Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পণ্য বহুমুখীকরণ অপরিহার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এলডিসি পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৈরি পোশাক ছাড়াও রফতানির সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের পণ্য বহুমুখীকরণ অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। ‘এলডিসি পরবর্তীতে বাংলাদেশের রফতানি খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে ডিসিসিআই।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও তৈরি হবে, তবে সেগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। নীতি সহায়তা ও সংস্কার, অর্থায়ন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি এবং আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জগুলো এর মধ্যে অন্যতম।

সেলিম রায়হান বলেন, গত ৫ দশকে আমাদের রপ্তানি বাড়লেও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্রকরণে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশসমূহের অগ্রগতি অনেক বেশি। মুদ্রানীতি এবং অর্থবিষয়ক নীতিমালার সমন্বয়, সরকারি সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বাড়ানো, খেলাপি ঋণ হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের মুদ্রানীতির কার্যকারিতা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি, এমতাবস্থায় পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নির্ধারণের আরো সচেতন হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন। সর্বোপরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে এসইজেডগুলোকে সব ধরনের সেবা প্রাপ্তি এবং ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে অর্থয়ান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একটি সহায়ক বিনিময় হার নির্ধারণ করার ওপর জোরারোপ করেন।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি অংশগ্রহণ করেন।

বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই পোশাক খাতের প্রণোদান প্রত্যাহার করা হলো, যদি এখাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, এমতাবস্থায় তিনি এখাতের প্রণোদনা সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, তৈরি পোষাক ছাড়া পাট, চামড়া ও চা প্রভৃতি পণ্যে রপ্তানি তেমন উল্লেখজনক নয়, কারণ হলো নীতি সহায়তা ও সক্ষমতার অপ্রতুলতা। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো কিভাবে তাদের রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিচ্ছে তা অনুসরণ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার নির্ধারনের উপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস করতে না পারলে আমাদের উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারাবে। দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আশ্বাস বাড়ালে দেশি-বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, তৈরি পোষাক, ওষুধ, চামড়া ও পাদুকা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটপণ্যের মত শিল্পগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এফএমসিজি, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা-প্রকৌশল, হালাল পণ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে মনোযোগি হতে হবে। সম্ভাবনাময় খাত সমূহের বিকাশে ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স, এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ড এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন প্রভৃতি হতে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে আরো এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জ্বালানীসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সেই সাথে বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘হাই এন্ডেড’ খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং পণ্য প্রসারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য মেলার আয়োজনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও আমাদের কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজতকরণ শিল্পটিকে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার শিল্পে রূপান্তরিত করা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পণ্য বহুমুখীকরণ অপরিহার্য

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

এলডিসি পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৈরি পোশাক ছাড়াও রফতানির সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের পণ্য বহুমুখীকরণ অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। ‘এলডিসি পরবর্তীতে বাংলাদেশের রফতানি খাতের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে ডিসিসিআই।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সুযোগও তৈরি হবে, তবে সেগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। নীতি সহায়তা ও সংস্কার, অর্থায়ন, লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি এবং আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জগুলো এর মধ্যে অন্যতম।

সেলিম রায়হান বলেন, গত ৫ দশকে আমাদের রপ্তানি বাড়লেও রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্রকরণে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশসমূহের অগ্রগতি অনেক বেশি। মুদ্রানীতি এবং অর্থবিষয়ক নীতিমালার সমন্বয়, সরকারি সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বাড়ানো, খেলাপি ঋণ হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের নির্ভরতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো এলডিসি পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের মুদ্রানীতির কার্যকারিতা তেমন পরিলক্ষিত হয়নি, এমতাবস্থায় পরিস্থিতি বিবেচনায় আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নির্ধারণের আরো সচেতন হওয়ার জন্য তিনি পরামর্শ দেন। সর্বোপরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে এসইজেডগুলোকে সব ধরনের সেবা প্রাপ্তি এবং ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে অর্থয়ান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একটি সহায়ক বিনিময় হার নির্ধারণ করার ওপর জোরারোপ করেন।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ এবং সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি অংশগ্রহণ করেন।

বিজিএমইএ পরিচালক ও উর্মি গার্মেন্টস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই পোশাক খাতের প্রণোদান প্রত্যাহার করা হলো, যদি এখাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়, এমতাবস্থায় তিনি এখাতের প্রণোদনা সুবিধা ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সহায়ক এক্সচেঞ্জ রেট থাকা দরকার বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, তৈরি পোষাক ছাড়া পাট, চামড়া ও চা প্রভৃতি পণ্যে রপ্তানি তেমন উল্লেখজনক নয়, কারণ হলো নীতি সহায়তা ও সক্ষমতার অপ্রতুলতা। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো কিভাবে তাদের রপ্তানিকারকদের সহায়তা দিচ্ছে তা অনুসরণ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বৈদেশিক মুদ্রার একক বিনিময় হার নির্ধারনের উপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস করতে না পারলে আমাদের উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারাবে। দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আশ্বাস বাড়ালে দেশি-বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, তৈরি পোষাক, ওষুধ, চামড়া ও পাদুকা, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট ও পাটপণ্যের মত শিল্পগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এফএমসিজি, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা-প্রকৌশল, হালাল পণ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে মনোযোগি হতে হবে। সম্ভাবনাময় খাত সমূহের বিকাশে ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স, এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ড এবং ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন প্রভৃতি হতে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে আরো এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা জ্বালানীসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সেই সাথে বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ‘হাই এন্ডেড’ খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং পণ্য প্রসারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্য মেলার আয়োজনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও আমাদের কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজতকরণ শিল্পটিকে যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার শিল্পে রূপান্তরিত করা সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।