নিজস্ব প্রতিবেদক :
নানা ইস্যুতে নানা মহলে যখন জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি, ঠিক তখনই বোমা ফাটালেন দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বললেন, দেশ, রাজনীতির ও গণতন্ত্রের স্বার্থে এখন জাতীয় পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব বিএনপিকে পালন করতে হবে।
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টক শো’তে অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেন জাপা মহাসচিব।
তিনি বলেন, এখন জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার কথা বলছে অনেকে। যদিও ব্যাপারটা স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা ধন্যবাদ জানাই বিএনপিকে, যে তারা এই ফাঁদে পা দেয়নি। এখন পর্যন্ত দেয়নি। ভবিষ্যতে কী করবে জানি না।
বিএনপির এই ফাঁদে পা না দেওয়া দরকার কেন, তার যুক্তিতে শামীম পাটোয়ারী বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যান আছে, জাতীয় পার্টিও যদি ব্যান হয়ে যায়, তাহলে ভোটের মাথায় কে থাকবে? মূলত তিনটি দল। তখন প্র্যাকটিক্যালি আসনগুলো ভাগ হয়ে যাবে। ২০০ বিএনপি, ৫০ অমুক, ৫০ অমুক।
তিনি সতর্ক করে দেন, বাকি দলগুলো তখন বিএনপিকে বলবে, আমাদের আরও ১০০ আসন না দিলে আমরা ভোটে যাবো না। বিএনপি তখন পাপেট হয়ে যাবে। পলিটিক্যাল পাপেট হতে বাধ্য হবে। সো, গণতন্ত্রের স্বার্থে এখন জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করার দায়িত্ব বিএনপির।
রাজনীতিতে কুলিং পিরিয়ড দরকার উল্লেখ করে শামীম পাটোয়ারী বলেন, বিএনপি সে দায়িত্ব পালন করলে আমি মনে করি দেশের মঙ্গল, বিএনপির মঙ্গল, সবার মঙ্গল। জিয়াউর রহমান এই কাজটা ক্ষমতায় এসে করেছিলেন। সব দলকে রিভাইভ করেছিলেন।
তিনি বলেন, যদি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ ভোটে চলে আসত, তাহলে বিএনপির ওপর ইমিডিয়েটলি দুর্বিষহ নির্যাতন হতো। কারণ তার আগে ২১ আগস্ট ঘটেছে, যে ২১ আগস্ট নিয়ে সংসদে বলা হয়েছে ভেনিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড আনা হয়েছে। কিন্তু দুই বছরের কুলিংয়ের পরে ভোট হয়েছে। আওয়ামী লীগ কিন্তু আটের ভোটের পরেই ইমিডিয়েট বিএনপির ওপর টর্চার করেনি। টর্চার শুরু হয়েছে আরও পরে। এটা কুলিং পিরিয়ড। এই কুলিং পটটা মনে হয় বাংলাদেশে খুবই দরকার।
সেনাপ্রধান ক্ষমতা নিতে চায় না জানিয়ে শামীম পাটোয়ারী বলেন, ‘এখন এখানে প্রবলেম হচ্ছে, আমাদের মাননীয় সেনাপ্রধান যিনি আছেন উনি ক্ষমতা নেওয়ার ব্যাপারে বা ইমারজেন্সির ব্যাপারে ওনার কোনো আগ্রহ নেই। কারণ উনি যদি নিতে চাইতেন, পাঁচ তারিখে নিতে পারতেন। অর্মত্য সেন কিন্তু প্রশংসা করেছে সেনাপ্রধানের যে উনি পাঁচ তারিখে ক্ষমতা নেননি। এখন দেশের স্বার্থে যদি এ রকম হয়, দেশ চলছে না এট দ্য মোমেন্ট, কমপ্লিটলি চলছে না। সরকার ভাবলেশহীন, সরকার দায়িত্বহীন এবং সরকার ফ্লুইড সরকার যে কিছুদিন পরে তো আমরা থাকব না, আমরা আর কী করব! অনেকে বিদেশ থেকেও আসছে সরকারের মধ্যে অ্যাডভাইজার এবং সেখানে রিয়েল কনস্টিটিউশনাল ক্রাইসিস আছে যে বিদেশি নাগরিক ইম্পর্টেন্ট ক্যাবিনেটের দায়িত্বে আছে। এটা কিন্তু ইস্যু আছে।’
পতিত আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই উঠতে শুরু করে বিক্ষিপ্তভাবে। গত শুক্রবার দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জে নুরুল হন নুর মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এসসিপিসহ বেশ কয়েকটি দল জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে।
সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রসঙ্গেও কথা বলেন শামীম পাটোয়ারী। তার মতে, আসিফ মাহমুদ সরকারের সমালোচনা করে সংবিধানের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যাডভাইজার (আসিফ মাহমুদ) যে মন্তব্যটি করলেন যে সরকার দায় এড়াতে পারে না, সরকার তো উনি! উনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা। আমাদের সংবিধানে আর্টিকল ৫৫ সাব আর্টিকল থ্রি-তে বলা আছে— এন্টায়ার কেবিনেট উইল বি রেসপন্সিবল টু পার্লামেন্ট— অর্থাৎ কেবিনেট কালেক্টিভলি কথা বলবে। কেবিনেটের কেউ কখনো কারো সমালোচনা করবে না। কেবিনেট মেম্বার সরকারের সমালোচনা করতে পারে না।
এদিকে দলটিকে কোনো উপায়ে নিষিদ্ধ করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তারই মাঝে জাপার দায়িত্ব বিএনপির কাঁধে দিলেন দলটির মহাসচিব শামীম পাটোয়ারী।