নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিত্যপণ্য, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংস, এমনকি মসলাজাত পণ্যের দামে দীর্ঘদিন ধরেই হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বিভিন্ন সময় নানা পণ্যের দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও বাজার ছুটছে ঊর্ধ্বমুখী। এরই মাঝে নতুন করে লাফিয়ে বেড়েছে টমেটোর দাম। মাছ-মাংসের বাজারও চড়া। এছাড়া উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল, আটা, ডাল ও চিনি।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
শীতকালীন সবজির মধ্যে বাজারে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কমে বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, ধুন্দল ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ২০০ টাকা, কলার হালি ২০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মুলা ৩০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা ও গাজর ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ৮ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৯০০ টাকা, শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুইয়ের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মলা ৬০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ২০০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার টাকা, মেনি মাছ ৭০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং আইড় মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এছাড়া গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্থানভেদে কম-বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে লাল ডিমের ডজন ১৩৫ টাকা, হাঁসের ডিম ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
২৮ চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। পাইজাম চালের কেজি ৫৫ টাকায়, যা আগে বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা। নাজিরশালের কেজি ৬৮ টাকা, যা আগে বিক্রি হত ৬৫ টাকায়। তবে ভালো মানের নাজিরশাল চালের কেজি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়, যা আগে কেজি ছিল ৭০ টাকা। বাজারে চিনির দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে
কারওয়ান বাজারের সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কাসেম বলেন, ১৫ দিন ধরে চিনি পাচ্ছি না। কোনো ডিলার চিনি দিচ্ছে না। মৌলভীবাজার থেকে অল্প কিছু চিনি এনে কোনোমতো কাস্টমার ধরে রেখেছি। অল্প অল্প করে বিক্রি করছি। ১৩৫ থেকে বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
মোটা মসুর ডাল প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায়, দেশি মসুর ডাল ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকা ও ক্যাঙ্গারু ডাল ১৫ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দোকানটিতে দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি, আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকা, দেশি রসুন ২২০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১৯০ টাকা, ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ৮২৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আটার দাম ১০৫ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আকাশ জেনারেল স্টোরের ছাত্তার হোসেন বলেন, ২০-২৫ দিন ধরে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য যেটুকু পাওয়া তারও দাম বেড়ে গেছে। এক কেজি চিনি ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দুই কেজি আটার প্যাকেটে ১৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা মসুর ডাল ১০৫ থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ কেজির পুষ্টি সয়াবিন তেল ৭৮৬ থেকে বেড়ে ৮০০ টাকা হয়েছে। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি জহিরুল ইসলামও একই কথা জানান। কলমিলতা কাঁচাবাজারের মুদি দোকানি মো. মোতাহার হোসেন ফারুক জানান, বাজারটিতে এক কেজির প্যাকেট চিনি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে চিনিতে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। খোলা আটার দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ ও প্যাকেটে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। খোলা ময়দার দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৭০ ও প্যাকেটে ১২ শতাংশ। খোলা সয়াবিন তেলে লিটারে বেড়েছে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ৫ লিটারে বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ।