নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ৭ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এবারের নির্বাচন দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি)টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়ায় গণভবনে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেই অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই একটা সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যে হতে পারে আমরা তা প্রমাণ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের পর এবারের নির্বাচন সবচেয়ে সুশৃঙ্খল, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো দলের থাকা না থাকায় গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে না। যারা নির্বাচন নিয়ে খেলতে চেয়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়েছে, দু-চারটা দল নির্বাচনে না এলে কিছু হয় না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কোনো মাস্টার নেই, জনগণই আমাদের মাস্টার। জনগণই আমাদের শক্তি। নির্বাচনে অনেকে জিতেছেন, অনেকে হেরেছেন। খেলাতেও হারজিত থাকে। নির্বাচনেও থাকে। এখন এসব ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।’
বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় কিছু যায়-আসেনি। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তাদের নেতা-কর্মীরা এখন হতাশায় ভুগছে।
সরকারপ্রধান বলেন, নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য বিএনপি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল। মুরুব্বিদের পরামর্শে চললে বাংলাদেশের আর চলা লাগবে না। এটাই হলো বাস্তবতা। যদি সৎ পরামর্শ হয়, সেটা ভালো কথা। নির্বাচন হতে দেবে না, এসব হুমকি-ধামকি গেল কোথায়?
তিনি বলেন, বিএনপি এবার নির্বাচন হতেই দেবে না। তাদের লক্ষ্য ছিল নির্বাচন হতে দেবে না। তাদের কিছু মুরুব্বি আছে তারাও সেই পরামর্শ দেয়। এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যাতে নির্বাচন না হয় কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে তারা চিনে নাই। ’৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এ দেশের মানুষ এটাই প্রমাণ করেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘কেউ দাবায় রাখতে পারবা না’। ৭ জানুয়ারি আবারও মানুষ প্রমাণ করেছে ‘কেউ দাবায় রাখতে পারবে না’। একটা দল নির্বাচনে আসেনি, তার সমর্থিতরাও আসেনি। নির্বাচনের বানচালের অনেক চেষ্টা করেছে। মানুষ হত্যা, ট্রেনে আগুন দেওয়া, ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। ৭৫ সালের পর দেশে যত নির্বাচন হয়েছে, এবারের নির্বাচন সবচেয়ে ভালো হয়েছে। সুশৃঙ্খল, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়েছে। এজন্য সবার আগে আমি দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানাই। জনগণের অংশগ্রহণে ভালো নির্বাচন হয়েছে। দুইটা-চারটা দল না আসলে কিছু যায় আসে না।
এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশ্খৃলা বাহিনী ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তারা রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। জনগণ তাদেরকে সহযোগিতা করেছে। চমৎকার নির্বাচনের উপহার দিয়েছে তারা।বাংলাদেশের ইতিহাসে এই নির্বাচন স্বর্ণাক্ষারে লেখা থাকবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভেবেছিল ক্ষমতায় চলে যাবে, ২০টি সিট পেয়েছি। আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি সিটে জয়ী হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি ওই সময় প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এবারের নির্বাচন হতেই দেবে না। অনেক মুরুব্বি মনে করেছিল নির্বাচন হবে না। ২০১৩ সালের মতো নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেও পারে নি। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন হতাশায় ভুগছেন। মানুষের ক্ষতি করলে পরে মানুষ তাদের প্রত্যাখান করে। ২৮ অক্টোবরের পর পুলিশ মারা, মানুষকে মারার কারণে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। এবার বিএনপি ভয়াল রূপ বেরিয়েছে, আসল রূপ বেরিয়েছে। ফলে মানুষ এ রূপ দেখে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়েছে। এখন সরকার গঠন হবে, সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য শেখ হাসিনা বলেন, যখন চক্রন্ত চলছিল নির্বাচন হবে না। তখন কিন্তু আমরা বিকল্প পথে নির্বাচন ওপেন করে দিয়েছি। স্বতন্ত্ররা নির্বাচন করতে চাইলে তাদেরও উন্মুক্ত করে দিয়েছি। অনেককে মনোনয়ন দিয়েছি, এরমধ্যে কেউ জিততে পারেনি, আশা করেছিলাম জিতবে কিন্তু পারেনি। স্বতন্ত্ররা নির্বাচন করেছে। এবার যেহেতু জনগণ ভোট দিয়েছে। জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। কারো বিরুদ্ধে কোনে ক্ষোভ নেই। এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। জনগণের প্রতি আস্থা রাখতে হবে, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে। নির্বাচন নিয়ে যারা বড় খেলা খেলতে চেয়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং আপনারা একটু গণ্ডগোল করলে তারা এখানে সুযোগ নেবে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এখানে এসেছি। সুতরাং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন। আমি যেন কোন বিশৃঙ্খলা দেখতে না পাই।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান যেমন হত্যাকাণ্ড চালিয়েছ, তেমনি খালেদা জিয়া করেছে। এখন তারেক জিয়া করছে। বিএনপি ১৩, ১৪ সালে মানুষ হত্যা করেছে। গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ হত্যা করেছে। পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি বাড়াতে হবে। দেশের মানুষকে হাত পেতে চলতে হবে না। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞান, শিক্ষায় জাতি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন প্রমাণ করেছে বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখা যায় না। বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন বাঙালি জাতিকে দাবায়ে রাখা যাবে না। এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২০ বছর বয়সী বুড়ো মানুষও ভোট দিতে গেছেন। আমি নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাই। তারা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তাদের নেতাকর্মীরা এখন হতাশ।
সরকারপ্রধান বলেন, আগামীকাল (বুধবার) শপথ নেবেন নির্বাচিতরা। এর সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হবেন। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেবেন। রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলেই সরকার গঠন করা হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়াদুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুখ খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, এবিএম মোজাম্মেল হক, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন প্রমুখ।