Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক নজরে রানি এলিজাবেথের জীবন ইতিহাস

  • প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশের সময় : ১১:০০:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১৯০ জন দেখেছেন

দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিটিনের ক্ষমতায় থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই। বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

রানি এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। তার যখন অভিষেক হয়েছিল তখন বয়স ছিল ২৬ বছর। তিনি আবদার করেছিলেন যে, তার অভিষেক অনুষ্ঠানটি যেন সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হয়। রাজপরিবারের এই অনুষ্ঠানটির কিছু কিছু ঐতিহ্য বহু শতকের, ৯০০ বছর আগে থেকে চলছে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানটি যত মানুষ দেখার সুযোগ পেয়েছে, তেমনটি এর আগে কখনো ঘটেনি।

রানির মৃত্যুতে ব্রিটেনে যা কিছু বদলাবে

বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে থেকে সেদিনের উৎসবমুখর লন্ডনের পরিবেশ বর্ণনা করছিলেন টেলিভিশন ধারাভাষ্যকার। শুধু প্রাসাদের সামনে নয়, যে পথ ধরে রানি যাবেন, তার দুপাশেই ছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়। সেই পথের নানা জায়গায় মোতায়েন ছিলেন আরও কয়েকজন ধারাভাষ্যকার। সাত ঘণ্টা ধরে সেদিনের অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়েছিল টেলিভিশনে।

রানির শোভাযাত্রা দেখতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুপাশে লাইনে দাঁড়িয়ে। অনেকে রাতে বৃষ্টির মধ্যে সেখানেই ঘুমিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে মাত্র আট বছর আগে, যুদ্ধের পর ধুসর লন্ডন নগরী সেই প্রথম যেন কোনো উৎসবের জন্য নানা রঙে সেজে উঠেছে।

সোনায় মোড়ানো যে শকটে করে রানি যাবেন, সেটির অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আছে মানুষ। অ্যাডমিরালটি আর্চের নীচ দিয়ে যখন রানির শকট এগিয়ে আসলো, হর্ষ-ধ্বনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানালো মানুষ।

অবশেষে রানি গাড়ি থেকে নামলেন ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবিতে ঢোকার জন্য। আড়াইশো জনের বিশাল এক শোভাযাত্রা শুরু হলো ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবির দিকে। রানির পাশে ডিউক অব এডিনবারা। ভেতরে তখন সারা বিশ্ব থেকে আসা ৮ হাজার অতিথি। রানি যখন শপথ নিচ্ছিলেন, তা দেখছিলেন লেডি অ্যান এবং লেডি জেন। তারপর আসলো অভিষেক অনুষ্ঠানের সেই মূহুর্তটি, যেটি টেলিভিশন ক্যামেরায় দেখানো নিষেধ। রানিকে এখন পবিত্র তেল মাখিয়ে অভিষিক্ত করা হবে।

মারা গেলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

রানির পরনের যে পোশাক সেটি এরপর খুলে ফেলা হয়। খুলে নেয়া হয় সব অলংকার। তাকে পরানো হয় একেবারেই একটি সাদা রঙের সাদামাটা পোশাক।

রানি এলিজাবেথ প্রিন্স ফিলিপকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করতেন। তাদের দেখা হয়েছিল বিয়ের অনেক আগেই।

প্রিন্স ফিলিপ তখন ১৮ বছরের সুদর্শন চনমনে নেভাল ক্যাডেট। বাবা-মার সাথে ঐ কলেজ সফরে গিয়ে ১৩ বছরের রাজকুমারী এলিজাবেথের নজর কাড়েন তিনি। কৈশোরের সেই আকর্ষণ ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। দুজন দুজনকে চিঠি লিখতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হঠাৎ মাঝেমধ্যে দেখাও হতো দুজনের।

প্রিন্স ফিলিপ যখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তরুণী রাজকুমারী তার ঘরে প্রিন্স ফিলিপের একটি ছবি রেখেছিলেন।

গ্রিস এবং ডেনমার্কের এই রাজকুমারের ছেলেবেলা ছিল অনেকটা যাযাবরের মত। তার জন্ম গ্রিসের রাজপরিবারে, কিন্তু নির্বাসিত হওয়ায় ইউরোপের এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরতে হয়েছে তাকে। এ কারণে অল্প বয়স থেকে তিনি ছিলেন অনেক স্বাবলম্বী এবং শক্ত মনের। রাজকুমার হলেও রাজপ্রসাদের ছায়া তার ওপর ছিল না।

রাজকুমারী এলিজাবেথ ছিলেন তার বিপরীত। তার জন্ম এবং বড় হওয়া ছিল রাজপ্রাসাদের সুরক্ষিত বেষ্টনীর ভেতর। বাইরের জীবনের বাস্তবতার সাথে তার পরিচয় ছিল খুব সামান্য। চুপচাপ লাজুক স্বভাবের ছিলেন তিনি। যে কোনো বিষয় নিয়ে অনেক ভাবতেন। ফলে ভিন্ন প্রকৃতির হলেও তারা দুজন এক অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন।

রাজকুমারীর যখন বিশ বছর, প্রিন্স ফিলিপ বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার এক বছর পর ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথের ২১তম জন্মদিনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাগদানের কথা প্রকাশ করা হয়।

প্রিন্স ফিলিপ, তার মা গ্রিসের রাজকুমারী এলিসের মাথার টিয়ারা থেকে নেয়া হীরার টুকরো দিয়ে নিজে বাগদানের আংটির নকশা করে দিয়েছিলেন।

বিয়ের আগে তিনি এলিজাবেথের মায়ের কাছে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, এলিজাবেথের প্রতি ”শতভাগ দ্বিধাহীন প্রেমে নিমজ্জিত তিনি।” সূত্র: বিবিসি বাংলা

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

এক নজরে রানি এলিজাবেথের জীবন ইতিহাস

প্রকাশের সময় : ১১:০০:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

দীর্ঘ সময় ধরে ব্রিটিনের ক্ষমতায় থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ আর নেই। বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

রানি এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। তার যখন অভিষেক হয়েছিল তখন বয়স ছিল ২৬ বছর। তিনি আবদার করেছিলেন যে, তার অভিষেক অনুষ্ঠানটি যেন সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হয়। রাজপরিবারের এই অনুষ্ঠানটির কিছু কিছু ঐতিহ্য বহু শতকের, ৯০০ বছর আগে থেকে চলছে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানটি যত মানুষ দেখার সুযোগ পেয়েছে, তেমনটি এর আগে কখনো ঘটেনি।

রানির মৃত্যুতে ব্রিটেনে যা কিছু বদলাবে

বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে থেকে সেদিনের উৎসবমুখর লন্ডনের পরিবেশ বর্ণনা করছিলেন টেলিভিশন ধারাভাষ্যকার। শুধু প্রাসাদের সামনে নয়, যে পথ ধরে রানি যাবেন, তার দুপাশেই ছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়। সেই পথের নানা জায়গায় মোতায়েন ছিলেন আরও কয়েকজন ধারাভাষ্যকার। সাত ঘণ্টা ধরে সেদিনের অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়েছিল টেলিভিশনে।

রানির শোভাযাত্রা দেখতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুপাশে লাইনে দাঁড়িয়ে। অনেকে রাতে বৃষ্টির মধ্যে সেখানেই ঘুমিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে মাত্র আট বছর আগে, যুদ্ধের পর ধুসর লন্ডন নগরী সেই প্রথম যেন কোনো উৎসবের জন্য নানা রঙে সেজে উঠেছে।

সোনায় মোড়ানো যে শকটে করে রানি যাবেন, সেটির অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আছে মানুষ। অ্যাডমিরালটি আর্চের নীচ দিয়ে যখন রানির শকট এগিয়ে আসলো, হর্ষ-ধ্বনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানালো মানুষ।

অবশেষে রানি গাড়ি থেকে নামলেন ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবিতে ঢোকার জন্য। আড়াইশো জনের বিশাল এক শোভাযাত্রা শুরু হলো ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবির দিকে। রানির পাশে ডিউক অব এডিনবারা। ভেতরে তখন সারা বিশ্ব থেকে আসা ৮ হাজার অতিথি। রানি যখন শপথ নিচ্ছিলেন, তা দেখছিলেন লেডি অ্যান এবং লেডি জেন। তারপর আসলো অভিষেক অনুষ্ঠানের সেই মূহুর্তটি, যেটি টেলিভিশন ক্যামেরায় দেখানো নিষেধ। রানিকে এখন পবিত্র তেল মাখিয়ে অভিষিক্ত করা হবে।

মারা গেলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

রানির পরনের যে পোশাক সেটি এরপর খুলে ফেলা হয়। খুলে নেয়া হয় সব অলংকার। তাকে পরানো হয় একেবারেই একটি সাদা রঙের সাদামাটা পোশাক।

রানি এলিজাবেথ প্রিন্স ফিলিপকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করতেন। তাদের দেখা হয়েছিল বিয়ের অনেক আগেই।

প্রিন্স ফিলিপ তখন ১৮ বছরের সুদর্শন চনমনে নেভাল ক্যাডেট। বাবা-মার সাথে ঐ কলেজ সফরে গিয়ে ১৩ বছরের রাজকুমারী এলিজাবেথের নজর কাড়েন তিনি। কৈশোরের সেই আকর্ষণ ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। দুজন দুজনকে চিঠি লিখতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হঠাৎ মাঝেমধ্যে দেখাও হতো দুজনের।

প্রিন্স ফিলিপ যখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তরুণী রাজকুমারী তার ঘরে প্রিন্স ফিলিপের একটি ছবি রেখেছিলেন।

গ্রিস এবং ডেনমার্কের এই রাজকুমারের ছেলেবেলা ছিল অনেকটা যাযাবরের মত। তার জন্ম গ্রিসের রাজপরিবারে, কিন্তু নির্বাসিত হওয়ায় ইউরোপের এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরতে হয়েছে তাকে। এ কারণে অল্প বয়স থেকে তিনি ছিলেন অনেক স্বাবলম্বী এবং শক্ত মনের। রাজকুমার হলেও রাজপ্রসাদের ছায়া তার ওপর ছিল না।

রাজকুমারী এলিজাবেথ ছিলেন তার বিপরীত। তার জন্ম এবং বড় হওয়া ছিল রাজপ্রাসাদের সুরক্ষিত বেষ্টনীর ভেতর। বাইরের জীবনের বাস্তবতার সাথে তার পরিচয় ছিল খুব সামান্য। চুপচাপ লাজুক স্বভাবের ছিলেন তিনি। যে কোনো বিষয় নিয়ে অনেক ভাবতেন। ফলে ভিন্ন প্রকৃতির হলেও তারা দুজন এক অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন।

রাজকুমারীর যখন বিশ বছর, প্রিন্স ফিলিপ বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার এক বছর পর ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথের ২১তম জন্মদিনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাগদানের কথা প্রকাশ করা হয়।

প্রিন্স ফিলিপ, তার মা গ্রিসের রাজকুমারী এলিসের মাথার টিয়ারা থেকে নেয়া হীরার টুকরো দিয়ে নিজে বাগদানের আংটির নকশা করে দিয়েছিলেন।

বিয়ের আগে তিনি এলিজাবেথের মায়ের কাছে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, এলিজাবেথের প্রতি ”শতভাগ দ্বিধাহীন প্রেমে নিমজ্জিত তিনি।” সূত্র: বিবিসি বাংলা