Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এটিএম আজহার ন্যায়বিচারের অধিকার পেয়েছেন : আখতার হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, এটিএম আজহার সাহেবের মুক্তির মধ্য দিয়ে, একজন ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তার যে অধিকার, সে অধিকার তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন। একজন ব্যক্তি অথবা একজন মানুষ কোনোভাবে রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে বিচারের প্রহসনের মধ্য দিয়ে যেন জীবন দিতে না হয় সে বিষয়ে এ রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। আবার একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকার দায় রয়েছে, সেটা যেন জামায়াত জনগণের মাঝে স্পষ্ট করে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সংস্কার সমন্বয় কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তর: মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে হাসিনা আমলের মতো করে নয়, বরং সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, বিচারব্যবস্থার যে ইউনিভার্সাল কোডগুলো রয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই যেন বিচার সম্পন্ন হয়।

আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আমরা যে নতুন দিনের প্রত্যাশা করি, সেই দিনে কোনো নতুন দল বা গোষ্ঠী যেন মানবতাবিরোধী হয়ে কাউকে গণহত্যাকারী বা প্রতিবাদী হিসেবে না গড়ে তোলে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে যে সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে, অনেকে বলছেন নির্বাচিত সরকার এসে সেই সংস্কার সম্পন্ন করবে। আমরা মনে করি, এই কথার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকের উপর সংস্কারের দায়িত্বভার অর্পণ করে সংস্কারকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার একটি মানসিকতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, সামনের দিনে যে সরকারই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসুক না কেন, যদি কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার পরে আবারও জুলাই সেনাদের ব্যত্যয় ঘটায়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ সেই দলকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি প্রান্তিক সময় অতিক্রম করছে। এই সময় বাংলাদেশের স্বার্থের প্রশ্নে সবাইকে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গনহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পরও বিদেশে চক্রান্তকারী এবং দেশের অভ্যন্তরের আওয়ামী দোসররা নানাভাবে দেশের রাজনীতিকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কোনোভাবেই বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে না। গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের ওপর আমাদের শপথ নিতে হবে— যেভাবে আমরা বাংলাদেশের প্রতিবাদ দমন করেছি, তেমনি আমরা যেন ফ্যাসিবাদী দানবকে থামাতে পারি।

আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নানা আলোচনা হতেই পারে, নানা কথা উঠতেই পারে। কিন্তু সততা, ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণের প্রশ্নে মৌলিক সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই একমত হতে হবে।

এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে। এর মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। আমরা নির্বাচনের পক্ষে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করি। তবে সেই নির্বাচন যেন চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নীত করার পরে অনুষ্ঠিত হয়। যাতে বাংলাদেশে আর কখনো এমন কোনো দুঃশাসনের সময় ফিরে না আসে, যেখানে মানুষের জীবন দিয়ে রাজপথে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আজকের এই দিনে আমরা উপস্থিত হয়েছি। সেই অভ্যুত্থানকে যদি বাস্তবিক অর্থে পূর্ণতা দিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের পুরোনো রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে নতুন রাষ্ট্রকাঠামো গঠন করতে হবে। বর্তমান কাঠামোতে একজন প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যার ফলে তিনি স্বৈরশাসকে পরিণত হওয়ার সুযোগ পান।

আমরা চাই, বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন এমনভাবে পুনর্গঠিত হোক, যাতে স্বৈরতান্ত্রিক ও কুক্ষিগত শাসনের মানসিকতা কোনোভাবে প্রাধান্য না পায়। আইনি কাঠামো ও সংবিধানে যদি প্রকৃত গণতন্ত্রের আবাস থাকে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ থাকে এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় তাহলে যেকোনো শাসকগোষ্ঠী স্বৈরতন্ত্রের পথে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবেন এবং জনগণ তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সক্ষম হবেন। আমরা চাই, বাংলাদেশ এক ব্যক্তির শাসন থেকে মুক্ত হয়ে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে উন্নতি করতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের হতাশা ও আফসোস রয়েছে। যে বিচারালয় নাগরিকদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল, সেই বিচারালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে দলীয় দাসত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিরা বিচারপতির আসনে বসেন। আমরা বলেছি, বিচারালয়ে যেন কেউ দলীয় প্রধানভুক্ত হয়ে নয়, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন—সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে দলীয়ভাবে কুক্ষিগত করার বহু উদাহরণ আমরা অতীতে দেখেছি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

