Dhaka বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনসিটিবির সামনে শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত অনেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর মতিঝিলের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে মেট্রো স্টেশনের নিচে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব ও দৈনিক বাংলা হয়ে মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের নিচে পৌঁছায়। সেখানে আগে থেকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছিলেন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সদস্যরা। তাঁদের অনেকের হাতেই লাঠিসোঁটা দেখা যায়।

আহতদের মধ্যে দশজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- শ্রেষ্ঠা রূপাইয়া (২৪), ইসাবা শুহরাত (২৫), রেংইয়ং ম্রো (২৭), ফুটন্ত চাকমা, ধনজেত্রা (২৮), অনন্ত ধামায়, ডিবিসির সাংবাদিক জুয়েল মার্ক (৩৫), শৈলী (২৭), দনওয়াই ম্রো (২৪) ও তনিচিরাং (৩০)। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।

এর প্রতিবাদে বেলা ১১টায় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। একই সময়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও কর্মসূচি ঘোষণা দেয়।

এদিকে দুপুর ১টার দিকে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একজন সামনে এগিয়ে এলে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির ব্যানারে থাকা আন্দোলনকারীরাও এগিয়ে যান। পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুপক্ষ।

এসময় সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং পরে তাদের দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। পরে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যদের এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

ঘটনার পর স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি দাবি করেছে, তাদের ওপর হামলা হয়েছে। অন্যদিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা দাবি করেছে, তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।

সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার সংগঠক অলিক বলেন, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এতে ১১ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘আদিবাসী শিক্ষার্থীদের হামলায় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির ১৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমরা এর বিচার চাই।

মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের নিচে খাবার বিক্রয়কারী খায়রুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যপুস্তক ভবন এর সামনে বেশ কিছু আদিবাসী অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এর একটু পরে এক দল শিক্ষার্থী এসে তাদেরকে এখান থেকে হটিয়ে দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল বাশার বলেন, আমি শুনেছি ১৩ থেকে ১৪ জন আহত হয়েছে। আদিবাসী পরিচয়ধারীদের বেশি আহত হয়েছেন। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে এনসিটিবি’র একজনও আহত হয়েছেন। তারা (পাহাড়ি) যদি এসে আমাদের বলতো, তাহলে আমরা তাদের কথাও শুনতাম। আগে একটি পক্ষ এসে আমাদের কাছে তাদের দাবি জানিয়েছে। তারা আসলে তাদের কথাও শুনতাম। অথচ একটি চক্রের ইন্ধনে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে আদিবাসী বিক্ষোভকারীরা চলে গেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত ১০

এনসিটিবির সামনে শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত অনেকেই

প্রকাশের সময় : ০৪:০৭:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর মতিঝিলের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে মেট্রো স্টেশনের নিচে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব ও দৈনিক বাংলা হয়ে মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের নিচে পৌঁছায়। সেখানে আগে থেকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছিলেন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সদস্যরা। তাঁদের অনেকের হাতেই লাঠিসোঁটা দেখা যায়।

আহতদের মধ্যে দশজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- শ্রেষ্ঠা রূপাইয়া (২৪), ইসাবা শুহরাত (২৫), রেংইয়ং ম্রো (২৭), ফুটন্ত চাকমা, ধনজেত্রা (২৮), অনন্ত ধামায়, ডিবিসির সাংবাদিক জুয়েল মার্ক (৩৫), শৈলী (২৭), দনওয়াই ম্রো (২৪) ও তনিচিরাং (৩০)। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল। সেখানে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় লেখা ছিল মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও আদিবাসী; পাশে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ’। গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।

এর প্রতিবাদে বেলা ১১টায় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। একই সময়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ও কর্মসূচি ঘোষণা দেয়।

এদিকে দুপুর ১টার দিকে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একজন সামনে এগিয়ে এলে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির ব্যানারে থাকা আন্দোলনকারীরাও এগিয়ে যান। পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুপক্ষ।

এসময় সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং পরে তাদের দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। পরে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সদস্যদের এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

ঘটনার পর স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি দাবি করেছে, তাদের ওপর হামলা হয়েছে। অন্যদিকে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা দাবি করেছে, তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।

সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার সংগঠক অলিক বলেন, স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এতে ১১ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘আদিবাসী শিক্ষার্থীদের হামলায় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির ১৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমরা এর বিচার চাই।

মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের নিচে খাবার বিক্রয়কারী খায়রুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যপুস্তক ভবন এর সামনে বেশ কিছু আদিবাসী অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এর একটু পরে এক দল শিক্ষার্থী এসে তাদেরকে এখান থেকে হটিয়ে দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিয়াজুল বাশার বলেন, আমি শুনেছি ১৩ থেকে ১৪ জন আহত হয়েছে। আদিবাসী পরিচয়ধারীদের বেশি আহত হয়েছেন। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে এনসিটিবি’র একজনও আহত হয়েছেন। তারা (পাহাড়ি) যদি এসে আমাদের বলতো, তাহলে আমরা তাদের কথাও শুনতাম। আগে একটি পক্ষ এসে আমাদের কাছে তাদের দাবি জানিয়েছে। তারা আসলে তাদের কথাও শুনতাম। অথচ একটি চক্রের ইন্ধনে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়েছে।

জানতে চাইলে মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে আদিবাসী বিক্ষোভকারীরা চলে গেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।