বিনোদন ডেস্ক :
‘একা একা খেতে চাও দরজা বন্ধ করে খাও’— দরজা বন্ধ করে পটেটোর প্যাকেট হাতে সংলাপটি বলে এক কিশোর। নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় একটি বিজ্ঞাপনের দৃশ্য এটি। যা ওই সময়ে মানুষের মুখে মুখে ফেরে। বিজ্ঞাপনটির মডেল মো. সাদ হোসেন মারা গেছেন।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাদ হোসেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আরিফ আকতার শাকিব নামে এক যুবক। তিনি সম্পর্কে সাদের শ্যালক।
এতে তিনি লিখেন, আমার ভগ্নিপতি মো. সাদ হোসেন আর নেই। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত নসিব করেন।
কয়েক বছর আগে গুজব ছড়িয়েছিল, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাদ। এবার আর গুজব নয়, সত্যি সত্যিই মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কামরুজ্জামান অনি। সাদ তার বোনের জামাই।
কামরুজ্জামান অনি বলেন, সাদ আমার বয়সী ছিল। তার বয়স হয়েছিল ৩৯ বছরের মতো। কয়েক বছর আগে তার লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। পুরো নষ্ট হয়ে যায়। এটা নিয়েই অসুস্থ ছিল। দুই বছর আগে অপারেশন করা হয়। তার পর থেকে মোটামুটি ভালোই ছিল। মাঝেমধ্যে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতো। এর মধ্যে হঠাৎ করে তিন দিন আগে সাদ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে ছিল, শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
অপারেশনের পর চিকিৎসকদের দেখাতে হতো। পরে চিকিৎসায় ভালো হলে পরিবারের লোকেরা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। হয়তো একসঙ্গে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারবেন। সেভাবেই হাসিখুশি থাকতেন সাদ। কামরুজ্জামান বলেন, ‘এমন কিছু হবে কেউ বুঝতে পারিনি। তিন দিন আগে সে নিজেই হেঁটে হাসপাতালে গিয়েছে। তখন প্রাথমিক চিকিৎসা দরকার ছিল। পরে হঠাৎ করেই হাসপাতালে বমি করে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে কোমায় রাখা হয়। স্ত্রী-ছেলে কারও সঙ্গেই শেষবারের মতো কথা বলে যেতে পারেনি।’ কথাগুলো বলে কাঁদছিলেন কামরুজ্জামান।
সাদ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তাঁর স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। সেখানে সাদের ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসা নিজেই দেখাশোনা করতেন।
সাদ ছিলেন মা–বাবার এক ছেলে সন্তান। সেই ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা রুবি হোসাইন ও বাবা মোশারফ হোসাইন। কামরুজ্জামান বলেন, ‘সাদের মা-বাবা চেষ্টা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। তাঁদের একমাত্র ছেলে, যে কারণে তাঁরা একদম ভেঙে পড়েছেন। কোনো কথা বলতে পারছেন না। আপনারা সাদের আত্মার জন্য দোয়া করবেন। তার মা-বাবা যেন এই শোক সহ্য করতে পারেন, সেই শক্তির জন্য দোয়া করবেন।
আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার দিকে জ্যামাইকা মসজিদে সাদের জানাজা হবে। পরে নিউ ইয়র্কের একটি কবরে তাকে সমাহিত করা হবে।
রুবি হোসাইন ও মোশারফ হোসাইন দম্পতির ছেলে সাদ। তাদের আরেকটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সাদ বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। মা–বাবার সঙ্গে থাকতেন সেগুনবাগিচার বাসায়। ২০১২ সালে বিয়ে করেন সাদ। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। দেশে তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যবসা ছিল। বিদেশে গিয়েও ব্যবসার সঙ্গে জড়ান। ব্যস্ত সময় পার করতেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৭ সালে দেশে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি নিউইয়র্কে স্ত্রী–সন্তানসহ থাকতেন। তাঁর জায়ান নামে পাঁচ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে।