মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুরে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন হালিমা বেগম (৪২) নামে এক গৃহবধূ। স্বজনদের অভিযোগ, কিস্তির টাকা পরিশোধে চাপ দেওয়ায় লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গৃহবধূ হালিমা বেগম। তিনি রাজৈর উপজেলার নরারকান্দি গ্রামের জব্বার মোড়লের স্ত্রী। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ২৯ জানুয়ারি বেসরকারি এনজিও বিজ-এর মাদারীপুরের রাজৈর শাখা থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন হালিমা বেগম। প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ টাকা করে কিস্তি দেওয়ার কথা। গত বুধবার (১৮ অক্টোবর) ২৮নং কিস্তির টাকা চাইতে বাড়িতে যান প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন। টাকা দিতে না পারায় অকথ্য ভাষায় পরিবারের সবাইকে গালিগালাজ করেন তারা।
একপর্যায়ে গোয়ালঘর থেকে গরু বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন মাঠকর্মীরা। বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হন সাইফুলসহ সঙ্গে থাকা লোকজন। পাওনা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে একদিন সময় দেন তারা। তা না হলে বিষ খেয়ে হালিমাকে মরতে বলেন।
প্রতিবেশীদের সামনে এমন অপমান সইতে না পেরে বুধবার রাতেই বিষপান করেন হালিমা। গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে মারা যান হালিমা।
নিহত হালিমা বেগমের মেয়ে সুখি আক্তার বলেন, আমার আম্মু ৬০ হাজার টাকা ঋণ আনছে। প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ টাকা কিস্তি দেয়। বেশিরভাগ কিস্তিই শেষ হয়েছে। আমাদের সঞ্চয়ের অনেক টাকা জমাও আছে। বুধবার কিস্তির টাকার জন্য সাইফুলসহ কয়েকজন আমাদের বাড়িতে আসেন। আম্মু বলছে এই সপ্তাহে টাকা দিতে পারবে না। পরের সপ্তাহে একসঙ্গে দুটি কিস্তি দেবে। কিন্তু কেউ আম্মুর কথা শোনেনি। অকথ্য ভাষায় গালিগালজ করেন। পরে গোয়ালঘর থেকে গরু বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এনজিওর লোকজন। যাওয়ার সময় আম্মুকে বিষ খেয়ে মরে যেতেও বলেন তারা। আম্মু অপমান সইতে না পেরে বিষ খায়। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
তিনি আরও জানান, ৬০ হাজার টাকা ঋণে সুদসহ ৬৭ হাজার ৬২০ টাকা পরিশোধের শেষ তারিখ ছিল ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি। এখন পর্যন্ত ২৭টা কিস্তিতে ৪০ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তবুও তারা আম্মুর সঙ্গে এমন বাজে আচরণ করলো।
স্থানীয় বাসিন্দা জগলুল শেখ বলেন, প্রথমে মিষ্টি কথা বলে ঋণ দেয়। পরে কিস্তির টাকার জন্য চাপ দেয় কর্মকর্তারা। ঘটনার দিন হালিমাকে ওই এনজিওর মাঠকর্মী অনেক বাজে ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। তা না হলে এজিও কর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
তবে এনজিও বিজ’র অভিযুক্ত মাঠকর্মী সাইফুল ইসলাম মুফোঠোনে চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করে বলেন, হয়তো অতিরিক্ত দেনার কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন হালিমা।
রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি। নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।