫৫ রানে মুশফিককে ফেরান লঙ্কান এই পেসার। ৪৮ বলে ২৯ রান করেন মুশফিক। দলের এমন চাপের মাঝেও হেসে উঠেছে হৃদয়ের ব্যাট। ষষ্ট উইকেটে শামীমকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তবে দলীয় ১৮১ রানে শামীম ৫ রানে ফিরলে ভাঙে এই জুটিও। এরপর বাংলাদেশকে আশা জাগিয়ে থাকা হৃদয় দলীয় ১৯৭ রানে সাজঘরে ফেরেন। ৯৭ রানে ৮২ করেন এই ডানহাতি ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ৪৮.১ ওভারে ২৩৪ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই উইকেট পেয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। তবে ডিআরএসের সহায়তায় জীবন ফিরে পান ওপেনার পাথুম নিসাংকা। এরপর দুই লঙ্কান ওপেনার মিলে ঝড়ো সূচনা করেন। প্রথম পাঁচ ওভারে তুলে নেন বিনা উইকেটে ২৬ রান।
ষষ্ঠ ওভার করতে এসে প্রথম দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হজম করেন হাসান মাহমুদ। কিন্তু তৃতীয় বলেই তিনি পান উইকেট। তার দারুণ এক বলে উইকেটের পেছনে দিমুথ করুণারত্নের ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। এরপরের কিছুটা সময় ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ হতাশার। শুরুতে মুশফিকুর রহিম ও পরে শামীম পাটোয়ারী দুটি ক্যাচ ছাড়েন। মেন্ডিসের ক্যাচ ছেড়ে শামীম দেন ছক্কা।
পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৫১ রান খরচ করে ১ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সাকিব আল হাসান এর মধ্যেই ব্যবহার করে ফেলেন পাঁচ বোলার। অল্প সময় পরপর বোলিং বদলাচ্ছিলেন তিনি, সেটি অবশ্য কাজেও এসেছে। যদিও উইকেট না পাওয়ার হতাশা কাটছিল না। গত কয়েক ম্যাচে শরিফুল ইসলাম নতুন বলে ভালো করছিলেন, এদিন তেমন সুযোগ পাননি।
তবে তিনিই বাংলাদেশকে এনে দেন দ্বিতীয় উইকেট। ৬০ বলে ৪০ রান করা পাথুম নিশাঙ্কাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি এই ব্যাটার। এরপর আরেক সেট ব্যাটার কুশল মেন্ডিসকেও সাজঘরে ফেরান শরিফুল। তার বাউন্সার থার্ড ম্যানের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে তাসকিন আহমেদের হাতে ক্যাচ দেন ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৭৩ বলে ৫০ রান করা মেন্ডিস। দ্রুত দুই সেট ব্যাটারকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন শরিফুল।
এরপর বাংলাদেশের বোলাররা রীতিমতো চেপে ধরেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটারদের। নাসুম ওভারপ্রতি রান দিচ্ছিলেন তিনের নিচে, সাকিবও তাই। আরেকদিকে উইকেট এনে দেন পেসাররা। তাসকিন আহমেদ ২৩ বলে ১০ রান করা চারিথ আশালাঙ্কাকে আউট করেন। ১৬ বলে ৬ রান করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা হাসান মাহমুদের বলে ক্যাচ দেন মুশফিকুর রহিমের হাতে।
ততক্ষণে ক্রিজে চলে এসেছেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। তিনি স্পিন খেলছিলেন খুব ভালো, ইনিংস এগিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। তার সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ৪০তম ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। তারা ছিল বেশ চাপেও। এরপর ধীরে ধীরে দলকে তুলে আনার চেষ্টা করেন সামারাবিক্রমা ও শানাকা।
পরের ৫ ওভারে ৪৩ রান তুলে শ্রীলঙ্কা রানটাকে বেশ ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার আভাস দেয়। কিন্তু এরপর আবারও বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান বোলাররা। সাকিব ৪৪তম ওভারে ৪ রান দেওয়ার পর ৪৬তম ওভারে এসে ৫ রান দেন। এর ঠিক পরের ওভারেই দুর্দান্ত বোলিং করেন হাসান মাহমুদ, দেন কেবল ৩ রান। ওই ওভারেই দাসুন শানাকাকে বোল্ডও করেন হাসান।
তবুও হাল ছাড়েননি সামারাবিক্রমা। সাকিবের করা ৪৮তম ওভারে ১১ রান নেওয়ার পরেরটিতে হাসান মাহমুদকে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান। তাসকিন আহমেদের শেষ ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ওই ওভারেও একটি চার ও ছক্কা হাঁকান। ৮ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৭২ বল খেলে ৯৩ রান করেন সামারাবিক্রমা।
বাংলাদেশের তিন পেসারের মধ্যে তাসকিন ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে তিন, শরিফুল ৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে দুই ও হাসান মাহমুদ ৯ ওভারে ৫৭ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন। ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে সাকিব ও ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে নাসুম উইকেটশূন্য ছিলেন। ৩ ওভারে ১৪ রান দেওয়া মিরাজও উইকেট পাননি।