এটিএম আজহার ন্যায়বিচারের অধিকার পেয়েছেন : আখতার হোসেন

প্রকাশের সময় : ০৯:৪৮:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, এটিএম আজহার সাহেবের মুক্তির মধ্য দিয়ে, একজন ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তার যে অধিকার, সে অধিকার তিনি প্রাপ্ত হয়েছেন। একজন ব্যক্তি অথবা একজন মানুষ কোনোভাবে রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে বিচারের প্রহসনের মধ্য দিয়ে যেন জীবন দিতে না হয় সে বিষয়ে এ রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। আবার একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকার দায় রয়েছে, সেটা যেন জামায়াত জনগণের মাঝে স্পষ্ট করে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সংস্কার সমন্বয় কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক রূপান্তর: মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে হাসিনা আমলের মতো করে নয়, বরং সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে, বিচারব্যবস্থার যে ইউনিভার্সাল কোডগুলো রয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই যেন বিচার সম্পন্ন হয়।

আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আমরা যে নতুন দিনের প্রত্যাশা করি, সেই দিনে কোনো নতুন দল বা গোষ্ঠী যেন মানবতাবিরোধী হয়ে কাউকে গণহত্যাকারী বা প্রতিবাদী হিসেবে না গড়ে তোলে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে যে সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে, অনেকে বলছেন নির্বাচিত সরকার এসে সেই সংস্কার সম্পন্ন করবে। আমরা মনে করি, এই কথার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকের উপর সংস্কারের দায়িত্বভার অর্পণ করে সংস্কারকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়ার একটি মানসিকতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, সামনের দিনে যে সরকারই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসুক না কেন, যদি কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার পরে আবারও জুলাই সেনাদের ব্যত্যয় ঘটায়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণ সেই দলকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি প্রান্তিক সময় অতিক্রম করছে। এই সময় বাংলাদেশের স্বার্থের প্রশ্নে সবাইকে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গনহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পরও বিদেশে চক্রান্তকারী এবং দেশের অভ্যন্তরের আওয়ামী দোসররা নানাভাবে দেশের রাজনীতিকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কোনোভাবেই বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ পাবে না। গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের ওপর আমাদের শপথ নিতে হবে— যেভাবে আমরা বাংলাদেশের প্রতিবাদ দমন করেছি, তেমনি আমরা যেন ফ্যাসিবাদী দানবকে থামাতে পারি।

আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নানা আলোচনা হতেই পারে, নানা কথা উঠতেই পারে। কিন্তু সততা, ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণের প্রশ্নে মৌলিক সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই একমত হতে হবে।

এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে। এর মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। আমরা নির্বাচনের পক্ষে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করি। তবে সেই নির্বাচন যেন চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান পর্যায়ে উন্নীত করার পরে অনুষ্ঠিত হয়। যাতে বাংলাদেশে আর কখনো এমন কোনো দুঃশাসনের সময় ফিরে না আসে, যেখানে মানুষের জীবন দিয়ে রাজপথে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আজকের এই দিনে আমরা উপস্থিত হয়েছি। সেই অভ্যুত্থানকে যদি বাস্তবিক অর্থে পূর্ণতা দিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের পুরোনো রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে নতুন রাষ্ট্রকাঠামো গঠন করতে হবে। বর্তমান কাঠামোতে একজন প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যার ফলে তিনি স্বৈরশাসকে পরিণত হওয়ার সুযোগ পান।

আমরা চাই, বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন এমনভাবে পুনর্গঠিত হোক, যাতে স্বৈরতান্ত্রিক ও কুক্ষিগত শাসনের মানসিকতা কোনোভাবে প্রাধান্য না পায়। আইনি কাঠামো ও সংবিধানে যদি প্রকৃত গণতন্ত্রের আবাস থাকে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ থাকে এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় তাহলে যেকোনো শাসকগোষ্ঠী স্বৈরতন্ত্রের পথে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবেন এবং জনগণ তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সক্ষম হবেন। আমরা চাই, বাংলাদেশ এক ব্যক্তির শাসন থেকে মুক্ত হয়ে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে উন্নতি করতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের হতাশা ও আফসোস রয়েছে। যে বিচারালয় নাগরিকদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল, সেই বিচারালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে দলীয় দাসত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিরা বিচারপতির আসনে বসেন। আমরা বলেছি, বিচারালয়ে যেন কেউ দলীয় প্রধানভুক্ত হয়ে নয়, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন—সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে দলীয়ভাবে কুক্ষিগত করার বহু উদাহরণ আমরা অতীতে দেখেছি।