Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক বছরে এইডসে মারা গেছেন ২৬৬ জন, আক্রান্ত ১২৭৬

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশে গত এক বছরে ১ হাজার ২৭৬ জন নতুন এইডস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এক বছরে। বাংলাদেশে এইডস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এক বছরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৪৭ জন, আর মৃত্যু হয়েছিল ২৩২ জনের।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) মহাখালীতে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে এ বছরের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরে আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৪২ জন রোগী ঢাকায়। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৪৬, রাজশাহীতে ১৭৫, খুলনায় ১৪১, বরিশালে ৭৯, সিলেটে ৬১, ময়মনসিংহে ৪০ এবং রংপুর জেলায় ৩৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক বছরে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৮৫০ জন ও নারী ২৭৮ জন। ৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ গত এক বছরে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন।

এ বছর আক্রান্তদের মধ্যে ১ হাজার ১১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক। বাকি ১৫৮ জন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক। গত বছর সারাদেশে ৯৪৭ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এইডস আক্রান্তদের মধ্যে ২৩২ জন মারা গিয়েছিল।

১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৮৪ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২০৮৬ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ধারণা, বাংলাদেশে এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।

ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশ অনেক রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও এইডস নিয়ন্ত্রণে থমকে আছে। এইডস নির্মূলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় আরও বেশি জোর দিতে হবে। পাশাপাশি রোগটি যেন না ছড়ায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে তাদের (আক্রান্তদের) দূরে সরিয়ে রাখা নয়।
তিনি বলেন, সরকার এইডসের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা-ওষুধসহ সব ধরনের সেবা দিচ্ছে। আমাদের এখানে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসায় রি-ইউজেবল অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়। ওই জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে দেখা যাবে একজন নির্দোষ ব্যক্তি যিনি একটি কলোনস্কপি, এন্ডোস্কপি বা যে কোনো এক একটা পরীক্ষা করাতে এসে আক্রান্ত হয়ে গেলেন।

রোগটি বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, মানুষ এখন এক জায়গায় অবস্থান করছে না। সারাবিশ্বের সঙ্গে অবাধ যাতায়াত করছে। ফলে সংক্রামক রোগও দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে যায়।

মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এর দুটি কারণ হতে পারে। আগে হয়তো অজ্ঞাত রোগ হিসেবে মারা যেত। এখন এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ভালো হওয়ায় রোগী শনাক্ত বেশি হচ্ছে, এইডস আক্রান্তের মৃত্যু এইডস হিসেবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। আরেকটা হতে পারে বাংলাদেশে যারা এইডস আক্রান্ত তাদের বয়স হয়েছে, তাদের অনেকের ন্যাচারাল ডেথ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এইডস আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া পুরুষ সমকামীদের মধ্যেও এই রোগ ছড়াচ্ছে। এ বছর যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ।

ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকার বলেন, নারী যৌনকর্মীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে কম। পুরুষ যৌনকর্মী এবং পুরুষ সমকামীদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণ করে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর এবং আবদুন নূর তুষার উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

এক বছরে এইডসে মারা গেছেন ২৬৬ জন, আক্রান্ত ১২৭৬

প্রকাশের সময় : ০৭:৫২:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাংলাদেশে গত এক বছরে ১ হাজার ২৭৬ জন নতুন এইডস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এক বছরে। বাংলাদেশে এইডস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এক বছরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৪৭ জন, আর মৃত্যু হয়েছিল ২৩২ জনের।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) মহাখালীতে বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে এ বছরের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরে আক্রান্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৪২ জন রোগী ঢাকায়। এছাড়া চট্টগ্রামে ২৪৬, রাজশাহীতে ১৭৫, খুলনায় ১৪১, বরিশালে ৭৯, সিলেটে ৬১, ময়মনসিংহে ৪০ এবং রংপুর জেলায় ৩৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক বছরে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৮৫০ জন ও নারী ২৭৮ জন। ৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ গত এক বছরে এইডস আক্রান্ত হয়েছেন।

এ বছর আক্রান্তদের মধ্যে ১ হাজার ১১৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক। বাকি ১৫৮ জন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক। গত বছর সারাদেশে ৯৪৭ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এইডস আক্রান্তদের মধ্যে ২৩২ জন মারা গিয়েছিল।

১৯৮৯ সালে দেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৮৪ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২০৮৬ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ধারণা, বাংলাদেশে এইচআইভি ভাইরাস বহনকারী মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।

ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশ অনেক রোগ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও এইডস নিয়ন্ত্রণে থমকে আছে। এইডস নির্মূলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় আরও বেশি জোর দিতে হবে। পাশাপাশি রোগটি যেন না ছড়ায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে তাদের (আক্রান্তদের) দূরে সরিয়ে রাখা নয়।
তিনি বলেন, সরকার এইডসের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা-ওষুধসহ সব ধরনের সেবা দিচ্ছে। আমাদের এখানে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসায় রি-ইউজেবল অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়। ওই জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে দেখা যাবে একজন নির্দোষ ব্যক্তি যিনি একটি কলোনস্কপি, এন্ডোস্কপি বা যে কোনো এক একটা পরীক্ষা করাতে এসে আক্রান্ত হয়ে গেলেন।

রোগটি বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, মানুষ এখন এক জায়গায় অবস্থান করছে না। সারাবিশ্বের সঙ্গে অবাধ যাতায়াত করছে। ফলে সংক্রামক রোগও দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে যায়।

মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এর দুটি কারণ হতে পারে। আগে হয়তো অজ্ঞাত রোগ হিসেবে মারা যেত। এখন এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ভালো হওয়ায় রোগী শনাক্ত বেশি হচ্ছে, এইডস আক্রান্তের মৃত্যু এইডস হিসেবেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। আরেকটা হতে পারে বাংলাদেশে যারা এইডস আক্রান্ত তাদের বয়স হয়েছে, তাদের অনেকের ন্যাচারাল ডেথ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এইডস আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ যৌনকর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া পুরুষ সমকামীদের মধ্যেও এই রোগ ছড়াচ্ছে। এ বছর যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ।

ডা. মো. মাহফুজুর রহমান সরকার বলেন, নারী যৌনকর্মীদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে কম। পুরুষ যৌনকর্মী এবং পুরুষ সমকামীদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণ করে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর এবং আবদুন নূর তুষার উপস্থিত ছিলেন।