নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এক এগারোর মতো বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত এখনও চলছে। কাউকে বিতাড়িত করে নয়, রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করতে হয়। রাজনীতিকে আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়ার কালচার চলছে। মূল ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে অন্য ইস্যু দিয়ে সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। রাজনীতির বাইরে থেকে আসা সংস্কার প্রস্তাব কাল্পনিক।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের পরিচিত সভায় অন্তর্র্বতী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি এই কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন বর্তমানে প্রধান ইস্যু। এ ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে অন্য ইস্যুতে মনোযোগ দিলে কোন দাবিই পূরণ হবে না।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব। সংস্কারের জন্য মাসের পর মাস সময় নেয়া ঠিক হবে না। যদি মনে করেন কয়েকজন ছাত্র মিলে আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়েছেন তাহলে ভুল করবেন; হোঁচট খাবেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সব শ্রেণিপেশার মানুষের দীর্ঘ বছরের আন্দোলনের চূড়ান্ত ফল।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা যখন যুগপৎ আন্দোলন করেছিলাম তখন সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সেটাকে আরও পরিমার্জিত করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছি। আপনারা সেই ৩১ দফা নেন।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৭ দফা রাষ্ট্র কর্মসূচি জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। সেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে কমপক্ষে ৪০টি দল একমত হয়ে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলাম। সেখানে যদি কিছু পরিমার্জিত করা লাগে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, রাজনীতির বাইরে যে সংস্কার আসে, সেটা কল্পনার সংস্কার। সেই সংস্কার বাস্তবতার সাথে অনেক অমিল থাকে। এই কারণে রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিবিদরা সমাধান করেন।
রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিবিদরা সমাধান করে জানিয়ে গয়েশ্বর রায় বলেন, যেহেতু আমরা সবাই একমত হয়েছি একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করব। আমরা যে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি সেগুলো আপনারা দেখেন। আপনারা যারা দায়িত্ব পেয়েছেন একসাথে বসে দেখেন কোন শব্দটা ভুল, কোন বানানটা ভুল। তারপর জাতির সামনে সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, একটা দল নিষিদ্ধ হয়েছে তাদের তো গ্রেফতার হচ্ছে না। সবাই তো আরাম আয়েশে ঘোরাফেরা করছে। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পরে জাহাঙ্গীর কবির নানক ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দিয়েছেন এই বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার কতটুকু যোক্তিক?
নির্বাচনের জন্য আরও ১৫ বছর অপেক্ষা করার সময় জনগণের নেই জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনাদের সবকিছুতেই আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলবো, তার একটা সময়সীমা থাকবে, ধৈয্যের একটা সময়সীমা আছে। দ্রুত নির্বাচনের রুপরেখা তৈরি করুন, পরে বাকি কাজ।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটি শক্তিশালী ফোরাম প্রয়োজন। এই ফোরাম কোনো দলীয় ফোরাম নয়। এটি স্বতন্ত্র একটি নারী ও শিশু সংগঠন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন খালেদা জিয়া। নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগছে, কিন্তু চূড়ান্ত বিজয়ে তিনি জয়ী লাভ করছেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার বছরের পর লাখ লাখ কোটি টাকা বাজেট দিয়ে ১৫ বছরে মাত্র ১৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে। এই টাকা দেশে আনা প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদের মাথায় মুকুট দিয়েছি। সেটা খুলতে চাই না, আপনাদের সম্মান দিতে চাই। কিন্তু আপনারা এটা ভাববেন না কয়েকজন ছাত্র আপনাদের সরকারকে বসিয়েছে।
পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, দলটির যুগ্ম সম্পাদক এ্যাড আব্দুস সালাম আজাদ, দলটির সেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরফত আলূ সপু, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী।