নিজস্ব প্রতিবেদক :
এবারের নির্বাচন জীবনের শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছি বলে মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এই শেষ সুযোগ। জাতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ধারাবাহিক সংলাপে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি। সংলাপে তিনি সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য চার নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
সিইসি বলেন, দেশের জন্য কিছু করতে এবারের নির্বাচন জীবনের শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। এবার জাতিকে সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এজন্য সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজন একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা জরুরি, কারণ নির্বাচনে তারাই মূল প্লেয়ার।
সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচন নিয়ে সংলাপ শুরু করেছি। যদিও কিছুটা দেরি হয়েছে, তার কারণ আছে। এর মধ্যে বড় একটি কারণ হলো, সংবিধান সংস্কার কমিশন (কনসেন্স কমিশন) স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনেক আলোচনার ভিত্তিতে একটি সুপারিশমালা তৈরি করেছে। তার অনেক কিছুই আমরা বাস্তবায়ন করেছি।
তিনি বলেন, এখনই রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেনি কমিশন। কারণ, তারা বর্তমানে কনসেন্স কমিশনের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছে। তিনি বলেন, তাদের এখনই ডিস্টার্ব করতে চাইনি। কারণ, ওদিকে যদি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব ব্যস্ত থাকেন, তাহলে আমাদের সংলাপে সময় দিতে পারবেন না। সে চিন্তা থেকেই আমরা পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসব।
সংলাপে নির্বাচন নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা শোনার আগ্রহের কথাও জানান সিইসি। বলেন, আজ আমরা এমন মানুষদের কাছ থেকে শুনতে চাই যারা মাঠে থেকে নির্বাচনের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আমরা জানতে চাই, কীভাবে একটি সুন্দর, জবাবদিহিমূলক, জালিয়াতিমুক্ত নির্বাচন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, যেখান থেকে নির্বাচন ম্যানিপুলেট করার সুযোগ থাকে, সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধ করতে চাই। এর জন্য আপনাদের পরামর্শ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নারী নেত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আজকে আমরা শুনব যারা নির্বাচন নিয়ে সরাসরি কাজ করেছেন তাদের বক্তব্য। আপনারা জানেন নির্বাচনে কোথায় কোথায় কী কী সমস্যা হয়, কোথায় কোথায় কী কী গ্যাপ রয়েছে। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতগুলো বিবেচনা করে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা এবার প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া, সরকারি চাকুরিজীবী ও হাজতিদের জন্যও পোস্টাল ব্যালটে ভোটগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য নির্বাচনের কাজে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়েও নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনার কথা জানান সিইসি নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রবাসীরা ভোট দিতে চান। তারা দেশের জন্য রেমিট্যান্স পাঠান। তাদের জন্য আমরা একটি হাইব্রিড মডেলের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি পোস্টাল ভোটের মতো, তবে নিবন্ধনের অংশে আইটি ব্যবহার করা হবে। এতে প্রবাসীদের পাশাপাশি নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা প্রায় ১০ লাখ কর্মকর্তাকেও ভোটের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
এ সময় কারাগারে থাকা নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।
সিইসি বলেন, আমার এবং ইসির পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি আছে। আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই। এজন্য আমাদের রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, এবং সর্বোপরি দেশের জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।
সভায় উপস্থিত সাবেক ইসি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোথায় কোথায় গ্যাপ থাকে, যেখান দিয়ে নির্বাচনে কারচুপি হয় সেটাও আমাদের জানাবেন, যেন ব্যবস্থা নিতে পারি। কীভাবে কীভাবে জালিয়াতি করা যায়, সে অভিজ্ঞতা আপনাদের আছে, ম্যানিপুলেশন ঠেকানোর জন্য কোথায় কোথায় হাত দেওয়া দরকার সে পরামর্শ দেবেন।
সিইসি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোট দেওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময়। নারী, পুরুষ ভোটারের পার্থক্য ৩০ লাখ ছিল। সেটা কমিয়ে এনেছি। আমরা পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করেছি। একটা মডেল বের করেছি। পারবো কিনা জানি না, আমরা চেষ্টা করবো। আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট, একটা হাইব্রিড পদ্ধতি বের করেছি। এতে প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী, কয়েদিরা ভোট দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, এবিউজ অব এআই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্রান্তিলগ্নে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। আমার বয়স ৭৩ বছর। আমার আর চাওয়ার কিছু নেই। আমার জীবনে এটা শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছি। শেষ সুযোগ দেশের জন্য কিছু করার। একটা সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়াই লক্ষ্য। সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা লাগবে। এজন্য সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন— ইসির সাবেক সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক যুগ্মসচিব খন্দকার মিজানুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক যুগ্মসচিব মো. নূরুজ্জামান তালুকদার, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক উপসচিব মিহির সরওয়ার মোর্শেদ, সাবেক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা (ঢাকা) শাহ আলম, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক যুগ্মসচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী, সাবেক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক উপসচিব মিছবাহ উদ্দিন, সাবেক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মীর মো. শাহজাহান।
																			
										
																নিজস্ব প্রতিবেদক								 




















