Dhaka রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবার কেউ বলতে পারবে না, দিনের ভোট রাতে হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনে কেউ বলতে পারবে না, দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এবারের ভোটে কারচুপি হয়েছে এমন কিছু বলার ক্ষমতা কারও নেই। কারণ, স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবারের নির্বাচন অত্যন্ত স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। শুধুমাত্র নৌকাকে বিজয়ী করতে ১০৩ বছরের বৃদ্ধও ভোটকেন্দ্রে গেছেন।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এবার অত্যন্ত স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটা আপনারা দেখেছেন। নির্বাচন কমিশন আইন করে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। সেই নির্বাচন কমিশনকে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করতে দিয়েছি। কোনো রকম হস্তক্ষেপ আমরা করিনি, সহযোগিতা করেছি। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কিছুই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত ছিল। যেন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। আমরা কখনো হস্তক্ষেপ করিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীসহ যারা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন,’অনেকেরই অনেক রকম স্বপ্ন আছে, অনেকেই নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না আসে সেটা ঠেকাতে চেয়েছিল তারপরেও ৪১.৮ ভাগ ভোট পড়েছে। এটা সোজা কথা নয়! আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে আরেকটি দল তখন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কিছু দালাল শ্রেণির লোক আছে, আমাদের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। মনে হয়, অনির্বাচিত কেউ এলে তাদের ভালো লাগে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের মতো এবারও ধ্বংসাত্মক কাজ শুরু করেছে। ভোট বর্জনের জন্য লিফলেটও বিতরণ করেছে। আমরা বাধা দেইনি। কিন্তু জনগণ শত বাধা বিপত্তি ও অগ্নিসন্ত্রাস এবং ভয়ভীতি মোকাবিলা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আজ আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের ধারা আছে বলে মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে। সবদিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ও বাইরের কিছু দালাল শ্রেণির লোক আছে, আমাদের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। মনে হয়, অনির্বাচিত কেউ এলে তাদের ভালো লাগে। আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা ভোট দিয়ে আমাদের সমর্থন জুগিয়েছে।

তিনি বলেন, ৭৬ থেকে ’৯১ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু আয় বাড়েনি। মানুষের পরনে কাপড় ছিল না। বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে পরানো হতো। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার সব কেড়ে নিয়েছে। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কোনো কিছু ছিল না। থাকার ঘর ছিল না, বাড়ি ছিল না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল এ দেশের মানুষ। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন এই বাংলাদেশে; সবার আগে ছুটে এসেছিলেন এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য। এদেশে অন্ন, বস্ত্র ,বাসস্থান, শিক্ষার কোনো কিছু ছিল না। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচের বাস করত। একবেলা খাবার পেত না, দিনের পর দিন না খেয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়েছে। সেই মানুষদের মুক্তির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেতে হয়েছিল তাকে।

তিনি বলেন, এদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, কী কী কাজ করা দরকার, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি গড়ে তুলবেন সেই সব বিষয়ে তিনি ভাষণেই উল্লেখ করেছিলেন। যে ভাষণ তিনি এ জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ ৯ মাস কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেখানে তাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হয়েছিল তাকে। এমনকি একটি পত্রিকাও তার জন্য রাখা হয়নি। তার ফাঁসির হুকুম হয়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন তিনি। দেশে পা রেখেই ছুটে যান বাংলার জনগণের সামনে। ১০ জানুয়ারি এখানেই তিনি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে একটি দেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর পরিকল্পনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ সেটা তিনি তুলে ধরেছিলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না আসলে বাংলাদেশ এগোতে পারতো না। উন্নয়নের দিকে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ বন্ধ করতে পারবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা বসেছে… ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল সৃষ্টি করে, আর কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে, এর ওপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী… যদিও ৭৫ এর পরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করানো হয়। তারা মুক্তি পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করেছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা বসেছে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল সৃষ্টি করে, আর কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে। যার ওপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী, যদিও পঁচাত্তরের পরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা মুক্তি পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আমাকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। আমি ফিরে আসি এমন একটি দেশে, যেখানে আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের বিচার করবে না বলে ইনডেমনিটি জারি করা হয়েছিল। তাদেরকে (বঙ্গবন্ধুর খুনি) বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের চাকরি দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের যেসব দোসর আল বদর এবং রাজাকারের সাথে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে লুটপাট করেছিল, আমাদের দেশে মা-বোনদেরকে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতর তুলে দিয়েছিল, ক্যাম্পে নিয়ে মাসের পর মাস নির্যাতন করেছিল, সেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করেছিলেন জাতির পিতা। ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতা আসে তারা তাদের ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী বানায়, প্রধানমন্ত্রী বানায়, তাদের ক্ষমতা বসায়।

তিনি আরও বলেন, একদিকে খুনি, আরেকদিকে যুদ্ধাপরাধী, তারাই ক্ষমতায়…। সেই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে ফিরে আসি। তখন দারিদ্র্যে জর্জরিত এ দেশের মানুষ… দুর্ভিক্ষও লেগেছিল। জাতির পিতার যে আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন এ দেশের মানুষকে নিয়ে, সেটিও তখন পূরণ হয়নি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এ দেশে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, কী কী কাজ করা দরকার… একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি (বঙ্গবন্ধু) গড়ে তুলবেন, সেই ভাষণ তিনি এই জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি… আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ নয় মাস কারাগারে বন্দি, সেই জেল, যেখানে শীতের সময় বরফ, গরমের সময় গরম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কীভাবে রেখেছিল তারা, সঠিকভাবে খাবারও দিত না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, কোনো কিছুই ছিল না। তার বিরুদ্ধে মামলা এবং ফাঁসির হুকুম…, সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে, লন্ডন থেকে বাংলাদেশের মাটিতে যখন নামেন… তিনি ছুটে এসেছিলেন বাংলার জনগণের সামনে।

যারা এবারের ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার অবাক লাগে সামরিক একনায়করা যখন ভোট কারচুরি করে ক্ষমতায় আসে, সেই নির্বাচন নিয়ে কেউ কথা বলতো না। যখন নির্বাচন মানে ছিল ১০টা হোন্ডা ২০টা গোণ্ডা নির্বাচন ঠান্ডা। আমরা যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি তখনই আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার দুঃখ লাগে, যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর মেলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা দখল করে তখন তারা (গণতন্ত্র নিয়ে সোচ্চার ব্যক্তিরা) কিছু বলেনি। কিন্তু যখন দেশের গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখে নির্বাচন করা হয়েছে তা নিয়ে কথা বলে। কিছু মানুষ চায় অনির্বাচিত সরকার আসুক। আমার বাবা-মাকে যখন হত্যা করা হয় তখন বিচার চাওয়া অধিকারটুকুও ছিল না।
বিএনপি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে লিফলেট বিতরণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে আরেকটি দল তখন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে। তবে সেই চেষ্টায় বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, তাদের আর রাজনৈতিক কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

বিএনপিকে দেশবাসী ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করেছিল, আর গ্রহণ করেনি বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশে যে অগ্রযাত্রা সেই অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়তে এ সময় পুনরায় অঙ্গীকার করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের শক্তিই সবথেকে বড় শক্তি, সেটা আরেকবার প্রমাণ হয়েছে।

তিনি বলেন, এই মিটিং থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে যাব, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমার চিঠি হস্তান্তর করব। এরপর আমরা সরকার গঠন করব।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

এবার কেউ বলতে পারবে না, দিনের ভোট রাতে হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৭:৪৭:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনে কেউ বলতে পারবে না, দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এবারের ভোটে কারচুপি হয়েছে এমন কিছু বলার ক্ষমতা কারও নেই। কারণ, স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবারের নির্বাচন অত্যন্ত স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। শুধুমাত্র নৌকাকে বিজয়ী করতে ১০৩ বছরের বৃদ্ধও ভোটকেন্দ্রে গেছেন।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এবার অত্যন্ত স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটা আপনারা দেখেছেন। নির্বাচন কমিশন আইন করে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। সেই নির্বাচন কমিশনকে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করতে দিয়েছি। কোনো রকম হস্তক্ষেপ আমরা করিনি, সহযোগিতা করেছি। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কিছুই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত ছিল। যেন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। আমরা কখনো হস্তক্ষেপ করিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীসহ যারা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন,’অনেকেরই অনেক রকম স্বপ্ন আছে, অনেকেই নির্বাচন বন্ধ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না আসে সেটা ঠেকাতে চেয়েছিল তারপরেও ৪১.৮ ভাগ ভোট পড়েছে। এটা সোজা কথা নয়! আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে আরেকটি দল তখন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কিছু দালাল শ্রেণির লোক আছে, আমাদের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। মনে হয়, অনির্বাচিত কেউ এলে তাদের ভালো লাগে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের মতো এবারও ধ্বংসাত্মক কাজ শুরু করেছে। ভোট বর্জনের জন্য লিফলেটও বিতরণ করেছে। আমরা বাধা দেইনি। কিন্তু জনগণ শত বাধা বিপত্তি ও অগ্নিসন্ত্রাস এবং ভয়ভীতি মোকাবিলা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আজ আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের ধারা আছে বলে মানুষের ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে। সবদিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ও বাইরের কিছু দালাল শ্রেণির লোক আছে, আমাদের উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। মনে হয়, অনির্বাচিত কেউ এলে তাদের ভালো লাগে। আমি জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা ভোট দিয়ে আমাদের সমর্থন জুগিয়েছে।

তিনি বলেন, ৭৬ থেকে ’৯১ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু আয় বাড়েনি। মানুষের পরনে কাপড় ছিল না। বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে পরানো হতো। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার সব কেড়ে নিয়েছে। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কোনো কিছু ছিল না। থাকার ঘর ছিল না, বাড়ি ছিল না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল এ দেশের মানুষ। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন এই বাংলাদেশে; সবার আগে ছুটে এসেছিলেন এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য। এদেশে অন্ন, বস্ত্র ,বাসস্থান, শিক্ষার কোনো কিছু ছিল না। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচের বাস করত। একবেলা খাবার পেত না, দিনের পর দিন না খেয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়েছে। সেই মানুষদের মুক্তির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেতে হয়েছিল তাকে।

তিনি বলেন, এদেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, কী কী কাজ করা দরকার, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি গড়ে তুলবেন সেই সব বিষয়ে তিনি ভাষণেই উল্লেখ করেছিলেন। যে ভাষণ তিনি এ জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ ৯ মাস কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেখানে তাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নভাবে রাখা হয়েছিল তাকে। এমনকি একটি পত্রিকাও তার জন্য রাখা হয়নি। তার ফাঁসির হুকুম হয়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে লন্ডন হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছিলেন তিনি। দেশে পা রেখেই ছুটে যান বাংলার জনগণের সামনে। ১০ জানুয়ারি এখানেই তিনি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে একটি দেশের ভবিষ্যৎ, উন্নয়ন, সব পরিকল্পনা, দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর পরিকল্পনা, মহান মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ সেটা তিনি তুলে ধরেছিলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় না আসলে বাংলাদেশ এগোতে পারতো না। উন্নয়নের দিকে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ বন্ধ করতে পারবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা বসেছে… ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল সৃষ্টি করে, আর কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে, এর ওপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী… যদিও ৭৫ এর পরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করানো হয়। তারা মুক্তি পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করেছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা বসেছে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল সৃষ্টি করে, আর কিছু এলিট শ্রেণি তৈরি করে। যার ওপর নির্ভর করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী, যদিও পঁচাত্তরের পরে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী বেইমানি করে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা মুক্তি পেয়ে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আমাকে দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। আমি ফিরে আসি এমন একটি দেশে, যেখানে আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের বিচার করবে না বলে ইনডেমনিটি জারি করা হয়েছিল। তাদেরকে (বঙ্গবন্ধুর খুনি) বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের চাকরি দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের যেসব দোসর আল বদর এবং রাজাকারের সাথে হাত মিলিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে লুটপাট করেছিল, আমাদের দেশে মা-বোনদেরকে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতর তুলে দিয়েছিল, ক্যাম্পে নিয়ে মাসের পর মাস নির্যাতন করেছিল, সেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করেছিলেন জাতির পিতা। ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতা আসে তারা তাদের ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রী বানায়, প্রধানমন্ত্রী বানায়, তাদের ক্ষমতা বসায়।

তিনি আরও বলেন, একদিকে খুনি, আরেকদিকে যুদ্ধাপরাধী, তারাই ক্ষমতায়…। সেই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে ফিরে আসি। তখন দারিদ্র্যে জর্জরিত এ দেশের মানুষ… দুর্ভিক্ষও লেগেছিল। জাতির পিতার যে আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন এ দেশের মানুষকে নিয়ে, সেটিও তখন পূরণ হয়নি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এ দেশে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, কী কী কাজ করা দরকার… একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে কীভাবে তিনি (বঙ্গবন্ধু) গড়ে তুলবেন, সেই ভাষণ তিনি এই জায়গায় দিয়েছিলেন। এই ভাষণ যখন শুনি… আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। দীর্ঘ নয় মাস কারাগারে বন্দি, সেই জেল, যেখানে শীতের সময় বরফ, গরমের সময় গরম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে কীভাবে রেখেছিল তারা, সঠিকভাবে খাবারও দিত না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, কোনো কিছুই ছিল না। তার বিরুদ্ধে মামলা এবং ফাঁসির হুকুম…, সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে, লন্ডন থেকে বাংলাদেশের মাটিতে যখন নামেন… তিনি ছুটে এসেছিলেন বাংলার জনগণের সামনে।

যারা এবারের ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার অবাক লাগে সামরিক একনায়করা যখন ভোট কারচুরি করে ক্ষমতায় আসে, সেই নির্বাচন নিয়ে কেউ কথা বলতো না। যখন নির্বাচন মানে ছিল ১০টা হোন্ডা ২০টা গোণ্ডা নির্বাচন ঠান্ডা। আমরা যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি তখনই আমাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার দুঃখ লাগে, যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর মেলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতা দখল করে তখন তারা (গণতন্ত্র নিয়ে সোচ্চার ব্যক্তিরা) কিছু বলেনি। কিন্তু যখন দেশের গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখে নির্বাচন করা হয়েছে তা নিয়ে কথা বলে। কিছু মানুষ চায় অনির্বাচিত সরকার আসুক। আমার বাবা-মাকে যখন হত্যা করা হয় তখন বিচার চাওয়া অধিকারটুকুও ছিল না।
বিএনপি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে লিফলেট বিতরণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে আরেকটি দল তখন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে। তবে সেই চেষ্টায় বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, তাদের আর রাজনৈতিক কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

বিএনপিকে দেশবাসী ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করেছিল, আর গ্রহণ করেনি বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশে যে অগ্রযাত্রা সেই অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়তে এ সময় পুনরায় অঙ্গীকার করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষের শক্তিই সবথেকে বড় শক্তি, সেটা আরেকবার প্রমাণ হয়েছে।

তিনি বলেন, এই মিটিং থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে যাব, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমার চিঠি হস্তান্তর করব। এরপর আমরা সরকার গঠন করব।